গীতা জয়ন্তী আজ ৮ ডিসেম্বর রবিবার ২০১৯
এই তিথিতেই পরম পুরুষোত্তম ভগবান শ্রীকৃষ্ণ পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা বীর অর্জুনকে ৫১৫৪ (৩১৩৮ খ্রিস্টপূর্ব) বছর আগে অগ্রহায়ণ মাসের শুক্লা একাদশী (মোক্ষদা একাদশী) তিথিতে কুরুক্ষেত্রের রণাঙ্গনে ভগবদ্গীতার জ্ঞান দান করেছিলেন । তাই এই মহিমামণ্ডিত তিথিকে গীতা জয়ন্তী তিথি বলা হয়।
গীতা সম্পর্কিত কিছু জ্ঞানঃ
১। গীতা হচ্ছে সমস্ত শাস্ত্রের সারতিসার।
২। মহাভারতের ভীষ্মপর্বের (২৫ থেকে ৪২) এই ১৮ টি অধ্যায় হল ভগবদগীতা বা গীতোপনিষদ ।
৩। গীতায় রয়েছে ৭০০ শ্লোক। তার মধ্যে ধৃতরাষ্ট্র বলেন ১টি শ্লোক, সঞ্জয় বলেন ৪০টি শ্লোক, অর্জুন বলেন ৮৫টি শ্লোক, ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেন ৫৭৪টি শ্লোক । আর পুরো গীতায় ৯৫৮০ টি সংস্কৃত শব্দ আছে ।
৪। গীতার ১৮টি অধ্যায়ের মধ্যে প্রথম ৬টি অধ্যায়কে বলে কর্মষটক, মাঝখানের ৬টি অধ্যায়কে বলে ভক্তিষটক, আর বাকি ৬টি অধ্যায়কে বলে জ্ঞানষটক ।
৫। গীতা পড়লে ৫টি জিনিষ সর্ম্পকে জানা যায় – ঈশ্বর, জীব, প্রকৃতি, কাল ও কর্ম ।
৬। যদিও গীতার জ্ঞান ৫০০০ বছর আগে বলেছিল কিন্তু ভগবান চতুর্থ অধ্যায় বলেছেন এই জ্ঞান তিনি এর আগেও বলেছেন, মহাভারতের শান্তিপর্বে (৩৪৮/৫২-৫২) গীতার ইতিহাস উল্লেখ আছে । তার মানে গীতা প্রথমে বলা হয়
১২,০৪,০০,০০০ বছর আগে, মানব সমাজে এই জ্ঞান প্রায় ২০,০০,০০০ বছর ধরে বর্তমান, কিন্তু কালের বিবর্তনে তা হারিয়ে গেলে পুনরায় আবার তা অর্জুনকে দেন ।
আমিই বাসুদেব আখ্যা ব্রহ্ম মূর্তি পরমেশ্বর ভগবান |
৭। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে মাত্র ৪০ মিনিটে এই গীতার জ্ঞান দেন ।
৮। গীতার মাহাত্ম্য অনেকে করে গেছেন, তার মধ্যে শ্রীশঙ্করাচার্য, স্কন্দপুরাণ থেকে শ্রীল ব্যাসদেব, শ্রীবৈষ্ণবীয় তন্ত্রসারে গীতা মাহাত্ম্য আর পদ্মপুরাণে দেবাদিদেব শিব কর্তৃক ১৮টি অধ্যায়ের মাহাত্ম্য বর্ণিত আছে ।
৯। গীতাতে অর্জুনের ২২ টি নাম আর কৃষ্ণের ৪৩টি নামের উল্লেখ করা হয়েছে ।
১০। গীতাতে ‘মাম্’ এবং ‘মামেব’ কথাটি বেশি আছে, ‘যোগ’ শব্দটি আছে ৭৮ বার, ‘যোগী’ আছে ২৮ বার আর ‘যুক্ত’ আছে ৪৯ বার ।
১১। গীতার ২য় অধ্যায়কে বলা হয় গীতার সারাংশ ।
১২। ভগবান যখন বিশ্বরূপ দেখান তখন কাল থেমে যায়।
১৩। গীতায় অর্জুন ১৬টি প্রশ্ন করেন আর কৃষ্ণ তা ৫৭৪টি শ্লোকের মাধ্যমে উত্তর দেন ।
১৪। পুরো গীতার সারমর্ম মাত্র ৪টি শ্লোকে বর্ণনা করা হয়েছে, ১০ম অধ্যায়ের ৮ থেকে ১১ নং শ্লোক-এ।
১৫। গীতায় ৩টি গুণ, ৩টি দুঃখ আর ৪টি আমাদের প্রধান সমস্যার কথা বলেছে ।
১৬। গীতায় সাধুর ২৬টি গুণের কথা বলা হয়েছে আর ৬টি আসুরিক প্রবৃত্তির কথা বলা হয়েছে ।
১৭। নরকের ৩টি দ্বারের কথা বলা হয়েছে (কাম, ক্রোধ ও লোভ)
১৮। গীতা অনুযায়ী, ব্রাহ্মণের ৯টি গুণ, ক্ষত্রিয়ের ৭টি গুণ, বৈশ্যের ৩টি গুণ আর শুদ্রের ১টি গুণ ।
১৯। গীতায় ৩টি কর্মের প্রেরণা আর ৩টি কর্মের আশ্রয়ের কথা বলা আছে ।
২০। গুণ অনুসারে ৩ প্রকারের ত্যাগের কথা বলা হয়েছে ।
২১। ৩ প্রকারের আহার, যজ্ঞ, তপস্যা, শ্রদ্ধা, পূজা ও দানের কথা বলা হয়েছে ।
