দেওয়ানি প্রতিকার - GOPALCPAUL

Latest

You Can See Some Information From Here

শুভ নববর্ষ ১৪৩১, সাইটে ব্রাউজ করার জন্য আপনাকে অভিনন্দন

02 March 2020

দেওয়ানি প্রতিকার


The Code of Civil Procedure,1908

প্রশ্ন-১
ক) দেওয়ানী আদালত কাকে বলে? দেওয়ানী প্রকৃতির মামলা বলতে কি বুঝ? ”নিষেধ না থাকলে দেওয়ানী আদালত সকল প্রকার দেওয়ানী মামলার বিচার করবে”- আলোচনা কর।  আদালতের আর্থিক এখতিয়ার বলতে কি বুঝ? আদালতের আর্থিক এখতিয়ার বর্ণনা কর/ সহকারী জজ ও যুগ্ন জেলা জজের আর্থিক এখতিয়ার বর্ণনা কর। তোমার মতে বাংলাদেশের দেওয়ানী আদালতগুলোতে দেওয়ানী মোকদ্দমা নিস্পত্তির পথে দেরী হওয়ার কারনগুলি কি কি আলোচনা কর।
দেওয়ানী আদালত:
১৯০৮ সালের দেওয়ানী আইনে দেওয়ানী আদালতের কোন নির্দিষ্ট সংজ্ঞা দেওয়া হয় নাই। তবে দেওয়ানী কার্যবিধি আইনের ৯ ধারায় বলা হয়েছে যে, নিষেধ না থাকলে দেওয়ানী আদালত সকল প্রকার দেওয়ানী মামলার বিচার করবে।
উক্ত ধারার সাথে আমরা মিল রেখে বলতে পারি যে,যে সকল আদালত দেওয়ানী মামলার বিচার করে,তাকে দেওয়ানী আদালত বলে।
দেওয়ানী আদালত মূলত:নাগরিকের শরীর ও সম্পত্তির অধিকার নিয়ে বিচার করে। অর্থাৎ ফৌজদারী আদালত ও সামরিক আদালত ব্যতীত যে সকল আদালত মূলত: নাগরিকের অধিকার সংক্রান্ত মামলার বিচার করে থাকে সেগুলোই হচ্ছে দেওয়ানী আদালত।
শেষ কথা,
যে আদালতে ,কোন বিষয়ে অধিকারের দাবি বা সম্পওি দাবি বা কোন ক্ষতির জন্য যে আদালতে মামলা করা হয় তাকে দেওয়ানি আদালত বলে।
দেওয়ানি প্রকৃতির মামলা:
১৯০৮ সালের দেওয়ানী কার্যবিধির ৯ ধারা অনুযায়ী, বিধি নিষেধ ব্যতীত দেওয়ানী আদালত সকল প্রকার দেওয়ানী প্রকৃতির মামলার বিচার করবেন।
দেওয়ানী প্রকৃতির মামলা বলতে ঐ ধরণের মামলাকে বুঝায় যখন মামলার প্রধান প্রশ্ন নাগরিক অধিকার সংক্রান্ত। অর্থাৎ যেখানে একজন নাগরিকের অধিকার ও দায়িত্বের প্রশ্ন জড়িত থাকে সেখানে এর লংঘনের ক্ষেত্রে দেওয়ানী প্রকৃতির মামলার উদ্ভব হয়।
মামলার বিষয বস্তুর উপর নির্ভর করবে না যে সংশ্লিষ্ট মামলাটি দেওয়ানী প্রকৃতির কিনা। যদি মামলাটি দেওয়ানী প্রকৃতির হয় তবে তা বিচার করার এখতিয়ার দেওয়ানী আদালতের থাকবে। একটি দেওয়ানী প্রকৃতির মামলা কোন আদালতে দায়ের করতে হবে সে সম্পর্কে দ্য কোড অব সিভির প্রসিডিউর, ১৯০৮(ঞযব ঈড়ফব ড়ভ ঈরারষ চৎড়পবফঁৎব,১৯০৮) এর ১৫ থেকে ২০ ধারায় বর্ননা করা হয়েছে। ১৫ ধারা মতে, প্রত্যেক দেওয়ানী মোকদ্দমা এর বিচার করার ক্ষমতা সম্পন্ন সর্বনি¤œ আদালতে দায়ের করতে হবে।
বিভিন্ন আদালতের নজীর থেকে যে সকল মামলাকে দেওয়ানী প্রকৃতির মামলা হিসেবে গণ্য করা হয়েছে তার মধ্যে নি¤œ লিখিতগুলি উল্লেখযোগ্য:
    সরকার বা স্থানীয় স্বায়ত্বশাসিত সংস্থা কর্তৃক বা তার বিরুদ্ধে আনীত মামলা। চাকুরী হতে অপসারনের নির্দেশ বে-আইনি ঘোষনার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মচারী কর্তৃক আনীত মামলা। পূজা বা প্রার্থনার অধিকার, কবর দেবার বা লাশ পোড়াবার অধিকার, ভোট দেবার অধিকার ইত্যাদি সম্পর্কিত মোকদ্দমা।মুসলিম বা হিন্দু বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা। কোন সদস্যকে বে-আইনিভাবে কোন সামাজিক ক্লাবের সদস্য পদ হতে বহিস্কার করার বিরুদ্ধে আনীত মামলা।স্থাবর সম্পত্তি, অস্থাবর সম্পত্তি এমনকি অদৃশ্য সম্পত্তি যেমন- কপিরাইট, ট্রেডমার্ক প্রভৃতি সকল প্রকার সম্পত্তির স্বত্ব বা অধিকার সম্পর্কিত মোকদ্দমা। কোন ব্যক্তি বা কতৃপক্ষ কর্তৃক কোন আইনগত অধিকার বা দাবী লংঘিত হইলে দেওয়ানী মোকদ্দমার মাধ্যমে তা পুনরুদ্ধার করা হয় । একটি দেওয়ানী মোকদ্দমা প্রাথমিকভাবে নিষ্পত্তি হয় ডিক্রীর মাধ্যমে ।

”নিষেধ না থাকলে দেওয়ানী আদালত সকল প্রকার দেওয়ানী মামলার বিচার করবে”- আলোচনা :
দেওয়ানী কার্যবিধির ৯ ধারা অনুযায়ী বিধি নিষেধ ব্যতীত দেওয়ানী আদালত সকল প্রকার দেওয়ানী প্রকৃতির বিচার করবে।
দেওয়ানী প্রকৃতির মামলা বলতে ঐ ধরণের মামলাকে বুঝায় যখন মামলার প্রধান প্রশ্ন নাগরিক অধিকার সংক্রান্ত। নাগরিক অধিকারটি অবশ্য বেশ ব্যাপক ও বিস্তৃত বিষয়। যেখানে একজন নাগরিকের অধিকার ও দায়িত্বের প্রশ্ন জড়িত থাকে সেখানে এর লংঘনের ক্ষেত্রে দেওয়ানী প্রকৃতির মামলার উদ্ভব হয়। নিছক ধর্মীয় রীতি নীতি বা সামাজিকতা কিংবা গোত্র সংক্রান্ত কোন বিষয় যেখানে মুখ্য সেখানে এই ধারা মতে তা দেওয়ানী প্রকৃতির মামলা নয়। কিন্তু এধারার ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে যে, এসকল ক্ষেত্রেও যদি কোন সম্পত্তি বা পদের প্রশ্নটি মুখ্য হয় যা ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান যা সামাজিকতার উপর নির্ভরশীল তবে সেই প্রশ্নটি মীমাংসা করার পূর্ণ এখতিয়ার এ আদালতের আছে, কেননা এগুলিও দেওয়ানী প্রকৃতির। তাই কোন কোন গোত্রের নিজস্ব রীতিনীতি নিয়ে কোন প্রশ্ন উত্থাপিত হলে তা দেওয়ানী প্রকৃতির পর্যায়ে পড়ে না, কেননা এতে কোন অধিকারের প্রশ্ন জড়িত নয়,কিন্তু কোন ব্যক্তিকে তার গোত্র হতে বহিস্কার করা হলে তার আইনত অধিকার ক্ষুন্ন হয় বলে তা দেওয়ানী প্রকৃতির মামলার পর্যায়ে পড়ে। একইভাবে কোন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের কোন পদ হতে কাউকে বহিস্কার করা হলে তা দেওয়ানী প্রকৃতির মামলা হিসেবে গন্য হবে। কিন্তু একজন ধর্মীয় নেতার বিশেষ সুযোগ সুবিধা সংক্রান্ত দাবী দেওয়ানী প্রকৃতির নয় [৪৫ ইড়হর ৫৯] কিংবা কোন গোত্রীয় ভোজসভা বা অনুষ্ঠানে কোন সদস্যকে নিমন্ত্রন না করা হলে তা দেওয়ানী মামলার উদ্ভব ঘটায না।
মামলার বিষয় বস্তুর উপর নির্ভর করবে সংশ্লিষ্ট মামলাটি দেওয়ানী প্রকৃতির কি না মামলার পক্ষগনের মর্যাদার উপর নয়। পক্ষগনের প্রতি যদি দেওয়ানী প্রকৃতির হয় তবে তা বিচার করার এখতিয়ার দেওয়ানী আদালতের থাকবে। কোন আইন দ্বারা সুস্পষ্টভাবে নিসিদ্ধ করা না থাকলে প্রত্যেক দেওয়ানী আদালতের এখতিয়ার অক্ষুন্ন থাকবে। সাধারণ আইন দ্বারা এবং বিধিবদ্ধ আইন দ্বারা সৃষ্ট ও সংরক্ষিত দেওয়ানী প্রকৃতির অধিকারের মধ্যে কোন পার্থক্য এ ধারা স্বীকার করে না।
বিভিন্ন আদালতের সিন্ধান্ত মোতাবেক যেগুলি দেওয়ানী প্রকৃতির মামলা হিসেবে গন্য করা হয়েছে তন্মধ্যে নি¤œলিখিতগুলি উল্লেখযোগ্য:
১) সরকার বা স্থানীয় স্বায়ত্বশাসিত সংস্থা কর্তৃক বা তার বিরুদ্ধে আনীত মামলা [৪০ অওজ (১৯৪০) খধয.৪৫৬]
২) চাকুরী হতে অপসারণের নির্দেশ বে-আইনি ঘোষনার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মচারী কর্তৃক আনীত মামলা [চখউ ১৯৫৫ ঝরহফ. ২০০]
৩) প্রার্থনা করার অধিকার প্রতিষ্ঠিত করার মামলা[৫২ অওজ (১৯৫২) ঝঈ ২৪৫]
৪) মুসলিম বা হিন্দু বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা [৩৯ অওজ (১৯৩৯) ঈধষ. ৩৪০]
৫) কোন সদস্যকে বে-আইনিভাবে কোন সামাজিক ক্লাবের সদস্য পদ হতে বহিস্কার করার বিরুদ্ধে আনীত মামলা
দেওয়ানী প্রকৃতির মামলা নয়[ ৩৯ অওজ (১৯৩৯) ইড়স. ৩৫]
যে সকল মামলা দেওয়ানী প্রকৃতির নয় বলে সিন্ধান্ত গৃহীত হয়েছে তন্মেধ্যে নি¤œলিখিতগুলি উল্লেখযোগ্য:
১) যে মামলার প্রধান বিষয় কোন ধর্মীয় প্রথা বা অনুষ্ঠানের সাথে জড়িত [(১৯৬৯) অষষ.৬৮]
২) কোন পদাধিকার সূত্রে পদমর্যাদার দাবী, যেমন একটি মঠের স্বামী কর্তৃক উৎসবের সময় শহরের প্রধান প্রধান রাস্তায় পালকীতে বহন করার দাবী [১৯৭৮) ২ ইড়স. ৪৭০]
৩) যেখানে সংশ্লিষ্ট সম্পত্তিতে বাদীর কোন স্বত্ব নেই কিন্তু কোন দায়িত্ব পালনের দাবী জানায়। যেমন- ট্রাস্টি কর্তৃক মন্দির পরিচালনার দায়িত্ব পালনের দাবী [১৯ অষষ. ৪২৮]
৪) ধর্মীয় অনুসারীদের দ্বারা সম্মান ও সেবা পাবার দাবী [অওজ ১৯২৯ গধফ.৪৯৩]
৫) কোন সম্পত্তি বা পদের অধিকার ব্যতীত শুধুমাত্র ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান সম্পন্ন করার মামলা দেওয়ানী আদালত গ্রহন করতে পারেন না [অওজ ১৯৬১ ঝঈ ১৭২]
দেওয়ানী আদালত সমূহের এখতিয়ার:
দেওয়ানী আদালতসমূহের প্রাথমিকভাবে তিন ধরনের এখতিয়ার রয়েছে । যথাঃ
১। আর্থিক এখতিয়ার (চবপঁহরধৎু ঔঁৎরংফরপঃরড়হ)।ধারা-৬
২। আঞ্চলিক বা স্থানিক এখতিয়ার (ঞবৎৎরঃড়ৎরধষ ঔঁৎরংফরপঃরড়হ) ।ধারা-১৬
৩। বিষয় বস্তু এখতিয়ার (ঝঁনলবপঃ গধঃঃবৎ ঔঁৎরংফরপঃরড়হ)।ধারা-৯
এছাড়াও দেওয়ানী আদালতসমূহের আরও পাঁচ ধরনের এখতিয়ার রয়েছে । যথাঃ
৪। আদি এখতিয়ার (ঙৎরমরহধষ ঔঁৎরংফরপঃরড়হ)।ধারা:১৫-২০
৫। আপীল এখতিয়ার (অঢ়ঢ়বষষধঃব ঔঁৎরংফরপঃরড়হ)।ধারা:৯৬-১১২ এবং অর্ডার:৪১-৪৫
৬। রিভিশন/পুনরীক্ষণ এখতিয়ার (জবারংরড়হ ঔঁৎরংফরপঃরড়হ  )।ধারা:১১৫
৭। রিভিউ/পুনঃ বিবেচনা এখতিয়ার (জবারবি ঔঁৎরংফরপঃরড়হ) ।ধারা:১১৪ এবং অর্ডার ৪৭
৮।রেফারেন্স (জবভবৎবহপব) ধারা:১১৩
৯। আদালতের সহজাত ক্ষমতা (ওহযবৎবহঃ চড়বিৎ ড়ভ ঈড়ঁৎঃ) ধারা:১৫১
১০। প্রশাসনিক এখতিয়ার (অফসরহরংঃৎধঃরাব ঔঁৎরংফরপঃরড়হ) ।
১) আর্থিক এখতিয়ার:
যেই বিষয় বা সম্পত্তি নিয়ে মামলা, সেই বিষয় বা সম্পত্তির মূল্য অনুসারে আদালতের বিচারের অধিকার নির্ধারিত হয়। বাংলাদেশের দেওয়ানী আদালতে সকল জেলায় কয়েকটি স্তর আছে। সর্বনিম্নে সহকারী জজ, তার উপর সিনিয়র সহকারী জজ, এর উপর যুগ্ন জেলা জজ এবং সবচেয়ে উপরে জেলা জজ। এই আদালতগুলো বিচারের ক্ষমতা টাকার অংক দ্বারা নির্দিষ্ট করা আছে।
সূতরাং নিয়ম হলো-বিচার করার আর্থিক ক্ষমতা সম্পন্ন সর্বনিম্ন আদালতে মামলা দায়ের করতে হবে।
২) আঞ্চলিক এখতিয়ার:
সম্পত্তি যে এলাকার সীমারেখার মধ্যে অবস্থিত, সম্পত্তি বিষয়ক মামলা সেই আদালতে দায়ের করতে হবে। স্থাবর সম্পত্তি পুনরুদ্ধার, বাটোয়ারা, রেহেন পরিশোধ, স্বত্ব নির্ণয় এবং ক্ষতিপূরণ আদায়ের মামলা সাধারণত ঐ সম্পত্তিটি যেখানে অবস্থিত সেখানকার আদালতে করতে হবে। ক্রোকাবদ্ধ বা আটক অস্থাবর সম্পত্তির মামলা একইভাবে যে এলাকার আঞ্চলিক এখতিয়ারের মধ্যে সম্পত্তিটি ক্রোকাবদ্ধ বা আটক অবস্থায় অবস্থিত সেই আদালতে দায়ের করতে হবে। বিভিন্ন আদালতের আঞ্চলিক এখতিয়ারের মধ্যে অবস্থিত স্থাবর সম্পত্তির মামলা উক্ত স্থাবর সম্পত্তির অংশবিশেষ যে আদালতের এলাকায় অবস্থিত সেই আদালতে দায়ের করা যেতে পারে।
৩) বিষয়বস্তুভিত্তিক এখতিয়ার:
অনেক সময় মামলার বিষয়বস্তু অনুযায়ী আদালতের এখতিয়ার নির্ধারিত হয়ে থাকে। যেমন-মামলার বিষয়বস্তুর মূল্য যাই হোক না কেন পরিবার বিষয়ক সব মামলা পারিবারিক আদালতের দায়ের করতে হয়।

আদালতের আর্থিক এখতিয়ার:
প্রত্যেক নালিশি বিষয় বস্তুকে মূল্যায়িত করতে হবে দুটি কারণে। একটি হল কোর্ট ফিস প্রদানের জন্য এবং অপরটি হলো আদালতের দেওয়ানী আর্থিক এখতিয়ার দেখানোর জন্য। এটা একারণে করতে হয় যে, জেলা পর্যায়ে ৫ ধরণের দেওয়ানী আদালত আছে এবং এই সকল আদালতের মধ্যে ঠিক কোন আদালতে একটি মোকদ্দমা দায়ের করতে হবে তার জন্য মামলার তায়দাদ দেখাতে হয়। কেননা সিভিল কোর্ট এ্যাক্ট ,১৯৮৭ এর ১৮ ধারায় বলা হয়েছে যে,দ্য কোর্ড অব সিভিল প্রসিডিউর,১৯০৮ এর ১৫ ধারার বিধান সাপেক্ষে জেলা জজ আদালত এবং যুগ্ন জেলা জজ আদালতের সকল অরিজিনার সিভিল মামলার বিচারের এখতিয়ার থাকবে। একই আইনের ১৯ ধারায় বলা হয়েছে যে, যে কোন অরিজিনাল সিভিল মামলা যার মূল্যমান (তায়দাদ) ২ লাখ টাকার উর্ধ্বে নহে তা বিচার করার ক্ষমতা সহকারি জজ আদালতের থাকবে এবং একই ভাবে যে সিভির মামলার তায়দাদ ৪ লাখ টাকার উর্ধ্বে না উহা বিচারের ক্ষমতা সিনিয়র সহকারী জজ আদালতের থাকবে। সিভিল কোর্ট এ্যাক্ট,১৯৮৭ এর ১৮ ও ১৯ ধারার বিধান পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে,২৫ হাজার টাকার থেকে ১৫ লাখ টাকা মূল্যমানের নালিশি বিষয়বস্তুর বিচারের এখতিয়ার শুধুমাত্র সহকারি জজ আদালতের আর যে নালিশি বিষয বস্তুর মূল্যমান ১৫ লাখ ১ টাকা থেকে ২৫ লাখ টাকা  পর্যন্ত উহা বিচারের এখতিয়ার শুধুমাত্র সিনিয়র সহকারি জজ  আদালতের। উল্লেখ্য ২৫ হাজার টাকা মূল্যমানের নালিশি বিষযবস্তুর বিচারের ক্ষমতা দেওযা হয়েছে গ্রাম আদালত আইন ,২০০৬ অনুযায়ী গ্রাম সরকার আদালত এর উপর।
দেওয়ানী আদালত আইন ১৮৮৭ এর ১৯ ধারা অনুসারেঃ
বাংলাদেশে পাঁচ প্রকারের দেওয়ানী আদালত গুলো হলোঃ
১। জেলা জজ (উরংঃৎরপঃ ঔঁফমব) ।
২। অতিরিক্ত জেলা জজ (অফফরঃরড়হধষ উরংঃৎরপঃ ঔঁফমব) ।
৩। যুগ্ম জেলা জজ (ঔড়রহঃ উরংঃৎরপঃ ঔঁফমব) ।
৪। সিনিয়র সহকারী জজ (ঝবহরড়ৎ অংংরংঃধহঃ ঔঁফমব)।
৫। সহকারী জজ (অংংরংঃধহঃ ঔঁফমব) ।
আদালত সমূহের আর্থিক এখতিয়ার নিম্নরুপঃ
১। জেলা জজ আদালত:প্রত্যেক জেলায় একটি করে জেলা জজ আদালত থাকবে। জেলা জজের আর্থিক এখতিয়ারের সীমা নেই। মূল এখতিয়ার সহ আপীল এখতিয়ারও এই আদালতে প্রয়োগ করতে পারবে। তবে প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনের কারণে মূল এখতিয়ার সম্পন্ন মামলা দায়ের করা হয় না। সাধারণত এই আদালত কোন মোকদ্দমা বিচারের জন্য গ্রহন করতে পারেন না । এই আদালতের আপীল এখতিয়ার ৫,০০,০০০০০ (পাঁচ কোটি) টাকা পর্যন্ত । এই আদালত দায়রা জজের দায়িত্বও পালন করতে পারে যখন সে জেলা জজ।
২। অতিরিক্ত জেলা জজ আদালত:অনেক জেলায় অতিরিক্ত জেলা জজের আদালত থাকতে পারে। এই অতিরিক্ত জেলা জজের আর্থিক এখতিয়ারের সীমা বদ্ধতা নেই। জেলা জজ যে সমস্ত মামলাগুলো অতিরিক্ত জেলা জজ আদালতে স্থানান্তর করবে সেই মামলা অতিরিক্ত জেলা জজ শ্রবন এবং নিস্পত্তি করতে পারবে। এই আদালত কোন আপীল বা মূল মোকদ্দমা বিচারের জন্য সরাসরি গ্রহন করতে পারেন না। জেলা জজ আদালতে দাখিলকৃত দরখাস্ত নিষ্পত্তির জন্য এই আদালতে প্রেরন করা হয় । জেলা জজ যে ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবে অতিরিক্ত জেলা জজ সেই ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবে।
৩।যুগ্ম জেলা জজ আদালত: এ আদালত ২৫,০০,০০০(পঁচিশ লক্ষ ) টাকার অধিক যে কোন মুল্যমানের বিষয়বস্তর মূল মোকদ্দমা বিচার ও নিষ্পত্তি করতে পারেন । সহকারী জজ আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে জেলা জজ আদালতে কোন আপীল করা হলে জেলা জজ উক্ত আপীল শুনানীর জন্য যুগ্ন জেলা জজ আদালতে বদলী করতে পারে। যুগ্ন জেলা জজ আদালত উক্ত আপীল শ্রবণ এবং নিস্পত্তি করতে পারে। যুগ্ন জেলা জজ গন সহকারী দায়রা জজের দায়িত্বও পালন করতে পারে।
৪। সিনিয়র সহকারী জজঃ এই আদালত ১৫,০০,০০০(পনের লক্ষ) টাকার অধিক হতে ২৫,০০,০০০(পঁচিশ লক্ষ ) টাকা পর্যন্ত যে কোন মুল্যমানের বিষয়বস্তুর মূল মোকদ্দমা বিচার ও নিষ্পত্তি করতে পারেন । এই আদালত কোন আপীল বা রিভিশন গ্রহন করতে পারেন না।
৫। সহকারী জজ আদালত: একটি জেলায় এক বা একাধিক সহকারী জজ থাকতে পারে। সহকারী জজগন এই আদালতে বিচার কার্য সম্পন্ন করে থাকেন। সহকারী জজ আদালত জেলার সবনিম্ন মূল এখতিয়ার সম্পন্ন দেওয়ানী আদালত। এই আদালত ১৫,০০,০০০(পনের লক্ষ) টাকা পর্যন্ত যে কোন মুল্যমানের বিষয়বস্তুর মূল মোকদ্দমা বিচার ও নিষ্পত্তি করতে পারেন । এই আদালত কোন আপীল বা রিভিশন গ্রহন করতে পারেন না।
স্বল্প এখতিয়ার আদালত:সিনিয়র সহকারী জজ ও যুগ্ন জজ সংক্ষিপ্ত মামলার বিচার করে। আর্থিক এখতিয়ার সর্বোচ্চ ৬০০০০ টাকা। এই মামলার বিরুদ্ধে কোন আপীল করতে পারবে না।
দেওয়ানী কার্যবিধির ১৫ ধারা অনুসারে প্রত্যেকটি মামলা অবশ্যই বিচার করার উপযুক্ত সর্বনিম্ন স্তরের আদালতে দায়ের করতে হবে। জেলা জজ বা অতিরিক্ত জেলা জজ সাধারণত কোন মূল মামলার বিচার করেন না।
আপীল:
সহকারী জজ ও সিনিয়র সহকারী জজের ফবপৎবব বা আদেশের বিরুদ্দে আপীল দায়ের করতে হবে জেলা জজের আদলতে।
যুগ্ম জেলা জজের ফবপৎবব বা ড়ৎফবৎ এর বিরুদ্দে আপীল দায়ের করতে হবে জেলা জজের আদালতে, তবে মুল মামলার আর্থিক অধিক্ষেত্র ৫ কোটি টাকার অধিক হলে আপীল দায়ের করতে হবে হাইকোর্ট বিভাগে।
দেওয়ানী মোকদ্দমা নিস্পত্তিতে দেরি হবার কারণসমূহ:
দেওয়ানী মোকদ্দমা নিম্পত্তিতে যে অস্বাভাবিক দেরি হয় তা যুগ যুগ ধরে মানুষের মনকে পীড়া দিয়ে আসছে এবং অনেকেই তাদের জীবদ্দশায় মোকদ্দমার ফলাফল দেখে যেতে পারে না। এরুপ হতাশা জনক পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য মানুষ সকল সময়ই সোচ্চার হয়েছে কিন্তু এখনো তার সুষ্ঠু সমাধান হয়নি। বাংলাদেশ আইন কমিশন এ বিষয়ে চিন্তাভাবনা করেছেন এবং কতিপয় কারণ চিহ্নিত করেছের । এগুলো নি¤œরুপ:
১) নি¤œ আদালতে মামলার সংখ্যাধিক্য:জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে মামলার সংখ্যাও বেড়ে যাচ্ছে দ্রুতগতিতে,কিন্তু সে অনুপাতে বিচারক বা আদালতের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে না। ভূমি প্রশাসন ভূমি সংক্রান্ত ক্ষুদ্র বিবাদগুলো নিস্পত্তি করলে এগুলো আদালতে আসত না।
২) পদ্ধতিগত আইনের জটিলতা:মামলা বিচারের জন্য গ্রহণের পূর্বে বাদীর আরর্জি পেশের পর আদালতের এখতিয়ার যথার্থ কোর্ট ফি প্রদান করা হয়েছে কিনা, তামাদি আইনে বারিত হয়েছে কিনা তা নিয়ে বাদানুবাদ চলে অনেক দিন। পদ্ধতিগত ক্রটির কারণে এরুপ হয়ে থাকে।
৩) বিশেষায়িত আদালতের অভাব:ক্রম পরিবর্তনশীল সমাজের বিভিন্ন দিকে যে নতুন নতুন সমস্যা দেখা দেয়, যেমন পরিবেশগত সমস্যা, আর্থিক সংগঠনের সমস্যা ইত্যাদি ,তা মোকাবেলার জন্য বিশেষায়িত আদালতের প্রয়োজন। আমাদের দেশে এর অভাব রয়েছে।
৪) বিচারকের দক্ষতা:নি¤œ আদালতে নিয়োগপ্রাপ্ত, বিচারকগণ বয়সে নবীন, আইন ও ঘটনা উপলব্ধি করার মত পরিপক্কতার অভাব রয়েছে এদের অনেকের। সিনিয়র আইন জীবীদের সঙ্গে তর্কযুদ্ধে পেরে উঠেন না দেখে তাদের ইচ্ছা-অনিচ্ছা বা অভিমতের কাছে নতিস্বীকার করেন এ সকল তরুন বিচারকগণ। ফলে আইনজীবীগণের ইচ্ছানুযায়ী মামলাসমূহ বারবার স্থগিত রাখা হয়।
৫) আইনজীবীদের সদিচ্ছার অভাব:একজন আইনজীবী একসাথে একাধিক আদালতে যেতে পারেন না, অথচ প্রায় এক সাথে সকল আদালতের কার্যক্রম শুরু হয। তাই ব্যস্ত আইনজীবীগণ একটি আদালতের কার্যক্রমের অংশ গ্রহন করেন এবং অন্য আদালতের কার্যক্রম স্থগিত রাখার আবেদন জানান। ফলে সহজে এগুলো নিস্পত্তি হয় না।
৬) প্রসেস সার্ভিস:সমনজারি ও অন্যান্য প্রসেস সার্ভিস সহজ না হওয়ায় এগুলো তড়িৎ নিস্পত্তিতে অন্তরায় হয়ে থাকে। এছাড়া প্লিডিং সংশোধন, সংযোজন ইত্যাদি লেগেই থাকে। যার জন্য মূল বিচার হতে দেরি হয়।
৭) সুষ্ঠু তদারকির অভাব:মামলা নিস্পত্তির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ, ব্যর্থতার জন্য জবাবদিহী,দীর্ঘসূত্রিতার কারণসমূহ দূরিভুত করার ব্যবস্থা করা ইত্যাদি বিষয়ে সুষ্ঠুতদারকি হয় না হেতু নিস্পত্তিতে অস্বাভাবিক দেরি হয়ে থাকে।
৮) বিভিন্ন স্তর:একটি দেওয়ানী মামলা রুজুর পর অনেক স্তর পার হতে হয়। এজন্য নিস্পত্তি হতে অনেক সময লেগে যায। স্তরগুলো সংক্ষিপ্ত ও সহজ সরল হওযা বাঞ্জনীয়।
আইনের দীর্ঘ সূত্রীতা:
বিচারকের অপ্রতুলতা:
মক্কেলের উদাসীনতা:
আইনজীবীর গাফিলতি:
পর্যাপ্ত আইনগত শিক্ষার অভাব:
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার অভাব:
আইনের সংস্কার হয়নি:
দেরিতে নোটিশ জারি করা:
আরর্জি ও জবাব লিখতে যথাযথ সতর্ক তার অভাব:
অন্তবর্তীকালীন বিধানের কারণে:
কর্মচারীদের অসাধুতা:
দেওয়ানী কার্যবিধিকে কেন ধারা ,আদেশ ও বিধিতে বিভক্ত করা হয়েছে? এদের মধ্যে কোন পার্থক্য আছে কি?
অধিকারকে সংজ্ঞায়ন করার জন্য ধারা,ধারাকে কার্যকর করার জন্য আদেশ এবং আদেশকে স্বয়ং সম্পূর্ণ করার জন্য বিধি প্রণয়ণ করা হয়েছে।


প্রশ্ন-২ আরর্জি বলতে কি বুঝ? আরজির বিষয়বস্তু কি কি? আরজি ফেরত ও আরজির প্রত্যাখ্যান কি? আরজি ফেরত ও আরজি প্রত্যাখানের পার্থক্য কি? ফলাফল কি? প্রত্যাখানের প্রতিকার কি? আপীলের সময় কি আরর্জি সংশোধন করা যায়?
আরজির সংজ্ঞা:
নালিশের কারন সম্বলিত আদালতে দাখিলকৃত লিখিত বিবৃতি যার ভিত্তিতে যদি কোন প্রতিকার প্রার্থনা করে তাকে আরর্জি বলা হয়। আইনে আরর্জির কোন সংজ্ঞা দেওয়া হয় নাই। আরর্জি হল মামলার ভিত্তি যার উপর প্রতিকার প্রাপ্তি নির্ভর করে। আইনের বিধান অনুসরণ করে আরর্জি তৈরী করতে হয়। এর কোন ব্যত্যয় হলে আদালত আরর্জি গ্রহন নাও করতে পারেন।
মামলার কারণ ও বিবরণ একটি আরজিতে লিপিবদ্ধ করে তা আদালতে দায়ের করে মামলা রুজু করতে হয়। ইহার বিধান রয়েছে অর্ডার-৭,রুল-১১ তে। ইহাতে মোকদ্দমার কারণ উল্লেখ না থাকলে মামলা খারিজ হয়।
ঘটনার সংক্ষিপ্ত বিবরণ উল্লেখপূর্বক প্রতিকার চেয়ে যে দরখাস্তমূলে দেওয়ানী আদালতে মোকদ্দমা রুজু করা হয় তাকে আরর্জি বলে।
আরজির বিষয়বস্তু:
৭ আদেশের ১ বিধি অনুযায়ী নিম্নলিখিত বিষয়গুলি আরজিতে উল্লেখ করতে হবে:
ক) যে আদালতে মামলা দায়ের করা হয়েছে সে আদালতের নাম।
খ) বাদীর নাম ,পরিচয় ও বাসস্থান।
গ) বিবাদীর নাম পরিচয় ও বাসস্থান (যতদূর জানা যায়)।
ঘ) বাদী বা বিবাদী নাবালক অথবা মানসিক বিকারগ্রস্থ হলে সে মর্মে বিবৃতি।
ঙ) যে ঘটনাবলী মামলার কারণ সমূহের সৃষ্টি করে থাকে এবং যখন এগুলো সৃষ্টি হয়ে থাকে।
চ) যে আদালতে মামলা দায়ের হয়েছে সে আদালতের যে এই মামলা বিচারের এখতিয়ার রয়েছে সেই মর্মে বিবৃতি।
ছ) মামলায় বাদীর প্রার্থীত প্রতিকার।
জ) দাবীর কোন অংশ বর্জন করা হলে সেই মর্মে বিবৃতি।
ঝ) ঝঁরঃ ঠধষঁধঃরড়হ অপঃ অনুযায়ী মামলার মূল্য এবং ঈড়ঁৎঃ ভববং অপঃ অনুযায়ী দাবীর মূল্য বিষয়ে বিবৃতি।
ঞ) যদি বাদী প্রতিনিধিত্ব কোন মামলা করে থাকেন সেক্ষেত্রে উক্ত বিষয়ের উপর বাদীর স্বার্থ আছে উক্ত বিষয়ের বর্ণনা এবং বাদী মামলা করতে সক্ষম সেই বিষয়েও একটা বর্ণনা।
ট) যদি মোকদ্দমা কোন অর্থ আদায়ের মোকদ্দমা হয়ে থাকে তবে সেক্ষেত্রে উক্ত অর্থের পরিমান সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে।
ঠ) যদি বাদী কোন সেট অব অনুমোদন করে থাকে বা উহার কোন দাবীর অংশ পরিত্যাগ করে থাকে তাহলে এরুপ অনুমোদিত ও পরিত্যাগকৃত অংশের পরিমান উল্লেখ করতে হবে।
ড) যদি অস্থাবর সম্পত্তি সম্পর্কে মামলা করা হয়ে থাকে তবে তার যথাযথমূল্য বা পরিমান।
ঢ) যদি মোকদ্দমাটি কোন স্থাবর সম্পত্তি সংক্রান্ত হয়ে থাকে তবে সম্পত্তিটি সীমানা নির্ধারণ সম্পর্কিত বিবরণ।
ণ) যদি মোকদ্দমাটি সময় দ্বারা বারিত হয়ে থাকে ,তবে উহা হতে অব্যাহতি পাবার কারণগুলো উল্লেখ করতে হবে।
ত) সত্য পর্বের স্বাক্ষর ও তারিখ সম্বলিত হতে হবে।

আরজির প্রত্যাখ্যান ও আরজি ফেরত :
নালিশের কারণ সম্বলিত আদালতে দাখিলকৃত লিখিত বিবৃতি যার ভিত্তিতে যদি কোন প্রতিকার প্রার্থনা করে তাকে আরর্জি বলা হয়। আইনে আরর্জির কোন সংজ্ঞা দেওয়া হয় নাই। আরর্জি হল মামলার ভিত্তি যার উপর প্রতিকার প্রাপ্তি নির্ভর করে। আইনের বিধান অনুসরণ করে আরর্জি তৈরী করতে হয়। এর কোন ব্যত্যয় হলে আদালত আরজি গ্রহন নাও করতে পারেন। কোড অফ সিভির প্রসিডিউর,১৯০৮ এর প্রথম তফসিলের অর্ডার ৭ এর ১১ বিধিতে উল্লেখিত কারণে আরজি প্রত্যাখানের আদেশ এবং একই অর্ডারের ১০ বিধিতে আরর্জি ফেরতের ক্ষমতা আদালত প্রয়োগ করতে পারেন। আদালত মামলা বিচারার্থে গ্রহন করে সমন জারির পূর্বে মামলাটি তার আঞ্চলিক,আর্থিক এবং বিষয়বস্তুগত এখতিয়ারের মধ্যে দাখিল হয়েছে কিনা তা নিরুপণ পূর্বক যথাযথ আদালতে বিচারার্থে দাখিলের জন্য যদি কোন আদেশ দেয় তাকে আরর্জি ফেরত বলে এবং কোন মামলা দাখিলের পর আদালত কোর্ড অফ সিভির প্রসিডিউর,১৯০৮ এর ১১ বিধি অনুযায়ী পাঁচটি কারণের কোন এক বা একাধিক কারণে যদি মামলা বিচারার্থে গ্রহন না করেন তাকে আরর্জি  প্রত্যাখ্যান বলে।
নিম্নে উভয বিষয়ে আলোচনা করা হলো:

আরর্জি প্রত্যাখান:
আরর্জি প্রত্যাখানের সুনির্দিষ্ট কারণসমূহ কোর্ড অফ সিভির প্রসিডিউর,১৯০৮ এর অর্ডার-৭,রুল-১১ তে বর্ণনা করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে যে,আরর্জি নি¤œলিখিত কারণে প্রত্যাখান করা যাবে:
ক) আরর্জিতে মামলার কারণ উল্লেখ না থাকলে;
খ) আরর্জিতে দাবিকৃত প্রতিকারের মূল্য কম উল্লেখ থাকলে এবং  আদালতের নির্দেশমত বাদী নিদিষ্ট সময়ের মধ্যে তা সংশোধন করতে ব্যর্থ হলে;
গ) আরর্জিতে দাবিকৃত প্রতিকারের মূল্য যথার্থ উল্লেখ করা হয়েছে কিন্তু প্রয়োজন অপেক্ষা কম মূল্যের স্ট্যাম্পে আরজি লেখা হয়েছে এবং আদালতের নির্দেশমত নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় স্ট্যাম্প সরবরাহে বাদী ব্যর্থ হলে;
ঘ) আরর্জির বিবৃতি অনুযায়ী মামলা কোন আইনে নিষিদ্ধ বলে প্রতীয়মান হলে এবং
অর্ডার ৭ রুল ৯(১এ) এর কোন একটি বিধান প্রতিপালিত না হলে এবং আদালত কর্তৃক নির্দের্শিত হওয়ার পরেও দেয় সময়ের মধ্যে যদি বাদী তা প্রতিপালনে ব্যর্থ হয়।(আরর্জি প্রত্যাখানের (ই) নং বিধানটি আমাদের বাংলাদেশ কোর্ডে উল্লেখ নাই বা সাধারণ দেওয়ানী কার্যবিধি বই গুলোতে উল্লেখ নাই কিন্তু ২৫/০৭/১৯২৭ ইং তারিখে ১০৮২৮ -জি নং নোটিফিকেশন দ্বারা কলকাতা হাইকোর্ট অফ সিভির প্রসিডিউর,১৯০৮ এ সংযোজিত করেন)।
তাহলে দেখা যাচ্ছে উপরোক্ত যে কোন একটি কারণে আদালত আরর্জি প্রত্যাখানের আদেশ দিতে পারেন।
নজীর:
সাধু বনাম ধিরেন্দ্র,৫৫ সি ৫৯০ মামলায় ইহা সিন্ধান্ত হয যে, সমন জারির পূর্বে ইহা আদালতের কর্তব্যের মধ্যে পরে যে, আরর্জিতে নালিশের কারণ সঠিকভাবে বর্ণনা করা হয়েছে কিনা বিবাদির বিরুদ্ধে যথাযথ প্রতিকার প্রার্থনা করা হয়েছে কিনা এবং আরর্জি  প্রত্যাখান বা সংশোধনের উহা ফেরত প্রদান উচিত কিনা। ১১ বিধির কারণগুলো আদালতের জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছে মেদিনিপুর জমিদারী কোম্পানী বনাম সেক্রেটারি অফ স্ট্রেট ৪৪ সি ৩৫২ মামলায়। আরর্জি প্রত্যাখানের পূর্বে আদালত আরর্জির বক্তব্য এবং আরর্জির সাথে দাখিলী দলিলাদি বিবেচনায় নিবেন কিন্তু বিবাদীর দাখিলী কোন দরখাস্ত বক্তব্য বা দাখিলী জবাবের কোন দাবীকে আদালত বিবেচনায় নিবেন না।

আরর্জি ফেরত: কোর্ড অফ সিভিল প্রসিডিউর,১৯০৮ এর প্রথম তফসিলের অর্ডার ৭ ,রুল ১০ এ বলা আছে আদালত মামলার যে কোন পর্যায়ে যথাযথ আদালতে দাখিলের জন্য আরজি ফেরত দিতে পারেন এবং ফেরত দেওয়ার সময় মামলা দাখিল এবং ফেরতের তারিখ আরর্জিতে লিখে দাখিলকারী পক্ষের নাম লিখবেন এবং ফেরতের কারণ সংক্ষিপ্তকারে লিখবেন। এভাবে একটি আরর্জি ফেরত দিবেন। এখানে শুধুমাত্র আদালত আরর্জি কখন এবং কিভাবে ফেরত দিবেন তার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু এ কথা বলা হয়নি কোন কোন কারণে আরর্জি ফেরত দেওয়া যাবে। অর্থাৎ এই বিধান দ্বারা আদালতকে আরর্জি ফেরতের ক্ষমতাবান করা হয়েছে কিন্তু বলা হয়নি ঠিক কোন অবস্থায় আদালত এই ক্ষমতার প্রযোগ করবেন।  আমরা যদি কোর্ড অফ সিভির প্রসিডিউর ,১৯০৮ এর সিভিল কোর্ট এ্যাক্ট,১৮৮৭ এর বিভিন্ন বিধান দেখি তাহলে দেখতে পাব যে আদালতকে এই দুইটি আইনের বিধান থেকে ঠিক করবেন কেন আরর্জি ফেরত দিবেন। আরর্জি ফেরতের আগে আদালতকে কোর্ড অব সিভির প্রসিডিউর,১৯০৮ এর ১৫ ধারার বিধানটি বিবেচনায় নিতে হবে যে মামলাটি এখতিয়ার সম্পন্ন সর্বনি¤œ আদালতে দাখিল হয়েছে কিনা।
আরর্জি প্রত্যাখানের তাৎপর্য:
মামলার যে কোন পর্যায়ে আরর্জি প্রত্যাখান হতে পারে তবে অবশ্যই তা রায়ের পূর্বে। আরর্জি আদালত কর্তৃক অর্ডার ৭ রুল ১১ এর যে কোন এক বা একাধিক কারণে প্রত্যাখান হলে একই বিষযে বাদী নতুন করে মামলা করতে পারবেন যদি মামলাটির তামাদির মেয়াদ শেষ হয়ে না যায় বা বাদী প্রত্যাখানের আদেশের বিরুদ্ধে আপীলও করতে পারবেন। আবার বিবাদীর আরর্জি প্রত্যাখানের আদেশ মঞ্জুর না হলে বিবাদী সে আদেশের বিরুদ্ধে জেলা জজ আদালতে বা হাইকোর্ট ডিভিশনে রিভিশন করতে পারবেন।
আরজি প্রত্যাখানের আদেশের বিরুদ্ধে বাদীর প্রতিকার:
আদালত যদি উপরোক্ত কোন একটি কারণে আরর্জি প্রত্যাখান করেন তাহলে আরর্জি প্রত্যাখান আদেশের দ্বারা সংক্ষুব্ধ বাদি আরর্জি প্রত্যাখানের আদেশের বিরুদ্ধে অর্ডার ৭ রুল ১৩ অনুযায়ী আপীল করতে পারবেন বা মামলাটিন তামাদির মেয়াদ শেষ না হলে একই বিষয়ে নতুন করে মামলা দায়ের করতে পারবেন। বাদি আপিল করতে পারবেন কেননা, আরর্জি প্রত্যাখানের আদেশ কোড অফ সিবিল প্রসিডিউর,১৯০৮ এর ২(২) ধারা অনুযায়ী ডিক্রি বলে গন্য হয় এবং একই আইনের ৯৬ ধারা অনুসারে যে কোন ডিক্রির বিরুদ্ধে আপীল করা যায় সে জন্য আরর্জির প্রত্যাখানের আদেশের বিরুদ্ধে আপীল করা যাবে।
আপীলের সময় কি আরর্জি সংশোধন করা যায়:
আপীলের সময়ও আরর্জি সংশোধন করা যায়।(১২ ডিএলআর পেজ ৭০৪)
প্রশ্ন-২ প্লীডিংস বলতে কি বুঝ? প্লীডিংস এর উদ্দেশ্যগুলি আলোচনা কর। আরর্জি ও প্লীডিংস এর মধ্যে পার্থক্য লেখ। কোন অবস্থায় মামলার প্লীডিংস সংশোধনের আবেদন মঞ্জুর অথবা অগ্রাহ্য হতে পারে? প্লীডিংস সংক্রান্ত মৌলিক নিয়মাবলী ব্যাখ্যা কর। আপীল আদালত কি এরুপ সংশোধন করা যায়?
দেওয়ানী কাযবিধি আইনের ৬ আদেশের ১ নং বিধিতে প্লীডিংস এর সংজ্ঞা, ২ নং বিধিতে প্লীডিংস এর মৌলিক নিয়মকানুন এবং ৩ নং থেকে ১৩ নং বিধিতে বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে প্লীডিংস এ অতিরিক্ত সংযোজনের বিষয়ে বলা হয়েছে।
১৯০৮ সালের দেওয়ানী কাযবিধি আইনের প্রথম তফসিলের ৬ আদেশের ১ নং বিধিতে প্লীডিংস সম্পর্কে বলা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে যে,
Pleadings shall mean plaint or written statement অর্থাৎ আরর্জি  বা  লিখিত বিবৃতিকে প্লিডিংস বলা হয়।
বাদী কর্তক দাখিলীয় আরজি এবং বিবাদী কর্তৃক দাখিলীয় লিখিত বিবৃতিকে একত্রে প্লিডিংস(আরজি জবাব) বলা হয়।
বাদীর প্লীডিংস বলতে বুঝায় বাদীর মামলায় দাখিল করা আরজি বা লিখিত বর্ণনা এবং বিবাদীর প্লীডিংস বলতে বুঝায় বিবাদী কর্তৃক দাখিল করা জবাব বা লিখিত বর্ণনা।
আইন বিদ মোখার
একটি মামলায় প্রত্যেক পক্ষগন কর্তৃক লিখিত আকারে দাখিলকৃত বর্ণনাই হল প্লীডিংস। যেখানে বিচারে প্রত্যেক পক্ষের বাদানবাদ উল্লেখ করা হয় এবং ঐ পক্ষের প্রতিপক্ষ কর্তৃক জবাব প্রস্তুতির জন্য প্রয়োজনীয় যাবতীয় বিষয়াদির বিবরণ দেয়া থাকে।
বাদীর আরর্জিতে নালিশের কারণ এবং প্রার্থিত প্রতিকারের বিষয় উল্লেখ থাকে। পক্ষান্তরে, বিবাদীর লিখিত বর্ণনায় বাদীর দাবীকে আইনত প্রতিহত করার যাবতীয় তথ্যাদি বিবৃত থাকে। একটি মামলায় আরর্জি ও লিখিত জবাবের বিষয় বস্তুকে যথাক্রমে বাদী ও বিবাদীর প্লীডিংস বলা হয়।
প্লীডিংস এর উদ্দেশ্য:
প্লিডিংস এর উদ্দেশ্যসমূহ নিম্নরুপ:
১)বিচার্য বিষয় প্রণয়ন করা
২)তর্কিত বিষয় নির্ধারণ করা
৩) ঘটনা বর্ণনা করা আইন উল্লেখ না করা
৪) বাদীর প্রতিকার প্রার্থনা করা
৫) বিবাদীর অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করা
৬) অন্তবর্তীকালীন প্রতিকার প্রার্থনা করা
৭) ওহংঢ়বপঃরড়হ ও উদঘাটন করা।