২২। ২ টি স্বভাবের এবং ৫ টি চেতনার জীবের কথা বলা হয়েছে ।
২৩। ৩ প্রকার জীবের কথা বলা হয়েছে ।
২৪। ৩ প্রকার ক্লেশ বা দুঃখ এবং মানুষের ৬ টি প্রধান শত্রুর কথা বলা হয়েছে।
২৫। জড় দেহের ৬ টি পরিবর্তনের উল্লেখ রয়েছে।
২৬। ব্রহ্ম উপলব্ধির ৫টি স্তরের কথা বলা হয়েছে ।
২৭। ভগবানের প্রিয় ভক্তদের ৩৬ টি গুণের কথা বলা হয়েছে ।
২৮। গীতায় ২৫ জন সৃষ্টের কথা বলা হয়েছে যারা স্থাবর, জঙ্গম ও সমস্ত প্রজাদের সৃষ্টি করেছেন । (কৃষ্ণ → ব্রহ্মা → চতুষ্কুমার, সপ্তমহর্ষি, চতুর্দশ মনু)।
২৯। ৩ প্রকারের জ্ঞান, কর্ম ও কর্তার উল্লেখ রয়েছে।
৩০। ৪ প্রকার সুকৃতিবান ব্যক্তির কথা বলা হয়েছে । আর ৪ প্রকার দুষ্কৃতিবানের কথা বলা হয়েছে ।
৩১। জড়া প্রকৃতির ৮টি উপাদানের কথা বলা হয়েছে ।
৩২। শ্রীমদ্ভগবদগীতায় বর্ণিত শান্তির সূত্রটি হলঃ “ভগবান শ্রীকৃষ্ণ – সমস্ত যজ্ঞ ও তপস্যার ভোক্তা, সমস্ত লোকের মহেশ্বর এবং সমস্ত জীবের হিতাকাঙ্ক্ষী বন্ধু।”
ভগবদ গীতায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণের ছয়টি প্রতিজ্ঞা
প্রথম প্রতিজ্ঞা
শ্রীকৃষ্ণ প্রতিজ্ঞা করেছেন “অতএব, হে অর্জুন, সর্বদা আমাকে স্মরণ করে তোমার স্বভাব বিহিত যুদ্ধ কর। তাহলে আমাতে তোমার মন ও বুদ্ধি অর্পিত হবে এবং নিঃসন্দেহে তুমি আমাকেই লাভ করবে।
(ভগবদগীতা ৮/৭)।
দ্বিতীয় প্রতিজ্ঞা
শ্রীকৃষ্ণ প্রতিজ্ঞা করেছেন “তোমার মনকে আমার ভাবনায় নিযুক্ত করো, আমাকে প্রণাম করো এবং আমার পূজা কর। সম্পূর্ণরূপে আমাকে আশ্রয় করো তুমি অবশ্যই আমাকে লাভ করবে।”
(ভগবদগীতা ৯/৩৪)।
তৃতীয় প্রতিজ্ঞা
শ্রীকৃষ্ণ প্রতিজ্ঞা করেছেন, “যারা নিত্য ভক্তিযোগ দ্বারা প্রীতিপূর্বক আমরা ভজনা করেন, আমি তাদের শুদ্ধজ্ঞানজনিত বুদ্ধিযোগ দান করি। যার দ্বারা তারা আমার কাছে ফিরে আসতে পারে।
(ভগবদগীতা ১০/১০)।
চতুর্থ প্রতিজ্ঞা
শ্রীকৃষ্ণ প্রতিজ্ঞা করেছেন, “হে প্রিয় অর্জুন, যিনি আমার সেবা করেন, আমার প্রতি নিঃস্বার্থ পরায়ণ, আমার ভক্ত, জড়বিষয়ে সম্পূর্ণ আসক্তি রহিত এবং সমস্ত প্রাণীর প্রতি শত্রুভাব রহিত, তিনি অবশ্যই আমার কাছে ফিরে আসেন।
(ভগবদগীতা ১১/৫৫)।
পঞ্চম প্রতিজ্ঞা
শ্রীকৃষ্ণ প্রতিজ্ঞা করেছেন, “অতএব আমাতে তুমি মন সমাহিত করো, আমাতে বুদ্ধি নিবিষ্ট করো। তার ফলে নিশ্চয়ই আমাকে প্রাপ্ত হবে, সে সম্বন্ধে কোন সন্দেহ নেই।
(ভগবদগীতা ১২/৮)।
ষষ্ঠ প্রতিজ্ঞা
শ্রীকৃষ্ণ প্রতিজ্ঞা করেছেন, “তুমি আমাতে মন চিত্তস্থির করো এবং আমার ভক্ত হও। আমার পূজা করো এবং আমাকে নমষ্কার করো। তুমি আমার অত্যন্ত প্রিয়। এইজন্যই আমি সত্যপ্রতিজ্ঞা করছি যে, এভাবে তুমি আমাকে প্রাপ্ত হবে ।”
(ভগবদ্গীতা ১৮/৬৫)।
হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্রের মহিমা অনন্য এবং খুবই শক্তিশালী, কেননা পরমেশ্বর ভগবান শ্রী কৃষ্ণ এবং হরিনাম এক ও অভিন্ন, কোন পার্থক্য নেই
পরম আদরে এবং অনন্য ভক্তি সহকারে জপ করার ফলেই আমরা চিন্ময় আনন্দ অনুভব করতে পারব.
হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।
হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ করুন এবং সুখী হউন।
(সংগ্রহকৃত)