*প্লীডিংস এর মৌলিক নিয়মাবলী:
৬ আদেশের ১৪ ও ১৫ বিধিতে প্লিডিংস এর নিয়মাবলা বিবৃত হয়েছে। দেওয়ানী কার্যবিধির ৬ আদেশের ১৪ বিধি অনুযায়ী  প্লিডিংস সংশ্রিষ্ট পক্ষ তার এ্যাভোকেট (যদি থাক) কর্তৃক স্বাক্ষরিত হবে। কোন কারণে পক্ষগনের স্বাক্ষ না দেয়া হলে আদালতের অনুমতি নিয়ে পরেও স্বাক্ষর দেয়া যাবে। স্বাক্ষর না থাকার কারেণে প্লিডিং প্রত্যাখ্যা হয না।
দেওযয়ানী কার্যবিধির  ৬ আদেশের ১৫ বিধি অনুযায়ী  প্রত্যেক প্লিডিংএর শেষে পক্ষগন সত্রপাঠে স্বাক্ষর করবেন।
এগুলো ছাড়াও বিভিন্ন আদালতের সিন্ধান্তের মাধ্যমে নি¤œলিখিত বিধিগুলি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে:
১) প্লীডিংস এ ঘটনার উল্লেখ থাকবে কিন্তু আইনের উল্লেখ থাকে না।
২) উল্লেখিত ঘটনা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা বলে বিবেচিত হতে হবে।
৩) প্লীডিংস এ সাক্ষ্যের কোন উল্লেখ থাকবে না।
৪) ঘটনাগুলো সংক্ষিপ্ত আকারে উল্লেখ করতে হবে।
৫) আইনগত ওজর আপত্তি যেমন- নিবৃত্তির নিিত,তামাদি ,রেস জুডিকাটা ইত্যাতির বিষয় পিইডঙ এ উত্থাপন করা যাবে।
৬) যেখানে কোন পক্ষ ভুল বিবরণ,জালিযাতি,বিশ্বাসভঙ্গ,অবৈধ প্রভাব ইত্যাতির উপর নির্ভও করেছে সেখানে তার বিশদ বিবরণ প্লিডিংস এ থাকতে হবে এব্যাপাওে শুধুমাত্র অভিযোগ উত্থাপন করলেই হবে না।
*কখন প্লীডিংস এর সংশোধনের আবেদন অগ্রাহ্য হতে পারে:
নিম্ন লিখিত ক্ষেত্রে প্লিডিংস সংশোধনের আদেশ দেয়া যায় না:
১) যেক্ষেত্রে অত্যাধিক বিলম্বে সংশোধনের আবেদন করা হয়।
২) যে ক্ষেত্রে দসংশোধনের জন্য আবেদনকারীর অসৎ উদ্দেশ্য থাকে।
৩) যে ক্ষেত্রে মামরার প্রকৃত কারণ বা চেহারা পরিবর্তিত হয়ে যেতে পারে।
৪) যে ক্ষেত্রে ন্যায় বিচার বিঘিœত হতে পারে।
৫)যেক্ষেত্রে সংশোধন গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হয় না।
তবে ন্যায় বিচারের স্ভার্থে আদালত অপর পক্ষের সম্ভাব্য ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করে মামলার যে কোন পর্যাযে প্লিডিংস সংশোধন করতে পারেন। অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে যতদূর সম্ভব নমনীয় মনোভাব গ্রহন করা বাঞ্জনীয় বলে উপমহাদেশের বিভিন্ন হাইকোর্ট অভিমত ব্যক্ত করেছেন।
এইভাবে,উল্লেখিত বিধান সাপেক্ষে প্লিডিং সংশোধন বা সংশোধন মঞ্জুর করা যায়।
আরজির জবাব সংশোধন করা যায় কি:
১৯০৮ সালের দেওয়ানী কাযবিধি আইনের প্রথম তফসিলের ৬ আদেশের ১ নং বিধিতে প্লীডিংস সম্পর্কে বলা হয়েছে। সেখানে বরা হয়েছে যে,
Pleadings shall mean plaint or written statement অর্থাৎ আরর্জি  বা  লিখিত বিবৃতিকে প্লিডিংস বলা হয়।
বাদী কর্তক দাখিলীয় আরজি এবং বিবাদী কর্তৃক দাখিলীয় লিখিত বিবৃতিকে একত্রে প্লিডিংস(আরজি জবাব)বলা হয়।
বিরোধীয় বিষয়ে উভয় পক্ষের দাখিলীয় বক্তব্যে কখনো কখনো কিছু ভুলভ্রান্তি দেখা দেয়,এ সকল ভুলভ্রান্তি সংশোধন না করলে ফলপ্রসূ প্রতিকার বাদী বা বিবাদী লাভ করতে পারে না। তাই প্লিডিংস(আরজি জবাব) সংশোধন করা একান্ত প্রয়োজন হয়।
প্লিডিংস সংশোধনের ক্ষেত্রে আদালতের কিছু কিছু বিষয় সতর্কতার সহিত বিবেচনায় নিতে হয। এ সকল বিষয়গুলি নিচে দেওযা হল-
ক) প্রস্তাবিত সংশোধনটি প্রকৃত বিরোধ নির্নয়ে আবশ্যক।
খ) সংশোধনটি অপর পক্ষের ক্ষতির কারন হবে না।
গ) সংশোধনের ফলে বিবাদী পক্ষের অনুকূলে জন্মানো কোন আইনগত অধিকার নষ্ট হবে না।
ঘ) সংশোধনের ফলে মামলার প্রকৃতি ও চরিত্র পরিবর্তিত হবে না।
ঙ) সংশোধনের ফলে নতুন ও অসামজ্ঞস্য মামলার আবতারণা হবে না।
চ) সংশোধনটি সরল বিশ্বাসে বিরম্ব না ঘটানোর উদ্দেশ্যে আনীত হয়েছে।
উপরোক্ত এসকল বিষয় বিবেচনায় নিয়ে আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে বা কোন পক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে প্লিডিংস(আরজি জবাব) সংশোধনের আদেশ দিতে পারেন।
আদেশ ৬ বিধি ১৭
দেওয়ানী কার্যবিধির অর্ডার ৬ রুল ১৭ স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে যে মামলার যে কোন পর্যায়ে আদালত কোন পক্ষকে আরজি জবাবের ন্যায় সঙ্গত সংশোধনের অনুমতি দিতে পারেন। কাজেই বিচারিক আদালতের রায়ের পর সংক্ষুদ্ধ পক্ষ আপীল আদালতেও আরজি ও জবাব সংশোধন করতে পারবে।
নজির:
বিচারিক আদালত রায় ঘোষনার পর প্লিডিংস সংশোধন করতে পারবেন। প্লিডিংস সংশোধনের দরখাস্ত মামলার যে কোন পর্যায়ে মঞ্জুর করা যেতে পারে যদি তা অপর পক্ষের কোন কোন ক্ষতির কারণ না হয়ে থাকে (গেরাম হাফিজ বনাম খাদেম আলী ২৯ ডিএল আর,এসসি,৩১১)। প্লিডিংস সংশোধনের দরখাস্ত বিচারের পূর্বে,বিচারের সময়ে অথবা বিচারের পরে অথবা আপীলে অথবা রিভিশনে (কাজল দাস বনাম মনোয়ারা,৮ বিএলসি ৪১৪,গুরু মিয়া বনাম শামসুল ইসলাম,৯ এম এলআর,৩৩৮), অথবা আপীলেট ডিভিশনে এমনকি জারী কার্যক্রমের ক্ষেত্রেও সংশোধন করা যায়। বাটোয়ারা মামলার ক্ষেত্রে চুড়ান্ত ডিক্রি না হওয়া পর্যন্ত বটোয়ারার একটি মামলা বিচারাধীন থাকে এবং হানিফ আলী বনাম হাজেরা ,৫৫ ডিএলআর পৃষ্ঠা ১৭ মামরায় ইহা সিন্ধান্ত হয যে, প্লিলিমিনারী ডিক্রি হওয়ার পরেও আরর্জি সংশোধন করা যায়। তাই ইহা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, বিচারিক আদালত রায় ঘোষনার পরেও প্লিডিংস সংশোধন করতে পারেন।


প্রশ্ন-৩
*ক) একাধিক দাবীদারের বিরুদ্ধে (ওহঃবৎঢ়ষবধফবৎ ংঁরঃং) মোকদ্দমা বলতে কি বুঝ? এই জাতীয় মোকদ্দমা কে দায়ের করতে পারে? ইন্টার প্লীডার মামলার আরর্জি ও বিচার সংক্রান্ত দেওয়ানী কার্যবিধির বিধানসমূহ সংক্ষেপে আলোচনা কর। ইন্টার প্লীডার মামলার সহবিবাদীদের দাবীর ভিত্তিতে প্রদত্ত রায় কি ঐ বিবাদীদের মধ্যে রেস জুডিকাটা হিসাবে গন্য হবে/কাজ করবে/প্রযোজ্য হবে?
খ) প্রতিনিধিত্বমূলক মামলা বলতে কি বুঝ? কোন ধরণের বিষয় এবং কিভাবে এইরুপ মোকদ্দমা দায়ের করা যায়? সরকারের বিরুদ্ধে এরুপ মামলা রুজু করা যায় কি? যদি যায় তা কখন এবং কিভাবে রুজু করা যায়?
সমস্যা:
”মি:ফাহাদ”-এর হাতে ২০০০০(বিশ হাজার) টাকা রহিয়াছে। যাহা “ফরাহ” এবং “মাশরী” উভয়ই নিজ নিজ প্রাপ্য বলিয়া দাবী করে।”মি:ফাহাদ” এই বিষয়ে“ফারাহ” এবং “মাশরী”-এর বিরুদ্ধে একটি ইন্টার প্লীডার মামলা দায়ের করে।এ ই মোকদ্দমার শুনানীর সময় জানা যায় যে, মোকদ্দমা দায়ের করার পূর্বেই“ফারাহ”উক্ত মোকদ্দমায় জয়ী হইলে ”মি:ফাহাদ”-এর নিকট হইতে ১৫০০০(পনের হাজার) টাকা গ্রহন করিয়া তাহার পূন দাবী মিটিয়া গিয়াছে বলিযা স্বীকার করিবে, এই মর্মে ”মি:ফাহাদ” এবং “ফরাহ”-এর মধ্যে চুক্তি হইয়াছে।
এ ক্ষেত্রে”মি:ফাহাদ”কর্তৃক দায়েরকৃত মোকদ্দমাটি কি রক্ষণযোগ্য? যুক্তি প্রদর্শন করিয়া আলোচনা ক
ইন্টারপ্লিডারস্যুট (ওহঃবৎঢ়ষবধফবৎ ংঁরঃং) মোকদ্দমা :
ইন্টারপ্লিডার স্যুট কি তা দ্য কোড অফ সিভিল প্রসিডিউর,১৯০৮ এর ৮৮ ধারায় বলা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে যে,যখন কোন ঋণ,টাকা বা কোন স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি দুই বা ততোধিক ব্যক্তি যদি একে অন্যের বিরুদ্ধে অপর কোন ব্যক্তির নিকট থেকে দাবি করে যাতে ঐ ব্যক্তির কোন স্বার্থ থাকে না এবং যিনি প্রতিদ্বন্দ্বি দাবিদারদের যে কাউকেই দাবিকৃত সম্পত্তি প্রদান করার জন্য প্রস্তুত আছেন সেরকম কোন ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বি দাবিদারদের মধ্যে কাকে সম্পত্তি হস্তান্তর করবেন এ মর্মে আদালত থেকে সঠিক দাবিদার নির্ধারণ করে পাওয়ার জন্য যে মামলা করেন তাকে ইন্টার প্লিডার স্যুট বলে। তবে ঐ সম্পত্তি নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বি দাবিদারদের মধ্যে কোন মামলা থেকে থাকে তাহলে সেখানে ইন্টার প্লিডার স্যুট দাখিল করা যাবে না।
উদাহরণ: করিম রাজশাহী হইতে ঢাকাগামী কোচে একটি সোনার হার পায়; হারটি প্রকৃত মালিকের নিকট ফেরত দেওয়ার উদ্দেশ্যে সে একটি দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেয়। পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেখিয়া তিনজন দাবিদার উপস্থিত হয়। কিন্তু তাহাদের সহিত কথাবর্তায় কে হারটির প্রকৃত মালিক তাহা সাব্যস্ত করা করিমের পক্ষে সম্ভব হয় না। তদবস্থায় করিম হারটি আদালতে জমা দিয়া দাবিদার ৩ জনের বিরুদ্ধে ইন্টার প্লিডার স্যুট করিতে পারে। এই প্রকার মামলায় করিম শুধু মামলার খরচ এবং বিজ্ঞাপন দেওয়ার বাবদ খরচ দাবি করিতে পারিবে। আদালত ৩ জন দাবিদারের সাক্ষ্য নিয়া প্রকৃত মালিক সাব্যস্ত করিবেন এবং তাহাকে খরচ বাবদ করিমের প্রাপ্য দিয়া হারটি আদালত হইতে ডিক্রিবলে নেওয়ার আদেশ দিবেন।
সুতরাং বলা যায় যে,যদি দুই বা ততোধিক ব্যক্তি অপর কোন ব্যক্তির নিকট একই পাওনা টাকা বা কোন স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি দাবী করে এবং যার নিকট দাবী করা হয় তার মালিক যদি উক্ত ব্যক্তি না হয়ে থাকে তাহলে উক্ত ব্যক্তি খরচের দাবী ছাড়া অন্য কোন দাবী না করে থাকে এবং সে যদি প্রকৃত মালিকের নিকট উক্ত সম্পত্তি বা অর্থ অর্পন করতে প্রস্তুত বা ইচ্ছুক থাকে তবে সেই সম্পত্তি বা অর্থ যার নিকট অর্পন করতে হবে সেই বিষয়ে আদালতের সিন্ধান্ত গ্রহনের জন্য এবং নিজের ক্ষতিপূরণ আদায়ের জন্য প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ওহঃবৎ ঢ়ষবধফবৎ ংঁরঃং  দায়ের করতে পারবে এবং এইভাবে যে মোকদ্দমা দায়ের করা হয় তাকে ওহঃবৎ ঢ়ষবধফবৎ ংঁরঃং বলে।
তবে উক্ত দাবিদারগনের অধিকার যদ্বারা নির্ধারিত হবে এমন কোন মামলা যদি বিচারাধীন থেকে থাকে সেক্ষেত্রে এরুপ ইন্টার প্লিডার মামলা দায়ের করা যাবে না।
কে ইন্টার প্লিডার স্যুট দাখিল করতে পারেন:
প্রতিদ্বন্দ্বি দাবিদারদের কোন স্থাবর বা অস্থাবর সম্পত্তি বা কোন টাকা পয়সা বা ঋণ যে ব্যক্তির নিকট কোনভাবে অর্পিত বা গচ্ছিত থাকে এবং যে সম্পত্তি বা টাকা পয়সা হেফাজতকারির কোন স্বার্থ থাকে না সেই ব্যক্তিই কেবল ইন্টারপ্লিডার স্যুট দায়ের করতে পারবে। বিরোধিয় সম্পত্তিতে বা টাকা পয়সা স্বার্থবান কোন ব্যক্তি ইন্টার প্লিডার স্যুট দায়ের করতে পারবেন না কেননা, এই মামলার দায়েরকারিকে অবশ্যই নি:স্বার্থ হতে হবে। তাই এই মামলাকে কেউ কেউ নি:স্বার্থ ব্যক্তির মামলা বলে অভিহিত করে থাকেন।
ইন্টারপ্লিডার স্যুট দায়ের ও বিচারের বিধান সমূহ:
ইন্টার প্লিডার  মোকদ্দমার দায়ের ও তার বিচার পদ্ধতি কি হবে তা বলা হয়েছে দ্য কোড অফ সিভিল প্রসিডিউর,১৯০৮ এর অর্ডার ৩৫ এর বিভিন্ন বিধিতে। যেমন, উক্ত অর্ডারের বিধি ১ এ বলা হয়েছে, ইন্টার প্লিডার মোকদ্দমার আরর্জিতে এটা অবশ্যই বর্ণনা করতে হবে যে,
ক) নালিশি বিষয়বস্তুর রক্ষণাবেক্ষনের খরচা বা অন্য কোন চার্জ ব্যতীত বাদির কোন স্বার্থ নিহিত নেই;
খ) বিবাদিরা পৃথক এবং আলাদাভাবে নালিশি বিষয়বস্তুতে নিজ নিজ দাবি করেছে;
গ) নালিশি বিষযবস্তুতে বাদি বা বিবাদির মধ্যে পারস্পারিক স্বার্থের কোন দ্বন্দ্ব নেই।
উক্ত বিষয়গুলো নিশ্চিত করতে হবে।
বিধি-২:এই বিধিতে ইন্টার প্লিডারস্যুট সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, এই মামলার বিষয়বস্তু যদি আদালতের দাখিল করার মত হয় বা আদালতের হেফাজতে স্থানান্তর করার মত কিছু হয় তাহলে বাদিকে নালিশি বিষযবস্তুকে আদালতে দাখিল করার জন্য বা আদালতের হেফাজতে স্থানান্তর করার জন্য নির্দেশ দিতে পারেন।
বিধি-৩:এইখানে বলা হয়েছে যে, ইন্টারপ্লিডার স্যুটের কোন একজন বিবাদি যদি ইন্টারপ্লিডার স্যুটের নালিশি বিষযবস্তু নিয়ে বাদির বিরুদ্ধে পৃথক কোন মামলা করেন তাহলে বিবাদিও ইন্টার প্লিডার স্যুটের বিষয়ে আদালতকে জানালে আদালত ইন্টারপ্লিডার স্যুটটির কার্যক্রম স্থগিত করে দিবেন এবং বিবাদিকে ইন্টারপ্লিডার মামলার খরচা প্রদানের নির্দেশ দিবেন ব্যর্থতায় ইন্টার প্লিডার মামলার খরচা বিবাদিকে বর্তমান মামলায় প্রদানের আদেশ দিবেন।
বিধি-৪:মামলার প্রথম শুনানিতে আদালত নালিশি বিষয বস্তুর যাবতীয় দায় দায়িত্ব থেকে বাদিকে মুক্ত করে দিবেন এবং এ সংক্রান্ত বাদির খরচা পাতি দেওয়ার জন্য বিবাদিদের প্রতি নির্দেশ দিবেন এবং মামলা থেকে বাদিকে খারিজ করে দিবেন; তবে আদালত ন্যায় সঙ্গত এবং সুবিধাজনক মনে করলে মামলা নিস্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সকল পক্ষকে মামলায় রাখবেন। প্রয়োজন মনে করলে আদালত নতুন কোন পক্ষ সংযোজন বা প্রতিস্থাপন করে বিচার্য বিষয় নির্ধারণ করে পক্ষদের সাক্ষ্য উপস্থাপন করে অন্যান্য স্বাভাবিক মামলার ন্যায় নালিশি বিষয়বস্তুর স্বত্ব প্রমানের সুযোগ দিয়ে মামলাটি চুড়ান্তভাবে নিস্পত্তি করবেন।
বিধি-৫:প্রিন্সিপালের মাধ্যমে স্বত্বের দাবিদার বা মালিকের মাধ্যমে স্বত্বের দাবিদার ব্যক্তিদের মধ্যে বিরুদ্ধ দাবি ব্যতীত কোন অবস্থায়ই তার প্রিন্সিপালের বিরুদ্ধে বা কোন ভারাটিয়া তার মালিকের (ভূস্বামির) বিরুদ্ধে নালিশি বিষয়বস্তুর মালিকানা নির্ধারনের জন্য ইন্টারপ্লিডার স্যুট দায়ের করতে পারবে না। যেমন, ’এ’ তার প্রতিনিধি ’বি’ র কাছে কিছু গহনা গচ্ছিত রাখল।’সি’ অভিযোগ করলো যে’এ’ গহনাগুলো অবৈধভাবে তার কাছ থেকে কুক্ষিগত করেছে এবং তিনি সেগুলো ’বি’র কাছে ফেরত চাইলেন। এখানে ’বি’’এ’ ও ’সি’কে বিবাদি করে ইন্টার প্রিডার স্যুট দায়ের করতে পারবে না যে, তিনি গহনা গুলো কাকে দিবেন্ কেননা,’বি’ হলো ’এ’ প্রতিনিধি এবং বিধি ৫ তা সুস্পষ্টভাবে নিষিধ করেছে।
বিধি-৬: ইন্টার প্লিডার স্যুটের প্রকৃত বাদিকে নালিশি বিষয়বস্তু রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ খরচা প্রদানের নির্দেশ আদালত বিবাদিদের দিতে পারেন।

ইন্টার প্লীডার মামলার সহবিবাদীদের দাবীর ভিত্তিতে প্রদত্ত রায় কি ঐ বিবাদীদের মধ্যে রেস জুডিকাটা হিসাবে গন্য হবে/কাজ করবে/প্রযোজ্য হবে:
এই জাতীয় মামলার বিচার্য বিষয় বিচারে নিস্পত্তি হলে পক্ষগন এবং তাদের বৈধ প্রতিনিধিগনের মধ্যে এই বিষয়ে পরে আর কোন মামলা চলবে না, রেস জুডিকেটা বাধা হয়ে দাড়াবে। উপরের উদাহরণে একটিমাত্র বিচার্য বিষয় ছিল তিনজন দাবীদারের মধ্যে হারটির প্রকৃত মালিক কে। এই বিষয়ে আদালত যে সিন্ধান্ত নিবেন,আপীলে তাহার পরিবর্তন না হলে,বিবাদীগন ও তাদের বৈধ প্রতিনিধিগনের উপর এই সিন্ধান্ত চুড়ান্ত সিন্ধান্ত এবং বাধ্যকর। তদবস্থায় হারটির প্রকৃত মালিকে কে এই বিষয় নিয়ে পরবর্তী সময়ে তাহাদের অথবা তাহাদের বৈধ প্রতিনিধিদের মধ্যে রেসজুডিকেটা দোষে অচল হবে।
প্রতিনিধিত্বমূলক মোকদ্দমা বলতে কি বুঝ? কোন ধরনের বিষয় এবং কিভাবে এইরুপ মোকদ্দমা দায়ের করা যায়? সরকারের বিরুদ্ধে এইরুপ মোকদ্দমা করা যায় কি? যদি যায় তবে কখন ও কিভাবে?
খ)
প্রতিনিধিত্বমূলক মোকদ্দমা:
প্রতিনিধিত্ব মামলা বলতে বোঝায় যে মামলা কোন প্রতিনিধি দায়ের করেন। এখন দেখতে হবে যে কে কখন কিভাবে প্রতিনিধি হয়ে মামলা দায়ের করতে পারেন। এই প্রতিনিধিত্ব মামলা বলতে আইন দ্বারা সৃজিত কোন প্রতিনিধি কর্তৃক দায়েরকৃত মামলা বুঝায় না বরং এই প্রতিনিধিত্ব মামলা বলতে বুঝায় যখন কোন এলাকায় বসবাসকারি কোন ব্যক্তি সকল বা এলাকাবাসীর পক্ষে বা কোন সম্প্রদাযের পক্ষে মুষ্টিমেয় কিছু ব্যক্তি যদি কোন মোকদ্দমা দায়ের করে বা কোন মোকদ্দমায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তাকে প্রতিনিধিত্বমূলক মামলা বলে। কোন এলাকাবাসী যৌথভাবে কোন ক্ষতির সন্মুখিন হলে বা কোন ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা পেতে বা কোন সম্প্রদায়ে কিছু সংখ্যক ব্যক্তি যদি ঐ সম্প্রদাযের পক্ষ থেকে প্রতিকার চেয়ে কোন মামলা করে বা মামলায় স্বার্থ রক্ষার্থে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তাকে প্রতিনিধিত্বমূলক মামলা বলে। আর প্রতিনিধিত্ব মূলক মামলা দায়ের বিধিবিধান দেওয়া হয়েছে  দ্য কোড অফ সিভিল প্রসিডিউর,১৯০৮ এর অর্ডার ১ রুল ৮ এ। সেখানে বলা হয়েছে যে,যেখানে অসংখ্য ব্যক্তি একই বিষয় বস্তুতে স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সেখানে সেই সকল ব্যক্তিদের মধ্যে এক বা একাধিক ব্যক্তি আদালতের অনুমতি নিয়ে কোন একটি বিষয়ে মামলা দায়ের করতে পারবে বা কোন মামলা তাদের বিরুদ্ধে করা যাবে কিংবা তাদের কেউ সেই মামলায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবে।
সুতরাং বলা যায যে,বহু সংখ্যক লোকের পক্ষে এক বা একাধিক ব্যক্তি কর্তৃক পরিচালিত মোকদ্দমাকে প্রতিনিধিত্বমূলক মোকদ্দমা বলা হয়। যেহেতু বহুলোকের অভিন্ন স্বার্থে জড়িত রয়েছে সে ক্ষেত্রে প্রত্যেক পৃথক পৃথক মামলা দায়ের করলে এক অচল অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে তাই এইধরনের পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য এই মোকদ্দমার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
প্রতিনিধিত্ব করার জন্য শর্তাবলী:
১) মোকদ্দমাটি স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বহু লোক থাকতে হবে।
২) উক্ত লোকদের মধ্যে একই স্বার্থ বিদ্যমান থাকতে হবে।
৩) এই মোকদ্দমা দায়ের এর জন্য আদালতের অনুমতি নিতে হবে।
৪) স্বার্থ সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে নোটিশ দিতে হবে অথবা পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে হবে।
যে বিষয় নিয়ে প্রতিনিধিত্বমূলক মামলা করা যাবে:
সংশ্লিষ্ট নালিশি বিষয়বস্তুতে যারা সমষ্টিগতভাবে কোনকিছুর অধিকারী এবং তাদের সেই অধিকার লংঘনের ঘটনা নিয়ে এরুপ মামলা করা যাবে বা সমষ্টিগত অধিকার রক্ষায় কোন মামলায় প্রতিদ্বন্দ্বিতাও করা যাবে।
সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিনিধিত্বমূলক মামলা দায়ের:
প্রতিনিধিত্বমূলক মামলা যেমন কোন ব্যক্তি বা ব্যক্তি সমষ্টির বিরুদ্ধে দায়ের করা যাবে তেমনি ভাবে সরকারের বিরুদ্ধেও করা যাবে। সরকারি কোন সিন্ধান্ত বা কাজ দ্বারা বা কোন নথি দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ কোন সম্প্রদায়ের কেউ বা কোন নির্দিষ্ট এলাকার ব্যক্তি সকলের কোন অধিকার লংঘিত হলে অধিকার পুন:প্রতিষ্ঠার জন্য বা বঞ্চিত কোন অধিকার রক্ষায় সরকারের বিরুদ্ধে মামলা করা যাবে বা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা যাবে।
খ) সমাধান:
আলোচ্য সমস্যায় মি: ফাহাদ কর্তৃক দায়েরকৃত মামলাটি রক্ষণযোগ্য কিনা তাহাই বিবেচ্য বিষয়। ইন্টার প্লিডার মোকদ্দমা হলো এমন বিষয় যেখানে বিরোধীয় সম্পত্তি বা কোন টাকা পয়সা একাধিক ব্যক্তি একে অন্যের বিরুদ্ধে নিজের বলে দাবী করে। তখর বিরুদ্ধ দাবীদারদের মধ্যে কে বিরোধীয় সম্পত্তির যথার্থ মালিক উহা নিরুপনের জন্য বাদী আদালতে যদি েেকান মামলা দায়ের করে তখন তাকে ইন্টারপ্লিডার মোকদ্দমা বলে।
এই মোকদ্দমায় মামলা খরচ ব্যতীত বাদী অন্য কোন কিছু দাবী করতে পারে না। এই জন্য একে নি:স্বার্থ ব্যক্তির মোকদ্দমা বলা হয়।
আলোচ্য সমস্যায় মি: ফাহা অন্যতম বিরুদ্ধ দাবীদার ব্যক্তি মাসুরীর সঙ্গে
বাদী-ফাহাদ                                                                      বিবাদী-ফারা/মাসুরী
মামলার বিষয় অর্থাৎ টাকা পয়সা লেনদেন চুক্তিতে উপনীত হয়েছেন যে বিবাদী ফারা মামলায় জিতলে মামলার দাবীকৃত টাকার কিছু অংশ বাদী মি: ফাহাদ পারে যাহা আইনানুগ নহে। কেননা ইন্টার প্লিডার মোকদ্দমা নি:স্বার্থ ব্যক্তির মোকদ্দমা। যাহাতে বাদীর কোন স্বার্থ থাকবে না।
বাদী মি: ফাহাদ এবং বিবাদী ফারা মামরার দাবীকৃত টাকা ভাগাভাগি করার চুক্তি করেছে যা ইন্টার প্লিডার মোকদ্দমা বলে গন্য হবে না। বিধায় মামলাটি খারিজ হবে এবং আইনানুগভাবে রক্ষনযোগ্য হবে না।

*প্রশ্ন-৪ কমিশন বলতে কি বুঝ? দেওয়ানী আদালত যে সকল ক্ষেত্রে কমিশন নিয়োগ করতে পারে তা আলোচনা কর। ঐ সকল ‘কমিশনের’ প্রয়োজনীয়তা কি এবং তাহা কোন কোন উদ্দেশ্য সমূহ পূরণ করে? আলোচনা কর।
কমিশন:
কমিশন কি তার সংজ্ঞা আইনে কোথাও দেওয়া হয়নি। তবে আমরা নিজেরাই যদি ’কমিশন’ দ্বারা কিছু একটা বুঝতে চাই তাহলে বলা যাবে আদালতের কোন কাজ যদি অন্যের মাধ্যমে সম্পাদনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় বা আদালত নিজে করতে অসুবিধা বোধ করেন এমন কোন কাজ করার আবশ্যকতা দেখা দেয় তাহলে বা অসুস্থ বা অপরাগ কোন ব্যক্তি যদি আদালতে উপস্থিত হতে ব্যর্থ হয় তাহলে আদালত যে কার্য ব্যবস্থায় অন্যের দ্বারা সেই কাজ সম্পন্ন করেন বা করান তাকে কমিশন বলে। কমিশন সংক্রান্ত বিধানগুলো দেওয়া আছে দ্য কোড অফ সিভির প্রসিডিউর,১৯০৮ এর ৭৫ ধারায়।
দেওয়ানি কার্যবিধির ১৫৮ টি ধারা আছে যা বিষয়বৈচিত্র অনুযায়ী ১১টি খন্ডে বিভক্ত। তার মধ্যে তৃতীয় খন্ডে আনুষঙ্গিক কার্যক্রম বা ওহপরফবহঃধষ ঢ়ৎড়পববফরহমং এই শিরোনামে কমিশন বিষয়ে বলা হয়েছে। এই খন্ডে ৪ টি ধারা আছে -৭৫, ৭৬, ৭৭ এবং ৭৮। অন্যদিকে দেওয়ানি কার্যবিধির ২৬ নং আদেশে কমিশন বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে।
একজনের পক্ষে কাজ করার জন্য অন্যকে ক্ষমতা প্রদান অর্থাৎ আদালত বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে কিছু কাজ নিজে না করে অন্যকে দিয়ে করিয়ে নিতে পারেন। আইনের ভাষায় একেই কমিশন বলে। অন্যভাবে বলা যায় যে, মামলার সুষ্ঠু নিস্পত্তিতে আদালত কর্তৃক নিযুক্ত ব্যক্তিকে কমিশন বলে। যিনি এই কাজ করেন তাকে কমিশনার বলা হয়।

যথাযথ ও পূর্ণাঙ্গ ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য আদালত কমিশন নিয়োগের ক্ষমতা স্বপ্রণোদিত (ঝঁড় সড়ঃড়) হয়ে স্বেচ্ছাধীন (উরংপৎবঃরড়হ ড়ভ পড়ঁৎঃ / উরংপৎবঃরড়হধৎু ঢ়ড়বিৎ ড়ভ পড়ঁৎঃ) আকারে প্রয়োগ করতে পারে। তবে মোকদ্দমার কোনো পক্ষ কর্তৃক আবেদনের ফলেও তা আদালত বিবেচনায় নিতে পারে। ২৬ নং আদেশের সমস্ত বিধি পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, নিম্নোক্ত কারণে কমিশন গঠন করা যায়।
দেওয়ানী কার্যবিধির ৭৫ ধারানুযায়ী পক্ষগনের আবেদনক্রমে আদালত তার স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতাবলে নি¤œলিখিত কাজের জন্য কমিশন নিয়োগ করতে পারেন-
ক.কোন ব্যক্তির সাক্ষ্য গ্রহনের জন্য; [ধারা ৭৬, ৭৭ ও ৭৮ এবং ২৬ আদেশের ১ থেকে ৮ নিয়ম পর্যন্ত]
খ. বিরোধিয় বিষয়ে স্থানীয় তদন্ত করার জন্য; [২৬ আদেশের ৯ ও ১০ নিয়ম]
গ. হিসাব-নিকাশ পরীক্ষা করার জন্য অথবা [২৬ আদেশের ১১ ও ১২ নিয়ম]
ঘ. আদালতের সিন্ধান্ত মোতাবেক ডিক্রিকৃতসম্পত্তি ডিক্রিদারদের মধ্যে বন্টন করা ইত্যাদি কারনে আদালত কমিশন পাঠাতে পারেন। [২৬ আদেশের ১৩ ও ১৪ নিয়ম]
আর এই চারটি বিষয়ে যারা পারদর্শি সেরকম ব্যক্তিদের কমিশনার নিয়োগ করে থাকেন। যেমন, সাক্ষ্য গ্রহনের জন্য আদালত সাধারণত একজন এ্যাডভোকেটকে পাঠিযে থাকেন। স্থানিয় তদন্তের জন্য সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিকে পাঠানো হয়ে থাকে। তেমনিভাবে হিসাব-নিকাশ পরীক্ষার জন্য হিসাব বিষয়ে পারদর্শি যেমন,চার্টার্ড একাউন্টেন্ড কে নিযুক্তি করা হয়। আবার বন্টনের মামলায় ডিক্রিকৃত সম্পত্তি পক্ষদের মধ্যে গুনাগুন অনুসারে সরেজমিনে বন্টন করার জন্য সার্ভে বিষযে অভিজ্ঞ কোন ব্যক্তিকেই নিযুক্ত করা হয় বন্টন করার জন্য।
১৫ নং নিয়মে বলা আছে কমিশনের খরচ নির্বাহ করা বিষয়ে। সাধারণত যে পক্ষের আবেদনক্রমে কমিশনকে দায়িত্ব দেয়া হয় তারাই এর খরচ নির্বাহ করে থাকে। এই খরচ আদালতে জমা দিতে হয়।
ক) কোন ব্যক্তির সাক্ষ্য গ্রহনের জন্য: সাক্ষীর জবান বন্দী গ্রহনের জন্য কমিশনের নিয়মাবলী ২৬ নং আদেশের ১ হতে ৮নং বিধিতে বর্নিত আছে।
অর্ডার ২৬ রুল-১:যেসব মামলায় সাক্ষীর জবান বন্দী গ্রহন করার জন্য আদালত কমিশন প্রেরণ করতে পারে সেসব ব্যক্তি ব্যক্তিগতভাবে আদালতে হাজিন হওয়া থেকে অব্যাহতি লাভের অধিকারী সে সব ব্যক্তির জবারবন্দী গ্রহনের জন্য যে কোন আদালত যে কোন সময় যে কোন মামলায় কমিশন প্রেরণ করতে পারেন জবানবন্দী গ্রহনের জন্য। যে সকল ব্যক্তি আদালতে হাজির হওয়া থেকে অব্যাহতি পাবে ১৩২ ও ১৩৩ ধারায় উল্লেখ আছে।
ধারা-১৩২: দেশের প্রচলিত রীতি অনুযায়ী যে সকল মহিলাকে জনসম্মুখে উপস্থিত হতে বাধ্য করা যাবে না সে সকল মহিলার জবানবন্দী গ্রহনের জন্য।
ধারা-১৩৩: অন্যান্য বিশেষ ক্ষেত্রে যে সকল ব্যক্তি হাজির হওয়া থেকে অব্যাহতি ব্যক্তি-অসুস্থ ব্যক্তি, আদালতের এখতিয়ারের বাইরে থাকে বা এমন কোন পদে অধিষ্ঠিত আছেন -যাতে তিনি অনুপস্থিত থাকলে দেশের ক্ষতি হবে। বা যিনি দেশের বাইরে আছেন তিনি।
খ) অর্ডার ২৬ রুল-২: কমিশন প্রেরনের আদেশ: যদি কোন ব্যক্তি কমিশন নিয়োগের জন্য আদালতে এফিডএপিট সহ আবেদন করতে পারেন তবে আদালত কমিশনের আদেশ দিতে পারে।
এই কমিশন প্রদানের পদ্ধতি-
১) আদালতের আদেশে
২) আবেদনের প্রেক্ষিতে
গ) অর্ডার ২৬, রুল-৩: যে ক্ষেত্রে সাক্ষী আদালতের এখতিয়ারভূক্ত এলাকায় বসবাস করে: আদালত যাকে উপযুক্ত মনে করবেন তাকেই প্রেরণ করবেন। সেক্ষেত্রে আদালত বারের বিজ্ঞ আইনজীবিকে কমিশন হিসেবে নিয়োগ করবেন।
ঘ) অর্ডার ২৬ রুল-৪:যে সকল ব্যক্তির জবানবন্দী গ্রহনের জন্য কমিশন প্রেরন করা যাবে
১) যে ব্যক্তি আদালতের আঞ্চলিক এখতিয়ার এর বাইরে বসবাস করে।
২) যে ব্যক্তি আদালতের আঞ্চলিক এখতিয়ারের মধ্যে বসবাস করে কিন্তু জিগ্নসাবাদের পূর্বে উক্ত এলাকা ত্যাগ করেছে।
৩)এমন রাজ কর্মচারী যার অফিসে অনপস্থিতি আদালতে জনগনের কাজের ব্যাঘাত বলে মনে করেন। তবে এ সময়ে যদি ঐ পদে বহাল না থাকে তবে কমিশন প্রেরনের প্রয়োজন নাই।
অর্ডার-২৬,রুল-৫) দেশের বাইরে বসবাসকারী সাক্ষী জবান বন্দী গ্রহনের জন্য কমিশন বা অনুরোধ পত্র প্রেরণ।
অর্ডার-২৬ ,রুল-৬:কমিশন মোতাবেক আদালত কর্তৃক সাক্ষীর জবানবন্দী গ্রহন।
অর্ডার-২৬ ,রুল-৭:সাক্ষীর জবার বন্দী সহ কমিশনে ফেরত পাঠানো
অর্ডার-২৬ ,রুল-৮:জবানবন্দী যখন প্রমান হিসাবে পাঠ করা যাবে।
খ) বিরধিয় বিষয়ে স্থানীয় তদন্ত করার জন্য: স্থানীয় তদন্ত করার বিষয়ে কমিশনের নিয়মাবলী অর্ডার -২৬,রুল-৯ ও ১০ এ বিবৃত আছে।
যে কোন মামলায় আদালত যদি মনে করেন যে, বিরোধভূক্ত বিষয় সম্পর্কে সাম্যেক অথবা কোন সম্পত্তির বাজার ম্ল্যূ নিরুপনের জন্য সরেজমিনে তদন্তের প্রয়োজন সে ক্ষেত্রে আদালত কমিশন নিয়োগের আদেশ দিবেন। এরুপ ক্ষেত্রে আদালত একটা নির্দিষ্ট সময় নির্ধারণ করে দেবেন এবং উক্ত সময়ের মধ্যে আদালতে রিপোট প্রদান করতে হবে। এই সময় তিন মাস তবে প্রয়োজন মনে করলে আদালত সময় বর্ধিত করতে পারে।এই রিপোর্ট মামলার প্রমান হিসেবে ব্যবহৃত হবে।
গ) হিসাব পরীক্ষা ও সংশোধনের জন্য:
হিসাব পরীক্ষার জন্য কমিশনের নিয়মাবলী অর্ডার-২৬ রুল-১১ ও ১২ এ বিবৃত আছে। কোন মামলার হিসাবপত্র পরীক্ষার জন্য কমিশন প্রয়োজন হলে আদালত কমিশন নিয়োগের আদেশ দিতে পারে।কমিশনের কার্যবিবরণী এবং রিপোর্ট মামলার প্রমানরুপে ব্যবহৃত হবে।
ঘ) সম্পত্তির বাটোয়ারার জন্য: সম্পত্তির বাটোয়ারার জন্য কমিশনের নিয়মাবলী অর্ডার ২৬,রুল ১৩ও ১৪ এ বিবৃত আছে।
কোন মামলায় যদি সম্পত্তি বাটোয়ারার জন্য প্রাথমিক ডিক্রি হয়ে থাকে তবে আদালত উপযুক্ত মনে করলে প্রাথমিক ডিক্রি এ বর্ণিত স্বত্ব অনুসারে সম্পত্তি বাটোয়ারার নির্দেশ দিবেন।
রুল-১৪: প্রয়োজনীয় তদন্ত অনুষ্ঠানের পর কমিশনার আদালতের আদেশনুসারে সম্পত্তিটি বন্টন করবেন। এবং সংশ্লিষ্ট পক্ষগনকে একটি পৃথক চিহ্নিত অংশ প্রদান করবেন।
কমিশনের উদ্দেশ্য:
কমিশনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে আদালতের পক্ষ হতে কোন অফিসার কর্তৃক নালিশী সম্পত্তি বা কোন হিসাব নিকাশ পরিদর্শন বা চলাচল করতে অক্ষম ব্যক্তির জবানবন্দী গ্রহন করা। এতে বিচার কার্য তরান্বিত হয় এবং সরেজমিনে বিবাদের বিষয় আদালত কর্তৃক পরিদর্শন করা হয়।
কমিশনের প্রয়োজনীয়তা:
মামলার কোন পক্ষ যদি অসুস্থতা বা শারিরিক অক্ষমতার জন্য আদালতে আসতে অপরাগ হন কিন্তু বিরোধীয় বিষয় নিস্পত্তি করার ক্ষেত্রে তার সাক্ষ্য খুবই গুরুত্বপুর্ণ হয় তাহলে আদালত তার সাক্ষ্য গ্রহনের জন্য অসুস্থ বা পঙ্গু ব্যক্তির বাড়িতে যেতে পারেন না বটে কিন্তু এমন একজন ব্যক্তিকে নিয়োগ করতে পারেন যিনি উভয় পক্ষের উপস্থিতিতে শারিরিকভাবে অক্ষম ব্যক্তির সাক্ষ্য লিপিবদ্ধ করতে পারেন। তিনি আদালতের ন্যায় ভুমিকা পালন করে থাকেন অর্থাৎ সাক্ষ্য গ্রহনের জন্য আদালত দ্য কোড অফ সিভির প্রসিডিউর,১৯০৮ কর্তৃক ১৮ অর্ডারে যে সকল ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন তার সকল ক্ষমতাই এ্যাডভোকেট কমিশনার প্রয়োগ করে সাক্ষ্য গ্রহনের কাজটি আদালতের পক্ষ থেকে সমাপ্ত করে থাকেন। তেমনি ভাবে নালিশি সম্পত্তির দাগ খতিয়ান বা পরিমান বিশ্লেষণ করার জন্য বা পূর্ববর্তী খতিয়ানের সঙ্গে চলতি খতিয়ানের কোন অসংগতি আছে কিনা বা পূর্বের জরিপে নালিশি জমি কোন দাগ খতিয়ানে  বা মৌজা নক্সায় কিভাবে প্রদর্শিত হয়েছে ইত্যাদি বিষয় গুলোর সাথে চলমান খতিয়ানে নালিশি সম্পত্তির রেকর্ড সঠিক আছে কিনা ইত্যাদি বিষয় সার্ভে নোয়িং এ্যাডভোকেটকে নিয়োগ করা হয় উহা তদন্ত করে দেখার জন্য। একইভাবে হিসাবের মামলায় বা অংশীদারী কারবার নিয়ে কোন মামলা হলে পক্ষদের মধ্যে কে কার কাছে কি পরিমান পাওনা আছে তা যদি শুধুমাত্র আদালতে উপস্থাপিত সাক্ষ্য থেকে সঠিক সিন্ধান্তে আসা সুবিধাজনক মনে হয় তাহলে তৎবিষয়ে পারদর্শি কোন ব্যক্তিকে নিয়োগ করে সংশ্লিষ্ট কারবারের নথিপত্র বা লেজারবহি পরীক্ষা করে রিপোর্ট দিতে বলা হয় যার উপর ভিত্তি করে আদালত চুড়ান্ত সিন্ধান্ত নিয়ে থাকেন। আবার, সম্পত্তির বন্টনের মামলায় আদালত বাদি বা বিবাদি পক্ষে সম্পত্তির বন্টন বিষয়ে কোন সিন্ধান্ত দিলে তা সরেজমিনে বাই মিটস এন্ড বাউন্ট বন্টর করার জন্য আদালত সার্ভে নোয়িং কোন এ্যাডভোকেট কে নিয়োগ করতে পারেন সিভিল কোর্ট কমিশনার হিসেবে যার রিপোর্টের ভিত্তিতে বন্টন বিষয়ে আদালতের প্রাথমিক ডিক্রি চুড়ান্ত ডিক্রিতে পরিণত করা হয়। এরকম ইত্যাদি নানা কারণে আদালত কমিশনার নিয়োগ করে থাকেন।
প্রশ্ন-৫
*ক) ঝবঃ ড়ভভ ও ঈড়ঁহঃবৎ ঈষধরস বলতে কি বুঝ এবং এদের মধ্যে পার্থক্য আলোচনা কর। এটি কিভাবে পাল্টাদাবী থেকে পৃথক? সেটঅফ কে দাবী করতে পারে? এর প্রযোজ্য আবশ্যকীয় শর্তগুলো কি? ঊয়ঁরঃধনষব ধহফ খবমধষ ংবঃ ড়ভভ বলতে কি বুঝ এবং এদের মধ্যে পার্থক্য আলোচনা কর।
*খ) রিসিভার বলতে কি বুঝ/রিসিভার কে? আদালত কখন রিসিভার নিয়োগ করে? কিভাবে এবং কখন রিসিভার এর নিয়োগ বাতিল করা যায়? রিসিভারের ক্ষমতা, কতব্য এবং দায়িত্ব আলোচনা কর। রিসিভার নিয়োগের আদেশ কি আপীলযোগ্য? কর্তব্য অবহেলার জন্য রিসিভারের দন্ড কি?

ঝবঃ ড়ভভ (সেট অফ) কি:
বাদি বিবাদির কাছে টাকা আদায়ের জন্য যদি কোন মামলা দায়ের করে তাহলে সেই বিবাদিরও যদি বাদির কাছে কোন পাওনা থেকে থাকে তাহলে বিবাদি উহার সমন্বয় চেয়ে লিখিত জবাব দাখিলের মাধ্যমে যদি দাবি নামা পেশ করে তাহলে তাকে সেট অফ বা দাবির সমন্বয় বলে। দাবি সমন্বয় বা সেটঅফের বিধান দেওয়া হয়েছে দ্য কোড অভ সিভিল প্রসিডিউর ,১৯০৮ এর অর্ডার ৮ এর বিধি-৬ এ।
সেট অফ অর্থ হল কোন দাবীর বিরুদ্ধে উত্থাপিত আরেকটি দাবী । এটা হচ্ছে সে রকম দাবী যা মূল দাবীর বিপরীতে দাড় করান যায় । যখন বাদী কোন টাকা আদায়ের উদ্দেশ্যে মামলা করে, বিবাদী যদি বাদীর বিরুদ্ধেও অনুরূপ টাকা প্রাপ্তির কোন দাবী উত্থাপন করে তাহলে বিবাদীর এই দাবীকৃত টাকা বাদীর বিরুদ্ধে "সেট অফ" চাইতে পারে ।
বাদীর অর্থ প্রাপ্তির দাবীতে বিবাদী আতœপক্ষ সমর্থন করে লিখিত জবাবের মাধ্যমে যে অর্থ প্রাপ্তির দাবী করে এবং যাহা দ্বারা বাদীর দাবীর সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে কমানো হয়ে থাকে তাহাকে ঝবঃ ড়ভভ  বলে। এর ক্ষেত্রে বাদীর দাবী বিবাদীর দাবীর অধিক হয়ে থাকে।
সেটঅফের দাবি কখন তোলা যায়:
বাদির টাকা আদায়ের মামলায় বিবাদি যদি সেট অফ দাবি করতে চায় তাকে দুটো শর্ত অবশ্যই মেনে চলতে হবে।
প্রথমত, বাদির নিকট থেকে আইনানুগভাবে আদায়যোগ্য টাকার মধ্যে বিবাদি সেই পরিমান টাকার দাবি সমনাবয় চাইতে পারবে যার পরিমান ঐ বিচারিক আর্থিক এখতিয়ারের সমপরিমান হতে হবে তার বেশি হলে সে রকম পরিমাণের টাকা পাওনার দাবি বিবাদি সেট-অফ দাবি করতে পারবে না।
দ্বিতীয়ত, সেট অফের দাবি বিবাদি তখনই করতে পারবে যদি কোন মামলার বাদি বা বিবাদি উভয়েই একে অন্যের নিকট পানো দাবির সমদাবিদার বলে গন্য অর্থাৎ তারা উভয় যদি দাবি-দাওয়ার ক্ষেত্রে একই চরিত্রের অধিকারি হয়। তারা বাদির মামলায় এক অন্যের নিকট পাওনাদার বা দেনাদার না হলে সেই মামলায় সেট-অফের দাবি করা যাবে না। যেমন, ’এ’ ও ’বি’ ১০০০০০ টাকা পাওনার দাবিতে ’সি’র বিরুদ্ধে মামলা দাবি করলো। এ রকম একটি টাকা আদায়ের মামলায় ’বি’র নিকট ’সি’র পাওনা ৫০০০০ টাকা সমন্বয় চেয়ে লিখিত জবাব দাখিল করতে পারবে না। কেননা,’এ’ ও ’বি’ উভয়েই ’সি’র পাওনাদার। কিন্তু এই মামলায় ’সি’ ’এ’ এবং ’বি’ উভযের কাছে পাওনাদার নহে শুধুমাত্র ’বি’র পাওনাদার। সি যদি যৌথভাবে ’এ’ ও ’বি’র পাওনাদার হতো তবে ’সি’ সেট অফ দাবি করতে পারতো। তাই যে মামলা এ ও বি উভয়েই দাখিল করেছে সেই মামলায় ’সি’র দাবির সমন্বয দাবি করতে পারবে না। সেট অফের ক্ষেত্রে বাদি এবং বিবাদি একই চরিত্রের হতে হবে অর্থাৎ এক অন্যের নিকট পাওনাদার কিংবা দেনাদার হতে হবে। উল্লেখিত মামলায় ’এ’ ও ’বি’ উভয়ই ’সি’ পাওনাদার কিন্তু ’বি’ ’সি’র দেনাদার হলেও ’এ’ কিন্তু ’বি’ দেনাদার নহে। তাই তারা বাদি ও বিবাদি একই চরিত্রের নহে অর্থাৎ ঞযবু ফড়হড়ঃ ভরষষ ঃযব ংধসব পযধৎধপঃবৎ ধং সবহঃরড়হবফ ঁহফবফ জঁষব  ৬(১) ড়ভ ঃযব ঙৎফবৎ ৮.দাবি সমন্বয় বা সেট অফের মামলার একটি আবশ্যিক শর্ত হলো যে, বাদি ও বিবাদিকে একই চরিত্রের হতে হবে অর্থাৎ উভয়কেই উভযের দেনাদার ও পাওনাদার হতে হবে। একজন (বাদি) শুধু দেনাদার হয় আর অন্যজন (বিবাদি) শুধু দেনাদার হয় তাহলে দেনাদার সেট-অফ দাবি করতে পারবে না সেক্ষেত্রে বিবাদীকেও পাওনাদার হতে হবে।
তৃতীয়ত’ বাদির টাকা আদাযের দাখিলি মামলার প্রথম শুনানিতে বিবাদিকে সেট-অফ বা দাবির সমন্বয় দাবি লিখিত জবাব দাখিলের মাধ্যমে পেশ করতে নতুবা মামলার অন্য কোন সময়ে করা যাবে না যদি না আদালত তাতে সম্মতি দেয়।
দ্য কোড অভ সিবির প্রসিডিউর,১৯০৮ এর অর্ডার ৮ এর ৬(২) বিধির বিধান অনুসারে দেখা যায় যে, আইনগত ভিত্তির ক্ষেত্রে সেট-অফের দাবি সম্বলিত লিখিত জবাবকে ক্রস স্যুট বা পাল্টা দাবির মামলার আরজির মতই মূল্যায়ণ করা হয়েছে এবং লিখিত জবাবে পেশ কৃত দাবি গুলোকে একটি মামলার আরজির মতই গন্য করে বাদির দাবি এবং বিবাদির পাল্টা দাবি সম্পর্কে একটি চুড়ান্ত রায় আদালত ঘোষনা করতে পারবে এবং সেই রায় উভয়েরই উপরে সমভাবে কার্যকরি হবে। যদি দেখা যায়, বাদির দাবি প্রতিষ্ঠিত হয়নি বরং বিবাদির লিখিত জবাবে উল্লেখিত সেট-অফের দাবিই সফল হয়েছে তাহলেও বাদিকে আদালতের দেওয়া রায় অন্য যে কোন মামলার রায়ের মতই আইনানুগ গণ্য করে বাদিরজন্য বাধ্যকর হবে । কেননা, একই অর্ডারের ৬ বিধির ২ উপবিধিতে দাবির সমন্বয়  বা সেট অফের পেশকৃত বর্ণনা কে আদালত আরর্জি হিসেবে গণ্য করবেন এবং বাদির মূল দাবি এবং বিবাদির পাল্টা দাবি বিবেচনায় নিয়ে চুড়ান্তভাবে মামলাটি নিস্পত্তি করবেন।

ঈড়ঁহঃবৎ ঈষধরস:
বাদীর দাবীর অতিরিক্ত দাবীর জন্য বিবাদী যে দাবী করে তাকে ঈড়ঁহঃবৎ ঈষধরস বলা হয়। ঈড়ঁহঃবৎ ঈষধরস হচ্ছে বিবাদী কর্তৃক বাদীকে আক্রমনের একটি পন্থা। পাল্টা দাবীর ক্ষেত্রে বিবাদীর দাবী বাদীর দাবীর অধিক হয়ে থাকে।
দাবী সমন্বয় বা সেট অফের শর্তাবলীঃ
৮ নং আদেশের ৬ নং বিধি অনুযায়ী দাবী সমন্বয়ের ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত শর্তগুলো পূরণ করতে হবেঃ
১) বাদীর মোকদ্দমাটি অবশ্যই অর্থ আদায়ের মামলা হতে হবে।
২) বিবাদী কর্তৃক বাদীর নিকট থেকে যে প্রাপ্য চাওয়া হচ্ছে তা অবশ্যই নির্ধারিত হতে হবে।
৩) বিবাদী কর্তৃক বাদীর নিকট থেকে যে অর্থ দাবী করা হচ্ছে তা অবশ্যই আইনত আদায় যোগ্য হতে হবে।
৪) ঝবঃ ড়ভভ  এর দাবী অবশ্যই বিবাদী কর্তৃক বাদী অথবা বাদীগনের নিকট থেকে আদায়যোগ্য হতে হবে।
৫) বিবাদী কর্তৃক দাবীটি অবশ্যই আদালতের এখতিয়ায়ের মধ্যে থাকতে হবে।
৬) উভয় পক্ষের দাবীর প্রকৃতি একি রকম হতে হবে।
৭) বিবাদী কর্তৃক ঝবঃ ড়ভভ  এর দাবীটি অবশ্যই ১ম শুনানীর দিনেই পেশ/ উপস্থাপন করতে হবে। তবে পরবর্তী কোন সময়ে আদালতের সম্মতি সাপেক্ষে পেশ করা যাবে।
ঝবঃ ড়ভভ ও ঈড়ঁহঃবৎ ঈষধরস এর মধ্যে পাথক্য:
ক্র:নং    পার্থক্যের বিষয়    ঝবঃ ড়ভভ    ঈড়ঁহঃবৎ ঈষধরস
১    সংজ্ঞাগত পার্থক্য    বাদি বিবাদির কাছে টাকা আদায়ের জন্য যদি কোন মামলা দায়ের করে তাহলে সেই বিবাদিরও যদি বাদির কাছে কোন পাওনা থেকে তাকে তাহলে বিবাদি উহার সমন্বয় চেয়ে লিখিত জবাব দাখিলের মাধ্যমে যদি দাবি নামা পেশ করে তাহলে তাকে সেট অফ বা দাবির সমন্বয় বলে।    বাদীর দাবীর অতিরিক্ত দাবীর জন্য বিবাদী যে দাবী করে তাকে ঈড়ঁহঃবৎ ঈষধরস বলা হয়।
২    আইনগত ভিত্তি    সেট অফ সম্পর্কে দেওয়ানী কার্যবিধির ৮ আদেশের ৬ বিধিতে বর্ণিত হয়েছে।    পাল্টাদাবী সম্পর্কে দেওয়ানী কার্যবিধির ২১ আদেশের ১৯ বিধিতে বর্নিত হযেছে।
৩    পন্থা হিসাবে       
৪    স্বতন্ত্র মোকদ্দমা
       
৫    দাবীর সীমা       

           
   
   
   
       
খবমধষ ঝবঃ ড়ভভ ধহফ ঊয়ঁরঃধনষব ঝবঃ ড়ভভ:
ঈচঈ ঙৎফবৎ ৮ জঁষব ৬ এর উল্লেখিত ঝবঃ ড়ভভ কে খবমধষ ঝবঃ ড়ভভ বলা হয়। উক্ত আইনগত ঝবঃ ড়ভভ এর বাইরেও প্রয়োজন বোধে আদালত ইকুইটি গত ঝবঃ ড়ভভ এর দাবী গ্রহন করতে পারে। একি মামলায়/ একি লেনদেনে যখন এমন পাল্টা দাবী করা হয় যে যাহার পরিমান নির্নীত হয় নাই তখন ইংল্যান্ড এর কমন’ল’ আদালত সেগুলি গ্রহন করতে অস্বীকার করত কিন্তু চ্যান্সেরী আদালত সেগুলি গ্রহন করত এইরুপ চ্যান্সেরী কোট কর্তৃক উদ্ভুত ঝবঃ ড়ভভ কে ঊয়ঁরঃধনষব ঝবঃ ড়ভভ বলা হয়। যে ক্ষেত্রে কোন ঝবঃ ড়ভভ এর দাবী ঈচঈ ঙৎফবৎ ৮ জঁষব ৬  অনুযায়ী গ্রহনযোগ্য হয় না তখন আদালত তাহার সহজাত ক্ষমতা বলে ইকুইটি গত কারণে বিবাদীর ঝবঃ ড়ভভ এর দাবী গ্রহন করে থাকে।
আদালত তাহার সহজাত ক্ষমতা বলে নিজ বিবেচনায় ঝবঃ ড়ভভ এর দাবী গ্রহন করে বলে ইহাকে ঊয়ঁরঃধনষব ঝবঃ ড়ভভ বলা হয়।
পাথক্য:
ক্র:নং    পার্থক্যের বিষয়    খবমধষ ঝবঃ ড়ভভ    ঊয়ঁরঃধনষব ঝবঃ ড়ভভ

১    সংজ্ঞাগত পার্থক্য    ঈচঈ ঙৎফবৎ ৮ জঁষব ৬ এর উল্লেখিত ঝবঃ ড়ভভ কে খবমধষ ঝবঃ ড়ভভ বলা হয়।    চ্যান্সেরী কোট কর্তৃক উদ্ভুত ঝবঃ ড়ভভ কে ঊয়ঁরঃধনষব ঝবঃ ড়ভভ বলা হয়।

২    আইনগত ভিত্তি    সেট অফ হিসাবে দাবিকৃত অর্থ আইনগতভাবে আদায়যোগ্য হতে হবে এবং তামাদির মেয়াদ দ্বারা বারিত হতে পারবে না।        পক্ষদ্বয়ের মধ্যে আস্থাভাজন সম্পর্ক থাকলে তামাদি মেয়াদ উত্তীর্ণ হলেও বিবাদীকে ইকুটেবল সেট অফ এর সুযোগ দেয়া যেতে পারে।

৩    দাবীর পরিমান    নির্দিষ্ট অংকের অর্থের জন্য।    অনির্দিষ্ট অংকের অর্থের জন্যও হতে পারে।

৪ ) অধিকারের প্রশ্নে: অধিকার হিসাবে দাবি করা যেতে পারে।    অধিকার হিসাবে দাবি করা যায় না।

৫ ) অস্বীকারের প্রশ্নে :  আদালত উক্ত দাবি গ্রহনপূবক বিচার করতে বাধ্য।    আদালত উক্ত দাবির বিচার করতে অস্বীকার করার চরম ক্ষমতা রয়েছে।

৬ ) কোর্ট ফি:    কোর্ট ফি প্রয়োজন।    কোর্ট ফি প্রয়োজন নেই।



খ)
রিসিভারের সংজ্ঞা:
রিসিভার নিয়োগ হল আদালতের একটি ডিসক্রিশনারি ক্ষমতা বা সুবিবেচনা প্রসুত ক্ষমতা। আদালত ইহা সুনির্দিষ্ট প্রতিকারের অংশ হিসেবে মামলার যে কোন পক্ষের প্রার্থনার প্রেক্ষিতে রিসিভার নিয়োগ করে থাকেন তবে নিয়োগের ক্ষেত্রে তিনি বাধ্য নন।
রিসিভার কি তার সংজ্ঞা আইনে দেওয়া হয়নি। সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন,১৮৭৭ এর ৪৪ ধারায় সুনির্দিষ্ট প্রতিকার দেওয়ার জন্য অন্যতম প্রতিকার হিসেবে রিসিভার নিযোগ করার কথা বলা হয়েছে এবং নিয়োগ প্রাপ্ত রিসিভারের দাযিত্ব কর্তব্য কি হবে বা তার অধিকার কি হবে ইত্যাদি বিষয়গুলো দেওয়ানী কার্যবিধি ,১৯০৮ এর ৪০ আদেশে বলা হয়েছে।
তবে আমরা যদি রিসিভার এর সংজ্ঞা দিতে চাই তাহলে বলা যায় রিসিভার হল এমন একজন তৃতীয় ব্যক্তি যিনি মামলার পক্ষদের বাইরে আদালতের কর্তৃক নিযুক্ত হয়ে মামলার পক্ষদের পক্ষে আদালতের নির্দেশে মামলা নিস্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত মামলার জমি বা অন্য কোন বিষয় বস্তুর শাসন,সংরক্ষন বা দেখাশোনা করে থাকেন।
কখন রিসিভার নিয়োগ দেওয়া যায়:
রিসিভার নিয়োগের ক্ষমতা আদালতের সুবিবেচনা প্রসূত ক্ষমতা যা সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন,১৮৭৭ এর ৪৪ ধারা অনুযায়ী আদালত প্রয়োগ করে থাকে। কিন্তু কখন কি প্রয়োজনে রিসিভার নিয়োগ করবেন বা রিসিভারের দায়িত্ব কর্তব্য বা অধিকার কি হবে ইত্যাদি বিষয়গুলো সম্পর্কে বিধান দেওয়া হয়েছে দেওয়ানী কার্যবিধি আইন ১৯০৮ এর ৪০ অর্ডারে। এই অর্ডারের বিধি ১ এ বলা হয়েছে যে, মামলা চলাকালীন কিংবা মামলা ডিক্রি হওয়ার পর কোন প্রয়োজনে আদালত রিসিভার নিয়োগ করতে পারেন।
কিভাবে এবং কখন রিসিভার এর নিয়োগ বাতিল করা যায়:
রিসিভার নিযুক্তি বাতিল করণ:
বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য রিসিভার নিয়োগ করা হলেও নি¤œলিখিত কতিপয় পরিস্থিতিতে রিসিভার নিয়োগ বাতিল করা যায়-
১) মেয়াদ:যে ক্ষেত্রে কোন মামলার রায় না দেওয়া পর্যন্ত রিসিভার নিযুক্ত করা হয়, সে ক্ষেত্রে আদালক কর্তৃক রায় ঘোষনার সাথে সাথে রিসিভার নিযুক্ত বাতিল হয়ে যায়।
২) আপোষ:মামলার পক্ষসমূহের মধ্যে আপোষ রফা কিংবা চুড়ান্ত নিস্পত্তির পর মামলার পরিসমাপ্তি ঘটলে রিসিভারের নিযুক্তি বাতিল হয়ে যায়।[হীরালাল পটনী বণাম লোনকরণ সেথিয়া]
৩) দায়িত্ব:রিসিভারের দায়িত্বের অবসান ঘটামাত্রই তার নিযুক্তি কালের পরিসমাপ্তি ঘটে।
৪) কর্তব্যে অবহেলা:রিসিভারকে যে দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে ,সে দায়িত্বে অবহেলা করলে কিংবা ইচ্ছাকৃত ভুল করলে তার নিযুক্তি বাতিল করা যায়। শুধু তাই নয়, দ্য কোড অভ সিভির প্রসিডিউর ,১৯০৮ এর ৪০ আদেশের ৪ বিধি অনুসারে ইহা শাস্তিযোগ্যও বটে।
পরিশেষে উপরোক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, বিশেষ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য আদালত কর্তৃক রিসিভার নিযুক্ত করা হয় এবং উক্ত উদ্দেশ্য সাধিত হলে রিসিভার নিযুক্তির অবসান ঘটে।
রিসিভিার প্রত্যাহার:
আদালত একজন রিসিভার নিয়োগের ক্ষেত্রে যেরুপ ক্ষমতাবান ,অনুরুপভাবে তিনি রিসিভার প্রত্যাহার করার ব্যাপারেও ক্ষমতাবান বটে। যে সকল কারণে রিসিভার প্রত্যাহার করা যায় তা নি¤œরুপ-
১) আদেশ অমান্য:আদালতের আদেশকে কোন রিসিভার অমান্য করলে তাকে প্রত্যাহার বা  অপসারণ করা যায়।[অওজ ১৯৪১,ঈধষ.১৪৪]
২) হিসাব দাখিলে ব্যর্থতা: আদালতের আদেশকে অমান্য করে যদি কোন রিসিভার হিসাব দাখিল না করেন, তবে তাকে অপসারণ করা যায়।[৮৬ ও.ঈ.২৪৬]
৩) অযোগ্যতার কারণে:অযোগ্যতার কারণে একজন রিসিভারেকে অপসারণ বা প্রত্যাহার করা যেতে পারে।[১৯৩১ অষষ.৭২ উই]
উক্ত বর্ণিত বিভিন্ন কারণে রিসিভারকে অপসারণ বা প্রত্যাহার করা যায়। আদালত তার সহজাত এখতিয়ার প্রয়োগ করে রিসিভার প্রত্যাহার করতে পারে।
রিসিভার নিয়োগের জন্য আরজিতে প্রার্থনা করার দরকার আছে কিনা:
রিসিভার নিযোগ আদালতের একটি সুবিবেচনা প্রসুত ক্ষমতা। এটা আদালতের উপর নির্ভর করে যে তিনি নালিশি সম্পত্তি বিরোধ নিস্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তৃতীয় কোন ব্যক্তির দখলে অর্পন করবেন কিনা। রিসিভার নিয়োগের প্রশ্নটি তখনই আসে যখন নারিশি সম্পত্তি নিয়ে মামলার উভয় পক্ষই বিরোধে জড়িয়ে পড়ে এবং নিজ নিজ দখলে আছে বলে আদালতের কাছে জোড়ালো দাবি জানায় এবং নালিশি সম্পত্তি ঠিক কার দখলে আছে আদালত যদি দৃশ্যমানভাবে অনুমান করতে বা বুঝতে না পারেন বা কোন পক্ষ যদি নিজ দখলের পক্ষে উপযুক্ত প্রমান দাখিল করতে না পারে বা উভয় পক্ষই এমন কোন দলিল উপস্থাপন করেন যা থেকে আপত: দৃষ্টিতে উভয়েরই দখল আছে বলে আদালত মনে করেন তখন নালিশি সম্পত্তি নিয়ে পক্ষদেরমধ্যে খুন খারাপি না হয় তজ্জন্য আদালত নালিশি সম্পত্তির দখল ভিন্ন কোন ব্যক্তির হাতে অর্পন করেন যতক্ষন না বিরোধের সুষ্টু এবং চুড়ান্ত নিস্পত্তি হয়। রিসিভার নিয়োগের বিষয়টি আরর্জিত প্রার্থনা করার দরকার নেই। মামলা দাখিলের পর পৃথক দরখাস্ত দাখিল করে তবেই রিসিভার নিয়োগের প্রার্থনা জানাতে হবে। সেই দরখাস্তে রিসিভার নিয়োগের যৌক্তিকতা এবং প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরতে হবে। আদালত সন্তোষ্টি হলে তবে রিসিভার নিয়োগ করে নালিশি সম্পত্তি রক্ষা করার চেষ্টা করবেন।


রিসিভারের ক্ষমতা, কতব্য এবং দায়িত্ব:
রিসিভারের ক্ষমতা:
দেওয়ানী কার্যবিধির ৪০ আদেশের ১(১-ঘ) নিয়মে রিসিভারের ক্ষমতার উৎস সম্পর্কে বিধান বর্ণিত হয়েছে। বিধি ১(১-ঘ) অনুযায়ী রিসিভারকে বিরোধীয় সম্পত্তি প্রসঙ্গে মামলা দায়ের করা ও মামলায় জবাব দেয়া ,সম্পত্তিটি হস্তগত করা, ব্যবস্থাপনা করা, উহার সংরক্ষন ও উন্নয়ন করা,খাজনা ও মুনাফা আদায় করা এবং উক্ত খাজনা ও মুনাফা বাবদ প্রাপ্ত অর্থ যথাবিহিত ব্যয় ও বিলিবন্টন করার ব্যাপারে সম্পত্তি মালিকের অনুরুপ ক্ষমতা অথবা আদালত যেরুপ উপযুক্ত মনে করেন,তদ্রুপ ক্ষমতা অর্পন।
সুতরাং আদালত কর্তৃক ব্যক্ত ও অব্যক্তভাবে অর্পিত ক্ষমতা ছাড়া রিসিভারের অন্য কোন ক্ষমতা নেই।
রিসিভারের কর্তব্য ও দায় দায়িত্ব:
রিসিভারের কর্তব্য:
রিসিভারের কর্তব্য দেওয়ানী কার্যবিধির ৪০ আদেশের ৩ বিধিতে বিধান বর্ণিত হয়েছে। বিধি ৩ অনুযায়ী
আদালত কর্তৃক নিযুক্ত রিসিভারকে  নি¤œরুপ কার্যাবলী সম্পন্ন করতে হবে:
ক) সম্পত্তি বাবত প্রাপ্ত আয়ের যথাযথ হিসাব দানের জন্য আদালত কর্তৃক নির্ধারিত জামানত দাখিল;
খ) আদালত কর্তৃক নির্ধারিত ফরমে নির্দিষ্ট সময়ে হিসাব দাখিল;
গ) আদালতের নির্দেশ মত তাহার নিকট হতে পাওনা টাকা পরিশোধ এবং
ঘ) রিসিভারের স্বেচ্ছাকৃত ক্রটি অথবা গুরুতর অবহেলার দরুন সম্পত্তির কোন ক্ষতি হলে সেজন্য দায়ী হওয়া।

রিসিভারের দায়িত্ব সমূহ:
রিসিভারের দায়িত্ব সম্পর্কে দেওয়ানী কার্যবিধির ৪০ আদেশের ৪ বিধিতে বিধান বর্ণিত হয়েছে।  বিধি ৪ অনুযায়ী  রিসিভার যদি-
ক) আদালতের নির্ধারিত ফরমে ও নির্দিষ্ট সময়ে হিসাব দাখিল করতে অপারগ হয়,অথবা
খ) তাহার নিকট হতে পাওনা টাকা পরিশোধ করতে অপারগ হয়,অথবা
গ) রিসিভারের স্বেচ্ছাকৃত ক্রটি বা গুরুতর অবহেরার দরুন সম্পত্তির ক্ষতি সাধিত হয়, তবে আদালত তার সম্পত্তি ক্রোক করার নির্দেশ দিতে পারবেন, উক্ত সম্পত্তি বিক্রয় করতে পারবেন এবং বিক্রয় লব্ধ অর্থ দ্বারা উক্ত পাওনা পরিশোধ বা ক্ষতিপুরণের পর অবশিষ্ট টাকা (যদি থাকে)রিসিভারকে প্রদান করবেন।
উপরোক্তভাবে একজন রিসিভারের কর্তব্য ও দায়িত্বসমূহ আলোচনা করা যায়।

রিসিভার নিয়োগের আদেশ কি আপীলযোগ্য:
দেওয়ানী আদালতের কোন কোন আদেশের বিরুদ্ধে আপীল করা যায় তার বর্ণনা দেওয়ানী কার্যবিধির ১০৪ ধারায় এবং ৪৩ আদেশের ১ বিধিতে বর্ণনা করা হয়েছে। ৪৩ আদেশের বিধি ১(ধ) অনুযায়ী বলা হয়েছে যে ৪০ আদেশের  বিধি ১ বা বিধি ৪ অনুসারে প্রদত্ত আদেশ আপীল যোগ্য।
[অওজ ১৯৭১ গুংড়ৎব ২৫৮ ] মোকদ্দমায় সিন্ধান্ত হয় যে, রিসিভার নিয়োগ করার আদেশ কিংবা নিয়োগ করতে অস্বীকার করার আদেশ আপিলযোগ্য।
কর্তব্য অবহেলার জন্য রিসিভারের দন্ড কি:
রিসিভারকে যে দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে ,সে দায়িত্ব অবহেলা করলে কিংবা ইচ্ছাকৃতভুল করলে তার নিযুক্তি বাতিল করা যায় । শুধু তাই নয়, দ্য কোড অভ সিভির প্রসিডিউর ,১৯০৮ এর ৪০ আদেশের ৪ বিধি অনুসারে ইহা শাস্তিযোগ্যও বটে।
রিসিভারের অধিকার:
১)    রিসিভার হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর নালিশি সম্পত্তি দখল,হেফাজত এবং যথাযথ ব্যবস্থাপনা তিনি দাবিদার হবেন।
২)    রিসিভার নালিশি সম্পত্তির তত্ত্বাবধান করার জন্য পারিশ্রমিক পাবেন।


প্রশ্ন-৬ রিভিশন বলতে কি বুঝ? রিভিশনের জন্য সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের দরখাস্ত দাখিল করা যায় কি? কি কি বিভিন্ন কারণে বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্টবিভাগে রিভিশনের জন্য আবেদন করা যায়? কিভাবে রিভিশন হতে রিভিউ ভিন্নতর? হাইকোর্ট বিভাগে দেওয়ানী কার্যবিধির ১১৫ ধারার অধীনে ইহার পর্যালোচনামূলক এখতিয়ার প্রয়োগ করতে গিয়ে কি নি¤œ আদালতের আইনি সিন্ধান্তের সব ক্ষেত্রেই হস্তক্ষেপ করতে পারে?
রিভিশন (জবারংরড়হ):
রিভিশন হলো উচ্চতর আদালত কর্তৃক নি¤œ আদালতের বা উচ্চতর আদালত কর্তৃক অধ:স্তন আদালতের রায় ডিক্রি বা আদেশের দ্বারা সংক্ষুব্ধ পক্ষের পার্থনার প্রেক্ষিতে ঐ রায়,ডিক্রি বা আদেশের আইনগত বিষয়ে পুনঃনিরীক্ষণ অর্থাৎ প্রদত্ত রায় ,ডিক্রি বা সিন্ধান্ত আইনানুগভাবে প্রদান করা হয়েছে কিনা। রিভিশন সংক্রান্ত সকল বিধান দেওয়া হয়েছে দ্য কোড অভ সিভিল প্রসিডিউর,১৯০৮ এর ১১৫ ধারায়। ঐ ধারা বিশ্লেষণ করলে আমরা দেখতে পাই যে,সহকারি জজ,সিনিযর সহকারি জজ এবং যুগ্ন জেলা জজ আদালতের কোন আদেশ দ্বারা যদি কেউ সংক্ষুব্ধ হয় তাহলে উপরোক্ত ধারায় জেলা জজ আদালতে রিভিশন দরখাস্ত দায়ের করা যায় শুধুমাত্র ১০ টাকা কোর্ট ফিস দিয়ে। রিভিশন দরখাস্ত দায়ের করার কোন সময়সীমা তামাদি আইনে তফসিলে দেওয়া হয়নি।
হাইকোর্ট অথবা জেলা জজ আদালতের অধস্তন আদালত এমন কোন ভুল করলে যা মোকদ্দমার নথি হইতে সহজে প্রতীয়মান হয় সে সকল ক্ষেত্রে হাইকোর্ট অথবা জেলাজজ ঐ সকল নথি তলব করে যে কোন আদেশ প্রদান করতে পারেন তবে এইরুপ রুল আপীলযোগ্য নহে এবং সকল সময় আইনগত ভুল হতে হবে ইহাকে রিভিশন বলা হয়। জেলা জজ যদি তার রিভিশন ক্ষমতা প্রয়োগে এমন কোন ভুল করে থাকে যার দ্বারা সুবিচার ব্যাহত হয় তবে সে ক্ষেত্রে হাইকোর্ট বিভাগের নিকট রিভিশন করা যাবে। তবে যেখানে আপীল করা যায় না সেক্ষেত্রে রিভিশন করা যায়।
রিভিশনের জন্য সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে দরখাস্ত:
হ্যাঁ,দেওয়ানী কার্যবিধির ১১৫ ধারা মোতাবেক, কোন মোকদ্দমার রিভিশনের জন্য সুপ্রীমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে দরখাস্ত দাখিল করা যায়।
যেসকল কারণে হাইকোর্টে রিভিশন দায়ের করা যায়:
শুধুমাত্র ৩টি কারণে হাইকোর্ট বিভাগে রিভিশন দরখাস্ত করা যায়।
প্রথমত,জেলা জজ আদালত বা অতিরিক্ত জেলা জজ কর্তৃক প্রদত্ত কোন আদেশ দ্বারা সংক্ষুব্ধ কোন পক্ষকে রিভিশন দায়ের করতে হবে সুপ্রীমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে।
দ্বিতীয়ত, দেওয়ানী আদালতের কোন সিন্ধান্তের বিরুদ্ধে জেলা জজ আদালতে রিভিশন দায়ের হলে এবং জেলা জজ এর রিভিশন দরখাস্তে প্রদত্ত সিন্ধান্ত দ্বারা কেউ সংক্ষুব্ধ হলে হাইকোর্ট বিভাগের অনুমতি নিয়ে তবেই কেবল হাইকোর্টে রিভিশন দায়ের করা যাবে।
তৃতীয়ত, দেওয়ানী আদালতের কোন রায বা ডিক্রির বিরুদ্ধে জেলা জজ আদালতে আপীল হলে কোন পক্ষ আপীলে প্রদত্ত সিন্ধান্ত দ্বারা যদি সংক্ষুব্ধ হয় তাহলে ঐ সিন্ধান্তকে চ্যালেন্স করতে চাইলে রিভিশন আকারে চ্যালেন্স করতে হবে কেননা, বর্তমানে দ্বিতীয় আপীলের বিধান নেই। একবার আপলি হলে পরে উহা চ্যালেন্স করতে চাইলে রিভিশন আকারে করতে হয় হাইকোর্ট বিভাগে।
রিভিশন ও রিভিউ এর মধ্যে পার্থক্য:
রিভিউ ও রিভিশনের মধ্যে অনেক প্রভেদ লক্ষ্য করা যায। সেগুলো হলো-
১) আইনগত পার্থক্য:দ্য কোড অফ সিভির প্রসিডিউর,১৯০৮ এর ১১৫ ধারায় রিভিশন সম্পর্কিত বিধান দেওয়া হয়েছে এবং রিভিউ সম্পর্কিত বিধানগুলো দেওয়া হয়েছে একই কোডের ১১৮ ধারায় এবং অর্ডার ৪৭ এ।
২) কারনগত পার্থক্য:রিভিউ দায়ের করতে হয় যেখানে আপিলের বিধান আছে কিন্তু আপীল করা হয়নি বা যেখানে আপীলের বিধান নাই সেখানে অথবা মামলা বিচারে উপস্থাপিত হয়নি এমন সাক্ষ্য বা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা রায়ের পর বা আদেশ প্রদানের উদঘাটন হলে বা মামলার নথিতে দৃশ্যমান কোন ভুল পরিলিক্ষিত হলে বা অন্য কোন কারণে। কিন্তু রিভিশন দায়ের হয় মূলত রায় বা ডিক্রিতে আইনগত কোন ক্রটি পরিলক্ষিত হলে।
৩) দায়েরের স্থানগত পার্থক্য:রিভিশন সবসময় উচ্চ আদালতে দায়ের করতে হয় কিন্তু রিভিউ সবসময় রায় ডিক্রি বা আদেশ প্রদানকারি আদালতেই দায়ের করতে হয়।
৪) সময়গত পার্থক্য: রিভিশন দরখাস্ত দায়ের সুনির্দিষ্ট কোন সময় তামাদি আইনের প্রথম তফসিলের তৃতীয় কলামে উল্লেখ করা হয়নি কিন্তু রিভিউ দরখাস্ত তামাদি আইনের প্রথম তফসিলের ১৭৩ নং অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রায়,ডিক্রি বা আদেশের ৯০ দিনের মধ্যে দায়ের করতে হয়।
৫) ফলাফলগত পার্থক্য:রিভিউ ও রিভিশন উভয ক্ষেত্রে প্রদত্ত রায়,ডিক্রি বা আদেশ পরিবর্তিত, পরিমার্জিত বা বাতিল হতে পারে।
৬) প্রকৃতিগত পার্থক্য:রিভিশন সিভিল এবং ক্রিমিনাল উভয় মামলায় রায়,ডিক্রি বা আদেশের ক্ষেত্রে হতে পারে কিন্তু রিভিউ শুধুমাত্র দেওয়ানি মামলার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। তবে ইদানিং আন্তজার্তিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মামলার ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রাযের সংক্ষুব্ধ কোন পক্ষ ঐ রাযের রিভিউ দরখাস্ত করতে পারবে বলে আপিল বিভাগ এর সিন্ধান্ত দিয়েছেন।
১১৫ ধারার দেওয়ানী আদালতের উপর হাইকোর্ট বিভাগ এর পর্যালোচনামূলক এখতিয়ার প্রয়োগ:
হাইকোর্ট বিভাগ দ্য কোর্ড অব সিভিল প্রসিডিউর,১৯০৮ এর ১১৫ ধারার ক্ষমতা প্রয়োগ করতে গিয়ে অধ:স্তন আদালতের আইনি সিন্ধান্তের সবকিছু বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারবে না শুধুমাত্র যে সব রায়,ডিক্রি বা আদেশের বিরুদ্ধে রিভিশন হবে সেই সকল বিষয়েই কেবল হস্তক্ষেপ করতে পারবে।


প্রশ্ন-৭
ক) রায়,ডিক্রি ও আদেশের সংজ্ঞা দাও এবং এদের মধ্যে পার্থক্য লিখ। রায় পূর্ববর্তী ও রায় পরবর্তী ক্রোক বলতে কি বুঝ? মূল ডিক্রির বিরুদ্ধে কিভাবে আপীল করা যায় ব্যাখ্যা কর। কোন কোন ক্ষেত্রে দেওয়ানী আদালত রাযের পূর্বে ক্রোকের আদেশ দিতে পারেন? ক্রোকের বিরুদ্ধে আপত্তি থাকলে মামলার পক্ষভূক্ত ব্যক্তি এবং পক্ষভূক্ত নয় এমন ব্যক্তির পক্ষে আদালতের কিকি প্রতিকার আছে? কখন কোন অবস্থায় মামলা প্রত্যাহার করা যায়না এবং মামলা প্রত্যাহারের ফলাফল কি?
খ) বিকল্প বিরোধ নিস্পত্তি বলতে কি বুঝ? কি কি পদ্ধতিতে মোকদ্দমা বিকল্প বিরোধ নিস্পত্তি হতে পারে? দেওয়ানী কার্যবিধি আইনের অধীনে বিকল্প বিরোধ নিস্পত্তি আলোচনা কর। মধ্যস্থতার প্যানেল কে মনোনীত করেন এবং মধ্যস্থতাকারীর যোগ্যতা সমূহ কিকি? মধ্যস্থতার মাধ্যমে ঘোষিত ডিক্রির বিরুদ্ধে আপীল বা রিভিশন চলে কি? তুমি কি মনে কর যে, আদালত সংশ্লিষ্ট এডিআর ব্যবস্থা বিচারাধীন মামলার আধিক্য কমাইতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ?
রায়:
দ্য কোড অভ সিভিল প্রসিডিউর,১৯০৮ এর ২(৯) ধারায় রায়ের সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে যে,
রায় বিচারক কর্তৃক ডিক্রি বা আদেশ প্রদানের ভিত্তি বর্ণনা।
দ্য কোড অভ সিভিল প্রসিডিউর,১৯০৮ এর ৩৩ ধারায় বলা হয়েছে যে,সাধারনত মামলার শুনানীর পর আদালত রায় ঘোষণা করবেন এবং রায়ের ভিত্তিতে ডিক্রি প্রদান করা হবে। একটি রায়ে যে সকল বিষয় অন্তর্ভূক্ত থাকে তা হল:
১।  মামলার একটি সংক্ষিপ্ত বিবৃতি
২। যে সকল বিষয় নিয়ে বিচার কার্য় পরিচালনা করা হয়েছে তা।
৩।  বিচারকাজ শেষ হয়ার পর যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে তা
৪।  এবং কেন বা কোন আইনের দ্বারা এ সিদ্ধান্ত  নেওয়া হয়েছে তার বর্ননা

আদেশ:
কোড অভ সিভিল প্রসিডিউল ,১৯০৮ এর ২(১৪) ধারা অনুসারে ’আদেশ’(ঙৎফবৎ)বলতে দেওয়ানী আদালতের এমন কোন সিন্ধান্তের আনুষ্ঠানিক প্রকাশ যা ডিক্রি নহে। আদালত একটি মামলার বিভিন্ন পর্যায়ে পক্ষদের আবেদনের প্রেক্ষিতে মঞ্জুর বা না মঞ্জুর করে যে সিন্ধান্ত দেন তাকে’আদেশ’ বলে অথবা বিরোধীয় কোন বিষয়ে অধিকার নির্ণয় করে সর্বশেষ যে সিন্ধান্ত দেন তাকেও ’আদেশ ’বলে।
উদাহরণ স্বরুপ বলা যায় নিষেধাজ্ঞার আবেদনের প্রেক্ষিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া বা না দেওযা বিষয়ে আদালতে যে সিন্ধান্ত দেন তাকে ’আদেশ’ বলে। মামলার মূলতবী চেয়ে আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত যে সিন্ধান্ত দেন তাকে’আদেশ’ বলে অথবা অগ্রক্রয়ের যদি সিন্ধান্ত দেন তাকেও আদেশ বলে।
ডিক্রি:
কোড অভ সিভিল প্রসিডিউর ,১৯০৮ এর (২(২) ধারা মতে ডিক্রি বলতে কোন মামলার বিচার নিম্পন্ন করার পর আদালতের আনুষ্ঠানিক সিন্ধান্তকে বোঝায় যা মামলাটির সকল বা যে কোন একটি বিতর্কিত বিষয়ের উপর পক্ষগনের অধিকার চুড়ান্তভাবে নির্ধারণ করে। এই ডিক্রি চুড়ান্ত বা প্রাথমিক হতে পারে। আরর্জি প্রত্যাখান (জবলবপঃরড়হ ড়ভ ঢ়ষধরহঃ) এবং ১৪৪ ধারায় বর্ণিত কোন প্রশ্ন নির্ধারণ ও ইহার অন্তভূক্ত করে তবে নি¤œলিখিত ইহার অন্তভূক্ত হবে না-
যে বিচার নিস্পন্ন সিন্ধান্তের (ধফলঁফরপধঃরড়হ) বিরুদ্ধে আদেশের মতই আপীল করা যায;
কোন ক্রটির জন্য মামলার খারিজের আদেশ;
একটি ডিক্রিকে তখনই প্রাথমিক ডিক্রি বলা হয় যার ভিত্তিতে মামলাটির চুড়ান্ত নিস্পত্তির জন্য আরও কার্যক্রম গ্রহন করার প্রয়োজন পড়ে। আর চুড়ান্ত ডিক্রি বলতে বুঝায় যে বিচার নিস্পন্নের ভিত্তিতে মামলাটি পুরোপুরি নিস্পত্তি করা যায় এবং অধিকতর আর কোন ব্যবস্থা গ্রহনের প্রয়োজন পড়ে না। যেমন, বাটোয়ারার মামলায় পক্ষদের অংশ নির্ধারণ করে আদালত যে রায় দেন তা প্রাথমিক ডিক্রি এবং এই রাযের ভিত্তিতে সিভির কোর্ট কমিশনার সরেজমিনে তদন্ত করে রায়ের গর্ভে বর্ণিত সিন্ধান্ত অনুযায়ী যখন অংশানুসারে ভু-সম্পত্তি গুনাগুনের ভিত্তিতে পক্ষদের মধ্যে বন্টন করে যে রিপোর্ট দেন এবং তার ভিত্তিতে আদালত সে সিন্ধান্ত দেন তাকে চুড়ান্ত ডিক্রি বলে।
রায়,ডিক্রি ও আদেশের মধ্যে পার্থক্য:
প্রথমত,প্রত্যেক ডিক্রি আপীল যোগ্য। কিন্তু সকল আদেশ আপিলযোগ্য নয়। শুধুমাত্র ১০৪ ধারায় এবং ৪৩ অর্ডারের ১ বিধিতে নির্দিষ্ট বিষয়ে প্রদত্ত আদেশ আপীলযোগ্য।
রায় যেহেতু ডিক্রি বা আদেশ প্রদানের জন্য জজ বা বিচারক কর্তৃক প্রদত্ত বিবরণী তাই ডিক্রি প্রদানকারী রায় আপীলযোগ্য এবং উপরে উল্লেখিত ব্যতিক্রম ছাড়া অন্যান্য আদেশ প্রদান কারী রায় আপীল যোগ্য নয়।
 দ্বিতীয়ত,একটি ডিক্রি দ্বারা পক্ষ সমূহের অধিকার চুড়ান্তভাবে নির্ণয় করে। কিন্তু আদেশ দ্বারা পক্ষ সমূহের অধিকার চুড়ান্তভাবে নির্ধারণ করতে পারে আবার নাও পারে। রায়ে সব রকম থাকতে পারে। ডিক্রি সম্বলিত রায়ে ডিক্রির বৈশিষ্ট্য থাকে এবং আদেশের রায়ে আদেশের বৈশিষ্ট্য থাকে।
তৃতীয়ত, ডিক্রির শ্রেণী বিভাগ হিসেবে মূলত: প্রাথমিক ডিক্রি ও চুড়ান্ত ডিক্রি দেখা যায়। আদেশের ক্ষেত্রে এরুপ শ্রেণী বিভাগ নেই। আদেশের ক্ষেত্রে আপীলযোগ্য নেই। আদেশের ক্ষেত্রে আপীল যোগ্য এবং অঅপীলযোগ্য আদেশ দেখা যায়। রাযের ক্ষেত্রে এরুপ শ্রেণী বিভাগ দেখা যায় না।
চতুর্থত,রায় হলো আদালতের সিন্ধান্তের বা ডিক্রির মূল ভিত্তি। কিন্তু ডিক্রি এবং আদেশ হলো আদালতের চুড়ান্ত সিন্ধান্ত।
পঞ্চমত,ডিক্রির সাথে রায়ের সামঞ্জন্য থাকতে হবে,কিন্তু আদেশের সাথে রায়ের সামঞ্জ্যের প্রযোজন হয় না।
ষষ্ঠত,সাক্ষী প্রমানের উপর ভিত্তি করে রায় প্রদান করা হয়। কিন্তু রায়ের উপর ভিত্তি করে ডিক্রি বা আদেশ দেয়া হয়।
রায় পূর্ববর্তী ও রায় পরবর্তী ক্রোক:
ক্রোক শব্দের কোন সংজ্ঞা আইনে দেওয়া হযনি। তবে আমরা নিজেরাই যদি এই শব্দের সংজ্ঞা দিতে যাই তাহলে বলা যায় ক্রোক হলো আদালতের এমন এক ধরণের আদেশ যার দ্বারা বিরোধিয় সম্পত্তির হস্তান্তর,বেচাবিক্রি বা যাবতীয় ধরণের হস্তান্তর নিষিদ্ধ করা হয়। যে সম্পত্তির উপর এই ক্রোকাদেশ আরোপ করা হবে উহার মালিক আদালতের পরবর্তি নির্দেশ দ্বারা ঐক্রোকাদেশ বাতিল করা না পর্যন্ত ঐ সম্পত্তির কোন হস্তান্তর করতে পারবেন না যদি করেন তা বেআইনি বলে গন্য হবে যার আইনগতভাবে কোন মূল্য থাকবে না।
বিরোধিয় সম্পত্তি মামলার পক্ষদের প্রার্থনার প্রেক্ষিতে মামলা চলাকালীন বা মামলার নিস্পত্তি হওয়ার পর আদালত ক্রোক করতে পারে। ক্রোকের এই বিধান গুলো দেওয়া হয়েছে দ্য কোড অভ সিভির প্রসিডিউর ,১৯০৮ এর ৬০ ধারায় যেখানে বলা হয়েছে কোন কোন সম্পত্তি ক্রোক করা যাবে আর কোন কোন সম্পত্তি ক্রোক করা যাবে না। রায়ের পর ক্রোক কিভাবে করতে হবে তার যাবতীয় বিধান গুলো দেওয়া হয়েছে দ্য কোড অভ সিভির প্রসিডিউর,১৯০৮ এর ২১ অর্ডারের ৪১ বিধি থেকে ৬৪ বিধি পর্যন্ত এবং রাযের পূর্বে কিভাবে সম্পত্তি ক্রোক করা যাবে বা কার সম্পত্তি ক্রোক করা যাবে বা কোন কোন সম্পত্তি করা যাবে তা বলা হয়েছে একই কোডের অর্ডার ৩৮ এর ৫ থেকে ১৩ বিধিতে।

কোন কোন ক্ষেত্রে দেওয়ানী আদালত রাযের পূর্বে ক্রোকের আদেশ দিতে পারেন:
হলফনামা বা অন্য কোন ভাবে আদালত যদি সন্তুষ্ট হয় যে, ডিক্রি প্রদান করা হলে বিবাদি উহা জারিকরণে বাধা প্রদান করতে পারে বা জারিকরণ বিলম্বিত করার উদ্দেশ্যে তাহার সম্পত্তির সমগ্র বা উহার কোন অংশ হস্তান্তর করার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে বা আদালতের স্থানীয় সীমা হতে তাদের সমগ্র সম্পত্তি বা উহার কোন অংশ অপসারণের পদক্ষেপ গ্রহন করেছে তখন আদালত উক্ত সম্পত্তির সমগ্র বা কোন অংশ ক্রোকের আদেশ দিতে পারেন।
ক্রোকের বিরুদ্ধে আপত্তি থাকলে মামলার পক্ষভূক্ত ব্যক্তি এবং পক্ষভূক্ত নয় এমন ব্যক্তির পক্ষে আদালতের কিকি প্রতিকার আছে:
রায়ের পূর্বে ক্রোক করা হলে পক্ষভূক্ত ব্যক্তি উহার বিরুদ্ধে লিখিত আপত্তি দাখিল করে আদালতকে অবহিত করতে পারেন যে, কোন তর্কিত সম্পত্তি রায়ের পূর্বে ক্রোকযোগ্য হবে না। আদালত সন্তুষ্ট হলে ক্রোকের আদেশ প্রত্যাহার করতে পারেন। এছাড়া উক্ত ব্যক্তি হাজির হয়ে জামানত দাখিল করলে বা আদালতের সন্তুষ্টি মোতাবেক একটি নির্দিষ্ট পরিমান টাকা জমা দিলে আদালত আবার আদেশটি প্রত্যাহার করতে পারেন।
ক্রোককৃত সম্পত্তির মালিক কোন আগন্তুক বা তৃতীয় পক্ষ হলে রায়ের পূর্বে ক্রোক হওয়া সত্বেও তার অধিকারে কোন প্রভাব ফেলবে না। দ্য কোড অভ সিভিল প্রসিডিউর,১৯০৮ এর ৩৮ আদেশের ১০ বিধিতে এইরুপ বিধান করা হয়েছে। এমনকি ক্রোককৃত সম্পত্তি বিক্রয় করা হলেও উক্ত বিক্রয় তার অধিকারে প্রভাব ফেলবে না।
কখন কোন অবস্থায় মামলা প্রত্যাহার করা যায়:
মামলা দায়ের হওয়ার পর বাদি যেকোন সময় সকল বিবাদি বা কোন একজন বিবাদির বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার করা যায়। আদালতের নিকট যদি প্রতিয়মান হয় যে, পদ্ধতিগত ক্রটির কারণে মামলাটি ব্যর্থ হতে পারে অথবা ন্যায় বিচারের স্বার্থে আদালত দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহারের আদেশ দিতে পারেন এবং একই সাথে অন্য একটি মামলা দায়ের করিবার স্বাধীনতা দিতে পারেন। পুনরায় মামলা দাখিলের অনুমতি না নিয়ে বাদি মামলা প্রত্যাহার করলে উক্ত বিষয় বস্তু সম্পর্কে কিংবা উক্ত বিষয বস্তুও আংশিক দাবি সম্পর্কে পুনরায় মামলা দায়ের করিবার অধিকার হইতে বঞ্চিত হইবে। একাধিক বাদি থাকিলে অন্যান্য বাদীর সম্মতি ছাড়া আদালত উক্ত বাদিকে মামলা প্রত্যাহারের অনুমতি দিবেন না।
মামলা প্রত্যাহারের ফলাফল:
মামরা প্রত্যাহারের ফল হবে যে,উক্ত আদালত বাদির কোন মোকদ্দমাই নাই এবং তিনি উহা আবার দাখিল করলে তা সম্পূর্ণরুপে নতুন মামলা হবে। একটি মামলা প্রত্যাহার করে পরপর আরেকটি নতুন মামলা দায়ের করলে বাদি এমন একটি অবস্থায় অবস্থান করবেন যে, পূর্বতন মামলা মামলা দায়ের করাই হয়নি (৮ ডিএলআর ৩১১)
প্রশ্ন-৮ যে কোন চারটির পার্থক্য দেখাও।
ক) রেস-সাবজুডিস ও রেস-জুডিকেটা
রেস-সাব জুডিস ও রেস জুডিকাটা এর মধ্যে পার্থক্য:
১৯০৮ সালের দেওয়ানী কার্যবিধি আইনের ১০ ধারায় রেস সাবজুডিস এবং ১১ ধারায় রেস জুডিকেটা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। এ সকল আলোচনা পর্যালোচনা করলে রেস সাজুডিস এবং রেস জুডিকেটার মধ্যে কিছু পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়।নি¤েœ রেস সাবজুডিস এবং রেসজুডিকেটার মধ্যে পার্থক্য দেওয়া হলো:
প্রথমত,রেস সাবজুডিস এর উদ্দেশ্য হল পরবর্তী মামলাটি স্থগিত করা অপর দিকে রেস জুডিকেটা এর উদ্দেশ্য হল পুন:বিচার বন্ধ করা।
দ্বিতীয়ত,রেস সাবজুডিস সম্পর্কে ১৯০৮ সালের দেওয়ানী কার্যবিধির ১০ ধারায় বলা হয়েছে,অপরদিকে রেস জুডিকেটা সম্পর্কে ১১ ধারায় বলা হয়েছে।
তৃতীয়ত,রেস সাব জুডিস বিচারের নামে অবিচার বন্ধ করে অপরদিকে রেসজুডিকেটা নিস্পত্তিকৃত মামলাটি রায় এবং ডিক্রিকে প্রতিষ্ঠা করে।
চতুর্থত,রেস জুডিকেটা সাধারণত দুই প্রকার যথা- প্রত্যক্ষ জুডিকেটা এবং পরোক্ষ জুডিকেটা অপর দিকে রেস সাবজুডিসকে শ্রেণীভূক্ত করা যায় না।
পঞ্চমত, রেস সাবজুডিসে দুইটি মামরা বিচারাধীন থাকতে হয়। একটি পূর্বে দায়েরকৃত এবং অন্যটি পরে দায়েরকৃত। পক্ষান্তরে রেস জুডিকেটায় একটি চুড়ান্তভাবে নিস্পত্তিকৃত মামলা থাকতে হয়।
উপরোক্ত এসকল পার্থক্য রেস সাজুডিসে এবং রেস জুডিকেটায় পরিলক্ষিত হয়।


খ) রিভিউ ও আপীল:
১) নিম্নে আদালতের রায়ে অসন্তুষ্ট কোন সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি উর্ধ্বতন আদালতে যে লিখিত দরখাস্ত বা যে বিচার প্রার্থনা করে তাকে আপীল বলে। অন্যদিকে কিছু নির্দিষ্ট ও নির্দেশিত অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বিচার পুনবিবেচনাকে রিভিউ বলে।
২) আপীলের অধিকার হচ্ছে আইন দ্বারা অর্জিত বাস্তবভিত্তিক অধিকার। কিন্তু রিভিউ এর অধিকার আপীলের ন্যায় আইন দ্বারা অর্পিত কোন বাস্তব ভিত্তিক অধিকার নয়।
৩) আপীলের আবেদন সকল সময় উর্ধ্বতন আদালতে পেশ করতে হয়। কিন্তু রিভিউ এর আবেদন এ্কই আদালতে পেশ করা হয়।
৪) আপীল আদালত একই সঙ্গে আইন ও তথ্য উভয় প্রশ্নের নিস্পত্তি করতে পারে। পক্ষান্তরে, আইন ছাড়াও নতুন কোন তথ্য উদঘাটন হলে রিভিউ এর ক্ষেত্রে তা বিবেচনা করা হয়।
৫) ৯৬ থেকে ১১২ ধারা অর্ডার ৪১ থেকে ৪৫ পর্যন্ত আপীল সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। অন্যদিকে  রিভিউ ১১৮ ধারায় অর্ডার ৪৭ রুল ১ থেকে ৯ পর্যন্ত বর্ণনা করা হয়েছে।

গ) এতরফা ডিক্রী ও দুতরফা ডিক্রী:
১) সংজ্ঞাগত পার্থক্য:মোকদ্দমা শুনানীর তারিখে বিবাদী গরহাজির থাকলে এবং বাদী হাজির থাকলে সাক্ষ্য গ্রহন করে বাদীর অনুকূলে যে ডিক্রি প্রদান করেন তাকে একতরফা ডিক্রি বলে।পক্ষান্তরে উভয় পক্ষের সাক্ষ্য প্রমানাদি গ্রহন করে আদালত যে ডিক্রি প্রদান করেন তাকে দুতরফা ডিক্রি বলে। দরফা ডিক্রি বাদীর অনুকূলে গেলে ডিক্রি বলে এবং বিবাদীর অনুকূলে গেলে খারিজের ডিক্রি বলে।
২) ধারাগত পার্থক্য: একতরফা ডিক্রি অর্ডার ৯ রুল ১৩ পক্ষান্তরে দু’তরফা ডিক্রি সুনির্দিষ্ট কোন ধারার উল্লেখ নাই।
৩) বৈধতার প্রশ্নে: উভয় ডিক্রি আইনানুগভাবে বৈধ বলে গন্য হবে।
৪) রেসজুডিকেটার প্রশ্নে: উভয় ডিক্রি রেসজুডিকেটা হিসেবে কাজ করে।
৫) বাতিলের প্রশ্নে:একতরফা ডিক্রি বাতিলের জন্য অর্ডার ৯ রুল ১৩ এর অধীন ছানি মোকদ্দমা দায়ের করা যায়। পক্ষান্তরে, দুতরফা ডিক্রি দ্বারা সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি ডিক্রির তারিখ থেকে ৩০ দিনের মধ্যে জেলা জজের নিকট আপীল এবং ক্ষেত্রে মতে ৯০ দিনের মধ্যে হাইকোর্টে আপীল করা যায়।

ঘ) বাদী ও বিবাদী:লিখিতভাবে আরজি দাখিলের মাধ্যমে যিনি দেওয়ানী আদালতে দাবী উত্থাপন করে ডিক্রি প্রার্থনা করেন তাকে বাদী বলা হয়। পক্ষান্তরে,বাদী যার বিরুদ্ধে আর্জির মাধ্যমে দেওয়ানী আদালতে মোকদ্দমা দায়ের করেন তাকে বিবাদী বলা হয়।
ঙ) মূল আইন ও পদ্ধতিগত আইন:
১) মূল আইন:যে আইন ন্যায় পরিচালনার ক্ষেত্রে অধিকার নির্ধারণ করে তাকে মূল আইন বলে।
পদ্ধতিগত আইন :যে আইন ন্যায় পরিচালনার ক্ষেত্রে অধিকার লংঘনের প্রতিকার নির্ধারণ করে তাকে পদ্ধতিগত আইন বলে।
২) মূল আইন অপরাধকে সংজ্ঞায়িত করে এর সাজার বিধান করে। যেমন- পিনাল কোর্ড-১৮৬০। অন্যদিকে পদ্ধতিগত আইন বিচারের পদ্ধতি বলে দেয়।
৩) মূল আইন মানুষের অধিকার সৃজন করে। অপর দিকে পদ্ধতিগত আইন মানুষের অধিকার ভঙ্গ করলে তা প্রতিকারের পথ নির্দেশ করে।
৪) মূল আইন মানুষের ব্যক্তিগত আইন হতে ভিন্ন। অন্যদিকে, পদ্ধতিগত আইন ব্যক্তিগত আইনসহ যে কোন অধিকার বা অপরাধের প্রতিকার করে।
৫) উদাহরণ: মূল আইন হচ্ছে-পিনালকোর্ড-১৮৬০
পদ্ধতিগত আইন হচ্ছে- হস্তান্তর যোগ্য সম্পত্তি আইন -১৮৮২, ফৌজদারী কার্যবিধি-১৮৯৮ ইত্যাদি।
চ) মিস জয়েন্ডার ও নন জয়েন্ডার:
মিস জয়েন্ডার বা অপসংযোগ এবং নন জয়েন্ডার বা পক্ষাভাবের মধ্যে নি¤েœাক্ত পার্থক্যগুলি বিদ্যমান:
১) সংজ্ঞাগত পার্থক্য:
কোন মামলায় যে সকল ব্যক্তিবর্গ বাদি বা বিাদিরুপে সংযোজিত হওয়ার কোন কারণ বা আবশ্যকতা নেই অথচ উক্তরুপ মামলায় পক্ষ হিসেবে সংযোজিত হযেছে উহাকে মিস জয়েন্ডার বলা হয়। পক্ষান্তরে,কোন মামলায় ব্যক্তি বা ব্যক্তিগণ প্রয়োজনীয় পক্ষ হওয়া স্বত্বেও যদি তাদেরকে পক্ষ হিসেবে যুক্ত করা না হয় তাহলে নন জয়েন্ডার বা পক্ষভাবের সৃষ্টি হয়।
ভুল করে কাউকে মোকদ্দমায় পক্ষ করা হলে তাকে পক্ষের অপসংযোজন এবং আবশ্যকীয় পক্ষকে মামলায় পক্ষভূক্ত না করলে তাকে পক্ষাভাব বলে।
২) কর্তনের প্রশ্নে:মিস জয়েন্ডারের ক্ষেত্রে আদালত সংগত মনে করলে আবশ্যকতা নেই এরুপ ব্যক্তির নাম মামলা থেকে ছেড়ে দিতে পারেন। অন্যদিকে ননজয়েন্ডারের ক্ষেত্রে এরুপ কর্তনের কোন প্রশ্নই ওঠে না।
৩) সংযোজনের প্রশ্নে: মিস জয়েন্ডারের ক্ষেত্রে সংযোজনের প্রশ্নই ওঠে না। কিন্তু নন জয়েন্ডারের ক্ষেত্রে  সংযোজন করতে পারবে।
৪) দ্য কোড অব সিভির প্রসিডিউর ,১৯০৮ এর অর্ডার ১ বিধি ৯ মোতাবেক মামলা অচল হবে অন্যদিকে, অর্ডার ১ বিধি-১০ একই মামলা অচল হবে।

প্রশ্ন-৯ নিঃস্ব ব্যক্তি কে? নিঃস্ব ব্যক্তির দ্বারা মামলা দায়েরের পদ্ধতিগুলি আলোচনা কর। কোন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আদালত মামলা দায়েরের অনুমতির আবেদন অগ্রাহ্য করতে পারে? নিঃস্ব ব্যক্তি হিসাবে মামলা দায়েরের পর কিভাবে একজন নিঃস্ব নিঃস্ব বিহীন ব্যক্তি হিসাবে ঘোষিত হতে পারে? কিভাবে একজন ব্যক্তি নিঃস্ব হিসাবে আপীল দায়ের করতে পারে?
নিঃস্ব ব্যক্তির (চধঁঢ়বৎ) সংজ্ঞা:
দ্য কোর্ড অফ সিভিল প্রসিডিউর,১৯০৮ এর ৩৩ অর্ডারের ১ বিধির ব্যাখ্যায় নিঃস্ব ব্যক্তির সংজ্ঞায় বলা হয়েছে যে, নিঃস্ব ব্যক্তি হলো সেই ব্যক্তি যার তৎকর্তৃক দায়েরকৃত মামলার নির্ধারিত ফিস প্রদানের যথেষ্ট সম্পদ ও সামর্থ্য নেই বা যেখানে কোর্ট ফিস নির্ধারিত নেই সেই রকম মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে পরিধেয় বস্ত্র এবং নালিশকৃত সম্পত্তি ব্যতীত পাঁচ হাজার টাকার বেশি মূল্যের সম্পদের অধিকারি নহেন।
 যে ব্যক্তি নিঃস্ব হিসেবে মামলা দায়ের করতে চায় তাকে আদালতে এই সম্পর্কে অনুমতি চেয়ে আবেদন করতে হবে। উক্ত আবেদন পত্রে সরল বিশ্বাসে অবস্থা সম্পর্কে বর্ণনা দিতে হবে। আদালত প্রয়াজন বোধে সত্যতা নিরূপণের জন্য কমিশন করতে পারে।
নিঃস্ব ব্যক্তি কর্তৃক মামলা দায়েরের পদ্ধতি:
দ্য কোড অফ সিভির প্রসিডিউর,১৯০৮ এর ৩৩ অর্ডারের বিধি -২ এর বিধান হলো যে,দাখিলি আরর্জির সহিত সংযুক্ত একটি দরখাস্তে নিংস্ব ব্যক্তির স্থাবর এবং অস্থাবর সম্পত্তির তালিকা ও উহার সম্ভাব্য মূল্যের বিবরণ সম্বলিত একটি বর্ণনা নিংস্ব ব্যক্তি কর্তৃক স্বাক্ষরিত সত্যপাঠ সহকারে দাখিল করতে হবে। নি:স্ব ব্যক্তির প্রতিনিধি না থাকলে বা তিনি অন্য কোনভাবে আদালতে হাজির হওয়া থেকে অব্যাহতি না পেলে ব্যক্তিগতভাবে হাজির থেকে নি:স্ব ব্যক্তি হিসেবে মামলা দাখিলের দরখাস্তখানা আদালতে দাখিল করতে হবে ৩ বিধি অনুসারে। আদালত চাইলে নি:স্ব ব্যক্তি বা তার প্রতিনিধিকে পরীক্ষা করতে পারবেন এবং প্রয়োজনীয় সিন্ধান্ত নিতে পারবেন। ৪ বিধির অধীনে এরুপ পরক্ষিার পর নি¤েœ কোন একটি কারণ যদি আদালত দেখতে পান যে,
ক) নিঃস্ব ব্যক্তি হিসেবে মামলা করার দরখাস্তটি বিধি ২ ও ৩ এর বিধান অনুসারে আনিত হয়নি;
খ) দরখাস্তকারি নি:স্ব ব্যক্তি নহে;
গ) যেখানে দরখাস্তকারি মামলা দায়েরের অব্যবহিত ২ মাস পূর্বে তার সম্পত্তি নি:স্ব ব্যক্তি হিসেবে মামলা দায়েরের জন্য প্রতারণামূলকভাবে হস্তান্তর করেছেন;
ঘ) মামলা দায়েরের নালিশের কারণ না থাকলে;
ঙ) নালিশি বিষযবস্তু অন্যের নিকট হস্তান্তর করার জন্য যদি তিনি কোন চুক্তিতে উপনীত হন;
তাহলে এরুপ যে কোন একটি কারণে আদালত ৫ বিধির ক্ষমতা বলে নি:স্ব ব্যক্তি হিসেবে মামলা দায়েরের দরখাস্ত নামঞ্জুর করতে পারেন। ৫ বিধির কারণে অদালত যদি দরখাস্তটি না মঞ্জর করেন তাহলে তিনি বিবাদী এবং সরকারী উকিলকে (জিপি) ১০(দশ) কার্য দিবসের একটি নোটিশ দিবেন দরখাস্তকারির নি:স্ব ব্যক্তি হিসেবে মামলা করার বিষয়ে তাদের কোন বক্তব্য আছে কিনা অর্থাৎ দরখাস্তকারির দাবিকে মিথ্যা প্রতিপর্ণ করার জন্য ৬ বিধি বিধান অনুসারে। পক্ষদ্বয় উপস্থিত হলে উভয় পক্ষের নিকট থেকে সাক্ষ্য সাবুদ নিয়ে এবং এবং যদি থাকে ,যুক্তিতর্ক শুনে দরখাস্তকারীকে নিঃস্ব ব্যক্তি হিসেবে গণ্য করবেন অথবা গন্য না করে দরখাস্ত বাতিল করে দিবেন ৭ বিধি মতে। তবে ইদানিং ৭ এ বিধি দিয়েছে বলা হয়েছে যে, কোন ব্যক্তিকে যদি স্থানীয় সরকারের প্রতিনিধি বা উহার কোন কর্মকর্তা যদি নি:স্ব ব্যক্তি হিসেবে সত্যায়িত করে তাহলে তাকে আদালত নিঃস্ব ব্যক্তি হিসেবে মামলা দায়েরের অনুমতি দিবেন এবং নি:স্ব ব্যক্তি নির্ধারণের জন্য উপরোক্ত কোন প্রকার বিধান অনুসরণ করার প্রয়োজন নেই। এরকম দরখাস্ত পাওয়াার পর দরখাস্তকারিকে নি:স্ব ব্যক্তি হিসেবে গণ্য করে ৮ বিধি অনুসারে তার আরর্জি স্যুট রেজিস্টারে অন্তভূক্ত করে অন্য যে কোন স্বাভাবিক মামলার ন্যায় চালাতে হবে তবে বাদিকে কোর্ট ফিস প্রদান করতে হবে না কিন্তু প্রসেস ফি বা অন্য কোন মাসুল থাকলে তা পরিশোধ করতে হবে।
তবে বিবাদি বা সরকার যদি কোন ব্যক্তিকে নি:স্ব ব্যক্তি নহে বলে ঘোষনা করতে চায় বা ডিসপপার করতে চায় তাহলে বাদিকে ৭ কার্য দিবসের নোটিশ দিয়ে ৯ বিধির যে কোন এক বা একাধিক কারণ তাকে প্রমান করতে হবে। যেমন-
ক) মামলা চলাকালিন বাদির আচরণ যদি বিরুক্তিকর প্রমানিত হয়;
খ) যদি বাদির সম্পদের পরিমান ৫০০০ টাকার বেশি আছে বলে প্রমাণিত হয়;
গ) নালিশি সম্পত্তি বিষয়ে বাদি যদি অন্য কোন ব্যক্তির সাথে এমন চুক্তিতে উপনীত হয় যা ঐ ব্যক্তিকে নালিশি সম্পত্তিতে স্বার্থবান করে।
এদের যে কোন এক বা একাধিক কারণে বাদিকে ডিসপপার করা যাবে। ১০ বিধি অনুযায়ী নি:স্ব ব্যক্তি যদি মামলায় ডিক্রি প্রাপ্ত হন তাহলে তিনি ঐ মামলার জন্য নির্ধারিত কোর্ট ফিস দিতে বাধ্য থাকবেন। ১১ বিধি অনুসারে নি:স্ব ব্যক্তি যদি মামলায হেরে যায় অথবা ডিসপপার হন অথবা বাদি যদি মামলা উত্তোলন করে নেন অথবা যদি মামলাটি খারিজ হয় এ কারণে যে,প্রসেস ফি দাখিল না করার কারণে বিবাদির উপর সমন যথাযথভাবে জারি করা যায় কিংবা শুনানিতে বাদি গড়হাজির ছিলেন তাহলে আদালত বাদিকে বা সহবাদিকে ঐ মামরার জন্য নি:স্ব ব্যক্তি না হলে যে রকম কোর্ট ফিস প্রয়োজনীয় হতো সেরুপ কোর্ট ফিস দাখিল করার নির্দেশ দিবেন। ১১ এ -তে বিদান করা হয়েছে যে, নি:স্ব ব্যক্তি মারা যাওয়ার কারণে মামলাটি যদি এ্যাবেট হয়ে যায় তাহলে ঐ ব্যক্তি নি:স্ব ব্যক্তি না হলে যে পরিমান কোর্ট ফি দিয়ে মামলা করতে হতো সে পরিমান কোর্ট ফিস তার সম্পত্তি থেকে আদায করার নির্দেশ দিতে পারেন। ১৫ বিধির বিধান হলো যে, কোন নি:স্ব ব্যক্তি হিসেবে মামলা করার অনুমতি না পেলে তৎবিষয়ে পরবর্তীতে তিনি আর নি:স্ব ব্যক্তি হিসেবে মামলা করতে পারবেন না তবে স্বাভাবিক ব্যক্তির ন্যায তৎবিষয়ে মামলা করতে পারবেন।
কোন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আদালত মামলা দায়েরের অনুমতির আবেদন অগ্রাহ্য করতে পারে: [অর্ডার ৩৩ বিধি-৫]
৪ বিধির অধীনে এরুপ পরক্ষিার পর নি¤েœ কোন একটি কারণ যদি আদালত দেখতে পান যে,
ক) নিঃস্ব ব্যক্তি হিসেবে মামলা করার দরখাস্তটি বিধি ২ ও ৩ এর বিধান অনুসারে আনিত হয়নি;
খ) দরখাস্তকারি নি:স্ব ব্যক্তি নহে;
গ) যেখানে দরখাস্তকারি মামলা দায়েরের অব্যবহিত ২ মাস পূর্বে তার সম্পত্তি নি:স্ব ব্যক্তি হিসেবে মামলা দায়েরের জন্য প্রতারণামূলকভাবে হস্তান্তর করেছেন;
ঘ) মামলা দায়েরের নালিশের কারণ না থাকলে;
ঙ) নালিশি বিষযবস্তু অন্যের নিকট হস্তান্তর করার জন্য যদি তিনি কোন চুক্তিতে উপনীত হন;
তাহলে এরুপ যে কোন একটি কারণে আদালত ৫ বিধির ক্ষমতা বলে নি:স্ব ব্যক্তি হিসেবে মামলা দায়েরের দরখাস্ত নামঞ্জুর করতে পারেন।

নি:স্ব ব্যক্তি কখন নি:স্বহীন ব্যক্তি হিসাবে গন্য হবে: [অর্ডার ৩৩ বিধি ৯]
তবে বিবাদি বা সরকার যদি কোন ব্যক্তিকে নি:স্ব ব্যক্তি নহে বলে ঘোষনা করতে চায় বা ডিসপপার করতে চায় তাহলে বাদিকে ৭ কার্য দিবসের নোটিশ দিয়ে ৯ বিধির যে কোন এক বা একাধিক কারণ তাকে প্রমান করতে হবে। যেমন-
ক) মামলা চলাকালিন বাদির আচরণ যদি বিরুক্তিকর প্রমানিত হয়;
খ) যদি বাদির সম্পদের পরিমান ৫০০০ টাকার বেশি আছে বলে প্রমাণিত হয়;
গ) নালিশি সম্পত্তি বিষয়ে বাদি যদি অন্য কোন ব্যক্তির সাথে এমন চুক্তিতে উপনীত হয় যা ঐ ব্যক্তিকে নালিশি সম্পত্তিতে স্বার্থবান করে।
এদের যে কোন এক বা একাধিক কারণে বাদিকে ডিসপপার করা যাবে।
কিভাবে একজন ব্যক্তি নি:স্ব ব্যক্তি হিসাবে আপীল করতে পারবে: [অর্ডার ৪৪ রুল ১]
যে ক্ষেত্রে কোন ব্যক্তির আপীল করার অধিকার আছে কিন্তু কোর্ট ফি দেওয়ার সঙ্গতি নেই এরুপ ক্ষেত্রে উক্ত ব্যক্তি আদালতের অনুমতি নিয়ে আপীল করতে পারে। নি:স্ব ব্যক্তি হিসাবে আপীল করার জন্য অর্ডার ৩৩ অনুযায়ী যেভাবে আবেদন করা হয়েছিল নি:স্ব ব্যক্তি হিসাবে আপীল করার জন্য অনুরুপ পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে।
তবে শর্ত থাকে যে নি:স্ব ব্যক্তি যে ডিক্রির বিরুদ্ধে আপীল করতে যাচ্ছে আদালত যদি মনে করে যে উক্ত ডিক্রিতে আইনগত বা তথ্যগত কোন ক্রটি নেই বা ভ্রান্তি নেই তাহলে আপীল আদালত তাকে নি:স্ব ব্যক্তি হিসাবে আপীল করার অনুমতির আবেদন অগ্রাহ্য করতে পারে।
প্রশ্ন-১০ রেস-সাব জুডিস এবং রেস জুডিকাটা বলতে কি বুঝ? কি উদ্দেশ্যে এ আইন দেওয়ানী কাযবিধি আইনে সন্নিবেশিত হয়েছে? এ নীতি প্রয়োগের জন্য কি কি শর্ত পূরণ করতে হয়? সহবাদীদের মধ্যে কি রেস জুডিকাটা প্রযোজ্য হয়? যদি হয় তাহলে কোন পরিস্থিতিতে? রেস জুডিকাটা ও রেস সাবজুডিস এর মধ্যে পার্থক্য আলোচনা কর।

রেস সাবজুডিস এবং রেস জুডিকেটা উভয়ই হল পাবলিক পলিসি যাতে একই পক্ষগন একটি বিরোধিয় বিষয নিয়ে একাধিক মামরায় জড়াতে না পারে বা একটি মামরা নিস্পত্তি হয়ে গেলে সেই বিষয নিয়ে মামলার কোন পক্ষ বা তাদের মাধ্যমে স্বত্বের দাবিদার আর কেউ যেন সেই বিষয় নিয়ে পুনরায় মামলা চালাতে না পারে। কেননা উভয় পক্ষকেই মামলায় প্রদত্ত চুড়ান্ত সিন্ধান্তকে অবশ্যই মানতে হবে তা না হলে বিরোধের নিস্পত্তি করা যাবে না বা একই বিষয়ে সাংঘর্ষিক সিন্ধান্ত পরিহার করা যাবে না।

রেস সাব-জুডিস:
যখন একই এখতিয়ারভুক্ত দুইটি বা একই আদালতে একই পক্ষদের মধ্যে একই বিষয বস্তু নিযে দুইটি মামলা বিচারাধীন থাকে তখন সেই বিরোধিয় বিষয়কে রেস সাবজুডিস বলে। কোড অভ সিভিল প্রসিডিউর ,১৯০৮ এর ১০ ধারায় রেস সাবজুডিস নীতির অবতারনা করা হয়েছে এজন্য যে, যাতে একই বিষয় নিয়ে একই পক্ষদের মধ্যে দুই মামলা চলতে না পারে কেননা এতে একই আদালত হতে ভিন্ন ভিন্ন সিন্ধান্ত আসার সুযোগ আছে এবং পক্ষগন  অযথা হয়রানির শিকার হতে পারেন। এই ধারায় বলা হয়েছে যে,”কোন আদালতই একই পক্ষদের মধ্যে দাখিলী একটি মামলার বিচার চালাবেন না যদি তার বিচার্য বিষয প্রত্যক্ষভাবে এবং কার্যত পূর্বে তাদের মধ্যে দাখিলী আর একটি মামলার বিচার্য বিষযের সহিত একই হয অথবা তাদের মাধ্যমে স্বত্বের দাবিদার এক বা একাধিক ব্যক্তির মধ্যে যদি এরুপ দুইটি মামলা থাকে যেখানে তা সব কতৃত্ব সম্পন্ন একই আদালতে বা বাংলাদেশের যেকোন আদালতে যার বা যাদের একই ধরণের প্রতিকার দেওয়ার ক্ষমতা আছে বা বাংলাদেশের বাহিরে স্থাপিত সম কর্তৃত্ব সম্পন্ন কোন আদালত বা বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্টে বিচারধিন থাকে”
রেস সাব জুডিস এর ক্ষেত্রে দুইটি মামলার মধ্যে কোনটি দাখিলের তারিখের দিক থেকে আগে সে বিষযটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা, দাখিলের তারিখ থেকে যেটি পরে আদালত তা স্তগিত করে দিবেন একারণে যে একই বিচার্য বিষয নিয়ে সম কর্তৃত্ব সম্পন্ন একই বা ভিন্ন দুইটি আদালতে একই পক্ষদের মধ্যে আরও একটি মামরা বিচারধীন আছে। আর ১০ ধারায় দাখিলের তারিখ বলতে হিরেন্দ্র বনাম ধিরেন্দ্র ৬২ সি ১১১৫ মামলায় বুঝানো হয়েছে আরর্জি দাখিলের তারিখ মামলা গ্রহণের তারিখ নয়। ২১ ডিএর আর (ডাব্লিউ পি) ,২০৯ - এ মোছা: আরিফা বেগম বনাম খালেক মুহাম্মদ নাকভি মামলায় সিন্ধান্ত হয় যে,” ১০ ধারার অধীন শুধুমাত্র পরবর্তী মামলাটি (সাবসিকোয়েন্ট স্যুট) স্তগিত করা যাবে পুর্ববর্তী মামলা নহে” তাহলে দেখা যাচ্ছে একই বিচার্য বিষয় নিয়ে একই পক্ষদের মধ্যে একই আদালত হতে পরস্পর বিরোধী ডিক্রি হওয়ার মত অবস্থা পরিহার করার নীতিকে রেস সাবজুডিস বলে।
জবং ঝঁনলঁফরপব এর শর্তাবলী:
১) বিচায বিষয়ের অভিন্নতা
২) পক্ষদ্বয়ের অভিন্নতা
৩) আদালতের এখতিয়ার
৪) পূববর্তী মামলাটি বিচারাধীন থাকবে
৫) পূববর্তী মামলাটির উপস্থিতি
এই সকল উপাদান উপস্থিত থাকলে জবং ঝঁনলঁফরপব হবে।
এর উদ্দেশ্য / নীতি:
১) মামলার বহুতা রোধ
২) বিচারিক সিন্ধান্ত দ্বন্ধ এড়ানো
৩) হয়রানি ও অথ অপচয় রোধ

রেস-জুডিকাটা :
রেসজুডিকাটার নীতি হল একটি মামলায় কর্তৃত্ব সম্পন্ন আদালতের চুড়ান্ত বিচারিক সিন্ধান্ত যা পরবর্তীতে একই বিষয়ে উক্ত পক্ষদের মধ্যে দাখিলী মামলার বিচারের বাধা স্বরুপ। অন্যকথায় রেস জুডিকেটার অর্থ হল” দোবারা দোষ” অর্থাৎ যার বিচার একবার হয়ে গেছে তা পুর্নবার আপত্তি উত্থাপন করা যাবে না। দ্য কোড অফ সিভিল প্রসিডিউর,১৯০৮ এর ১১ ধারা মতে, কোন আদালত এমন কোন মামলার বিচার করবেন না যার বিচার্য বিষয় প্রত্যক্ষভাবে এবং কার্যত পূর্ববর্তী কোন মামলায় একই পক্ষগণ বা তাদের মাধ্যমে স্বত্বের দাবীদার যে কোন ব্যক্তিগণের মধ্যে সম এখতিয়ার সম্পন্ন আদালতে বিচারে  চুড়ান্তভাবে নিস্পত্তি হয়েছে” পূর্বেও মামলাটি এমন একটি আদালতে বিচারে নিস্পত্তি হয়েছে যে আদালত পরবর্তী মামরাটিরও বিচার করার এখতিয়ার সম্পন্ন।একবার যে বিষয় বিচারে নিস্পত্তি হয় তা নিয়ে পুনরায় আর কোন প্রশ্ন তোলা যায় না ইহাই হল রেস-জুডিকেটা নীতি। কাজেমালি বনাম কুরেমভয় ৩৬ বি ২১৪ মামলায় বলা হযেছে যে, ”রেস জুডিকেটা শুধু একটি মামলার বিচারই বন্ধ করে না এমনকি ইতোমধ্যে নিস্পত্তিকৃত একটি বিচার্য বিষযের পুন:বিচারর প্রতিরোধ করে।”
সুতরাং পক্ষগণের মধ্যে আদালত নিষ্পত্তিকৃত বিষয়ের পুনরায় মামলা না করতে পারার নীতিকে বলা হয় রেস জুডিকাটা ।
সহ-বাদী এবং সহ-বিবাদীদের মধ্যে রেস-জুডিকেটার নীতি প্রযোজ্য হয় কিনা:
৩৫ সি এনডাব্লিউ ৬৬১ পিসি-তে মুন্নি বনাম ত্রিলোক মামলায় এবং ৪০ ডিএল আর(এডি) ৫৬-এ সচিন্দ্র লাল দাস বনাম হৃদয় রঞ্জন দাস মামলা আপীল্যাট ডিভিশন সিন্ধান্ত গ্রহন করেছেন যে সহ-বাদী এবং সহ-বিবাদীদের মধ্যেও রেস-জুডিকেটার নীতি প্রয়োজ্য হবে। তবে এই নীতি সহ-বাদী বা সহ-বিবাদীদের মধ্যে প্রযোজ্য হওয়ার ক্ষেত্রে নিম্ন লিখিত শর্তগুলো পালন হওয়া আবশ্যক। এই শর্তগুলো হলো:
১) একটি মামলায় সহ-বাদী এবং সহ-বিবাদীদের মধ্যে পারস্পরিক স্বার্থের সংঘাত থাকতে হবে;
২) সহ-বাদী বা সহ-বিবাদীদেরকে মামলায় প্রতিকার দেওয়ার ক্ষেত্রে এই সংঘাত নিস্পত্তি করেই কেবল প্রার্থিত প্রতিকার দেওয়া সম্ভব;
৩) সহ-বিবাদীকে মামলায় প্রয়োজনীয় পক্ষ হতে হবে এবং
৪) সহ বাদীদের মধ্যে বা সহবিবাদীদের মধ্যে বিরোধীয় বিষয়টি চুড়ান্তভাবে নিস্পত্তি হতে হবে।
এক্ষেত্রে আমরা একটি উদাহরণ দিতে পারি যে, ’ক’ নামক এক ব্যক্তি পৈত্রিক সূত্রে ৫০ শতক সম্পত্তির মালিক হতে পারেন এবং সেই সম্পত্তি ওয়ারিশদের মধ্যে বন্টনের পূর্বেই তিনি’খ’ এর কাছে ২০ শতক ’গ’ এর কাছে ১৫ শতক,’ঘ’ এর কাছে ৩০ শতক এবং ’ঙ’ এর কাছে ৫ শতক  মোট ৭০ শতক বিভিন্ন তারিখের দলিলমূলে বিক্রয় করেন। খরিদ্দররা যখন সরেজমিন দখল নিতে যান তখন তাদের মধ্যে সম্পত্তির মালিকানা ও দখল নিয়ে বিরোদ দেখা দেয়। ফলে ’খ’ ও ’ঘ’ নামক দুইজন খরিদ্দার ’ক’ এর ৫০ শতক বাটোয়ারার জন্য ১৩/২০১০ ইং নম্বর একটি বাটোয়ারার মামলা করল ’গ’ এবং ’ঙ’ এর বিরুদ্ধে। এই মামলায় ’খ’ ও’ঘ’ নামে দুই জন হলো সহবাদী আর ’গ’ ও’ঙ’ হল সহ বিবাদী। এ মামরায দেখা যাচ্ছে সহ-বাদীদের মধ্যে এবং সহ-বিবাদীদের মধ্যে পারস্পরিক অংশ নিয়ে বিরোধ আছে। সহ-বাদীদের অংশ নির্ধারণ করার জন্য বিবাদী ’গ’ ও’ঙ’ প্রয়োজনীয় পক্ষ। তাই পরস্পরের অংশ নির্ধারণ করে এবং দখল প্রদানের মাধ্যমে যদি মামলাটি চুড়ান্তভাবে বিচার নিস্পত্তি হয় তাহলে সেই রায় সহ-বাদী এবং সহ-বিবাদীদের মধ্যে রেসজুডিকেটা হবে। ভবিষ্যতে সহবাদী ’খ’ এবং’ঘ’ এই সম্পত্তি নিয়ে নিজেদের মধ্যে বা তাদের ওয়ারিশরা আর সেই সম্পত্তি বন্টন চেয়ে আর মামলা করতে পারবে না। তবে তাদের মধ্যে মালিকানা বা বন্টন নিয়ে কোন মামলা হলে ১৩/২০১০ মামলাটি রেস-জুডিকেটা হিসেবে কাজ করবে। একইভাবে সহ-বিবাদীদের মধ্যেও ভবিষ্যতে বন্টন বা মালিকানা নিয়ে কোন মামলা চলবে না তবে মামলা হলে ১৩/২০১০ নম্বরটি রেস জুডিকেটা হিসেবে কাজ করবে।
একটি মামলা বা উহার কোন বিচার্য বিষয যখন চুড়ান্তবাবে নিস্পত্তি হয় তা যদি একতরফা ডিক্রির মাধ্যমেও হয় তবে তা রেস জুডিকেটা হিসেবে প্রযোজ্য হবে।কেননা, তা একতরফাভাবে নিস্পত্তি হলেও এটি একটি আইনানুগ ডিক্রি এবং আরর্জিতে উল্লেখিত বিষযগুরো আদালত চুড়ান্তভাবে সাক্ষ্য প্রমান নিয়ে সিন্ধান্তে উপনীত হয়েছেন। একতরফা রায় বা কোন আদেশ রেস জুডিকেটা হিসেবে কাজ করার জন্য আরর্জিতে বর্নিত ঘটনা এমন হতে হবে যা থেকে বিবাদী পক্ষ স্পষ্টত: বুঝতে পারে মামলায় কোন বিষয়টি উত্থাপিত হয়েছে এবং তৎবিষয় কি নির্ধারিত হবে। প্রতারণা বা অন্য কোন অনিয়মের অভিযোগ না থাকলে একতরফা ডিক্রি প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ডিক্রির মতই রেস জুডিকেটা হিসেবে কার্যকরী হবে।

রেস সাব-জুডিস ও রেস-জুডিকেটার মধ্যে পার্থক্য:
১) রেস সাব-জুডিস এ দুইটি মামলা বিচারাধীন থাকে যার মধ্যে একটি পূর্ববর্তী এবং আরেকটি পরবর্তী দায়েরকৃত কিন্তু রেস-জুডিকেটায় একটি মামলার চুড়ান্ত সিন্ধান্তই শেষ কথা অর্থাৎ একটি মামলা একটি সিন্ধান্ত।
২) রেস সাব-জুডিস হল বিচারাধীন দুই মামলার মধ্যে পরবর্তীতে দায়েরকৃত মামরার বিচার স্থগিত করা। অপর দিকে রেস-জুডিকেটার অর্থ হল বিচারাধীন দুইটি মামলার মধ্যে পরবর্তীতে দায়েরকৃত মামলাটির বিচার বন্ধ করা।
৩) রেস সাব-জুডিস এর ক্ষেত্রে পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী দুপি মামলাই বিচারাধীন থাকে কিন্তু রেস জুডিকেটার ক্ষেত্রে পূর্ববর্তী মামলাটি বিচারে চুড়ান্তভাবে নিস্পত্তি হয়ে যায়।
৪) রেস সাব-জুডিস এর ক্ষেত্রে উভয় মামরার বিচার্য বিষয় প্রত্যক্ষভাবে এবং কার্যত একই থাকে যার একটি নিস্পত্তি করলে আর অপরটির নিস্পত্তি দরকার হয় না বা অপরটি নিস্পত্তি করতে গেলে একই বিষযে সাংঘর্ষিক সিন্ধান্ত আসতে পারে। অপরদিকে রেসজুডিকেটার ক্ষেত্রে পরবর্তী মামলাটি নিস্পত্তি করাই যাবে না কেননা ঐ মামলা বা বিচার্য বিষয়ে ইতোমধ্যে একই বা সম কর্তৃত্ব সম্পন্ন আদালত থেকে চুড়ান্ত সিন্ধান্ত এসেছে।
৫) রেস সাব-জুডিস হল বিচারাধীন একই বিষয নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন সিন্ধান্ত আসার মত জটিলতা পরিহার করা এবং রেস- জুডিকেটা হল নিস্পত্তিকৃত কোন বিষয়ে পরবর্তীতে ভিন্ন সিন্ধান্ত আসতে না দেওয়া।
৬) রেস সাব-জুডিস দুইটি বিচারাধীন মামলার ক্ষেত্রে প্রয়োজ্য অপর দিকে রেস-জুডিকেটা নিস্পত্তিকৃত বিষয়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
৭) রেস সাব-জুডিস এর নীতি কোর্ড অভ সিভির প্রসিডিউর,১৯০৮ এর ১০ ধারায় এবং রেস- জুডিকেটার নীতি ১১ ধারায় প্রবর্তিত করা হয়েছে।


THE CODE OF CIVIL PROCEDURE (C.P.C) বা দেওয়ানীকার্যবিধি ১৯০৮ সালের ৫ নং আইন।
যা একই বছর অর্থাৎ ১৯০৮ সালের ২১ শে মার্চ গৃহীত হয় এবং১৯০৯ সালের ১লা জানুয়ারী থেকে কার্যকর হয়। দেওয়ানীকার্যবিধিতে মোট ১৫৮ টি ধারা এবং ৫১ টি আদেশ আছে।
যার মধ্যে বর্তমানে ১৫৫ টি ধারা ও ৫০ টি আদেশ কার্যকরআছে।
দেওয়ানী কার্যবিধি একটি পদ্ধতিগত বা বিশ্লেষণিক(Procedural Law) আইন।
যদিও এই আইনে মূল আইনের(Substantive Law) কিছুউপাদান বিদ্যমান আছে।
কোড (Code): দেওয়ানী কার্যবিধি, ১৯০৮ –এর ২(১) ধারারব্যাখ্যা অনুযায়ী, দেওয়ানী কার্যবিধির ধারাসমূহ (Sections) ওনিয়মাবলীকে (Rules) একত্রে কোড বলে।
রুলস (Rules): দেওয়ানী কার্যবিধি, ১৯০৮ –এর ২(১৮) ধারাঅনুযায়ী, রুলস হল, প্রথম তফসিলে বর্ণিত অথবা ১২২ বা ১২৫ধারার অধীনে প্রণীত নিয়মাবলী বা ফরমসমূহ।

১.বাংলাদেশ দণ্ডবিধি সালের আইন?

⇾ ১৯৬০ সালের ৪৫ নং আইন

২.বাংলাদেশ দণ্ডবিধি নিম্নলিখিত কোন ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ?
⇾ ক) বাংলাদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশী নাগরিক, খ) বাংলাদেশে বাইরে অবস্থানরত বাংলাদেশী নাগরিক, গ) বাংলাদেশে নিবন্ধনকৃত কোন জাহাজ বা বিমানে অবস্থানরতকোন ব্যক্তি
৩.বাংলাদেশ দণ্ডবিধির কোন ধারাতে 'জজ' এর সংজ্ঞা প্রদানকরা হয়েছে?
⇾ ধারা ১৯
৪. বাংলাদেশ দণ্ডবিধিতে কয় ধরণের সরকারি কর্মকর্তার কথাউল্লেখ আছে?
⇾ ১২ ধরণের
৫. বাংলাদেশ দণ্ডবিধির কোন ধারাতে 'কমন ইন্টেনশন' এরসংজ্ঞা প্রদান করা হয়েছে?
⇾ ধারা ৩৪
৬. মেনস রিয়া বলতে বুঝায়?
⇾ দোষযুক্ত মন
৭. আত্মহত্যার সহায়তাকারীর সর্বোচ্চ শাস্তি কি?
⇾ ৬ বছর কারাদণ্ড এবং অর্থ দণ্ড
৮. কোন ধারা অনুযায়ী বাংলাদেশে সমকামিতা অপরাধ?
⇾ ৩৭৭ ধারা অনুযায়ী
৯. সরকারি স্ট্যাম্প জাল করার শাস্তি দণ্ডবিধির কত ধারায় বলাআছে?
⇾ ২৫৫ ধারায়
১০. বাংলাদেশের মুদ্রা জাল এ কথা জানা সত্ত্বেও তা ব্যবহারকরার শাস্তি কি?
⇾ সর্বোচ্চ ১০ বছরের কারাদণ্ড ও জরিমানা
১১. বেআইনি সমাবেশ সংঘটিত হতে হলে সর্বাধিক কত জনব্যক্তির উপস্থিতি প্রয়োজন ?
⇾ ৫ বা তার বেশি
১২. বাংলাদেশ দণ্ডবিধির কোন ধারাতে আঘাত এর কথা বলাহয়েছে?
⇾ ৩১৯