হিন্দু ধর্মে বিবাহ সম্পর্কৃত তথ্য - GOPALCPAUL

Latest

You Can See Some Information From Here

শুভ নববর্ষ ১৪৩১, সাইটে ব্রাউজ করার জন্য আপনাকে অভিনন্দন

13 March 2020

 হিন্দু ধর্মে বিবাহ সম্পর্কৃত তথ্য

কোনও হিন্দু যদি এই আইনের আওতায় পরে এমন কোনও স্থানে বসবাস করেন - তাহলে তিনি বাইরে থেকে এলেও এই আইন তাঁর প্রতি প্রযোজ্য হবে।

অহিন্দু, অর্থাৎ, কৃশ্চান, মুসলমান, ইহুদী, পার্শীদের প্রতি এই আইন প্রযোজ্য নয়।হিন্দু ও অহিন্দুর মধ্যে বিবাহ একমাত্র সম্ভবপর "সিভিল ম্যারেজ"-এরসাহায্যে।
১৯৫৪ সালের স্পেশাল ম্যারেজ অ্যাক্ট অনুযায়ী প্রদেশ সরকারেরনিয়োজিত ম্যারেজ রেজিস্ট্রাররা এই বিবাহ দিতে পারেন।

হিন্দুবিবাহ বিধিতে সামাজিক প্রথা ও নিয়ম অনুযায়ী হিন্দু বিবাহ সম্পন্ন হলে তাকেবৈধ হিসাবে গণ্য করা হয় এবং সপ্তপদী যে-সব বিবাহের একটি অঙ্গ, অগ্নি-সাক্ষী করে সপ্তপদী হয়ে যাবার পরেই বিবাহ সম্পূর্ণ হয়েছে বলে ধরা হয়।হিন্দু আইনে কোথাও বলা হয় নি যে, উভয়পক্ষের সন্মতি না থাকলে বিবাহ অসিদ্ধহবে। কিন্তু যদি কোনও পক্ষের সন্মতি অসত্ উপায়ে বা জোর করে নেওয়া হয় -তাহলে সেই বিবাহ অবৈধ ঘোষিত হতে পারে।

হিন্দু বিবাহ আইনের কতগুলি প্রয়োজনীয় তথ্য:

বৈধ বিবাহের শর্ত:

* হিন্দু হতে হবে।
* ন্যূনতম বয়স: পাত্রের ক্ষেত্রে ১৮ (বর্তমান সীমা ২১) ও পাত্রীর ক্ষেত্রে১৫ (বর্তমান সীমা ১৮) বছর হতে হবে (এর থেকে কম বয়সে বিবাহ করা দণ্ডনীয়অপরাধ, যদিও তার জন্য বিবাহটি অবৈধ নাও হতে পারে)।
* বিবাহকালে পাত্রীর অন্য স্বামী বা পাত্রের অন্য স্ত্রী জীবিত থাকলে চলবে না।
* পাত্র ও পাত্রী পরস্পরের নিকট আত্মীয় (যা আইনত নিষিদ্ধ) হবেন না।(বিভিন্ন লোকাচার অনুয়াযী এগুলি শিথিলযোগ্য। যেমন দক্ষিণ ভারতের অনেকজায়গায় মামা তাঁর ভাগ্নীকে বিবাহ করতে পারেন)।
* উভয়ের কেউই সপিণ্ডহবেন না (কারোর সপিণ্ড সম্পর্ক বিচার করতে হলে প্রথমে দেখতে হবে সেই সেইব্যক্তিকে প্রথম প্রজন্ম হিসেবে ধরে তার মায়ের দিক থেকে তিনটি প্রজন্ম(generation) আগে এবং বাবার দিক থেকে পাঁচটি প্রজন্ম আগে কারা ছিলেন।দুজনকে তখনই সপিণ্ড বলা হবে যদি একজনের সপিণ্ড সম্পর্কের কেউ অন্যজনেরসপিণ্ড সম্পর্কের হয় অথবা একজন অন্যজনের সপিণ্ড সম্পর্কের কেউ হয়। )।

নিষিদ্ধ সম্পর্কগুলির বিবরণ:

* আপন সন্তান।
* পুত্র-বধূ, জামাতা, পিতার স্ত্রী, মাতার স্বামী।
* ভাই, বোন - আপন, মামাতো, মাসতুতো, পিসতুতো, খুড়তুতো, জ্যাঠতুতো সবাই।
* মেয়েদের মামা, কাকা, ও জ্যাঠা। ছেলেদের মাসি ও পিসি।

হিন্দু বিবাহ বিধিতে অসিদ্ধ (void) এবং অসিদ্ধ-সম্ভব (voidable) বিবাহের কথা বলা হয়েছে।
বিবাহ অসিদ্ধ হবে যদি প্রাক-বিবাহ বাধা সত্বেও বিবাহ সংঘটিত হয়। এই বাধাগুলিকে আবার দুটো ভাগে ভাগ করা যেতে পারে:

* নিরঙ্কুশ বাধা: এই বাধা সত্বেও কেউ বিবাহ করলে সেটি প্রথম থেকেই অবৈধ। যে কোনও পক্ষ আবেদন জানালে এটি অসিদ্ধ বলে জারি করা হবে।
* আপেক্ষিক বাধা: এক্ষেত্রে বিবাহ অসিদ্ধ বলে ঘোষিত হতে পারে যদি কোনও পক্ষ তার জন্য আবেদন করে।

নিরঙ্কুশ বাধাগুলি হল:

* বিবাহকালে পাত্রের অন্য স্ত্রী বা পাত্রীর অন্য স্বামী জীবিত থাকলে চলবে না।
* পাত্র-পাত্রী সপিণ্ড হবে না
* পাত্র-পাত্রী সম্পর্ক নিষিদ্ধ সম্পর্কের মধ্যে পড়বে না
* এছাড়াও অন্য কারণে বিবাহ অসিদ্ধ হতে পারে, যেমন, বিবাহ-অনুষ্ঠানের আবশ্যকীয় অংশগুলি পালন না করা।

অসিদ্ধ(void) বিবাহের সঙ্গে অসিদ্ধ-সম্ভব (voidable) বিবাহের তফাত্ হলঅসিদ্ধ-সম্ভব বিবাহ বৈধ বলে ধরা হবে যদি না কোনও এক পক্ষ এটি অসিদ্ধ ঘোষণাকরার জন্য আবেদন জানায় এবং সেই আবেদন গৃহীত হয়ে বিবাহ বাতিল করা হয়।সেক্ষেত্রে বিবাহের দিন থেকেই এই বিবাহ অসিদ্ধ বলে ধরা হবে। অসিদ্ধ-সম্ভববিবাহের মূলে চারটি কারণ থাকতে পারে:

* স্বামী পুরুষত্বহীন হয়।
* বিবাহের সময়ে কোনও পক্ষ পাগল বা জড়বুদ্ধিসম্পন্ন হয়।
* বিবাহে সম্মতি আদায় করেছে শঠতার আশ্রয় নিয়ে বা জোর করে (এক্ষেত্রে: (১)শঠতা ধরা পরার বা বলপ্রয়োগের (যা শারীরিক মানসিক দুই হতে পারে) এক বছরেরমধ্যে আবেদন জানাতে হবে); এবং (২) বলপ্রয়োগের বা শঠতা আবিষ্কৃত হবার পরআবেদনকারী স্বেচ্ছায় অন্যপক্ষের সঙ্গে সহবাসে লিপ্ত হন নি)
* বিবাহেরপূর্বে পাত্রী যদি অন্য পুরুষের দ্বারা গর্ভবতী হয়ে থাকে। (এক্ষেত্রে, (১)বিবাহের সময়ে পাত্রীকে গর্ভবতী থাকতে হবে, (২) গর্ভধারণ ঘটেছে স্বামী ছাড়াঅন্য কোনও পুরুষের দ্বারা; (৩) আবেদনকারী বিবাহের সময়ে এই গর্ভধারণের কথাজানতেন না; (৪) স্ত্রী গর্ভবতী জানার পর স্বামী স্বেচ্ছায়ে স্ত্রীর সঙ্গেমিলিত হন নি); (৫) গর্ভবতী জানতে পারার এক বছরের মধ্যে স্বামীকে আবেদন করতেহবে।

হিন্দু বিবাহবিধিতে বিবাহ-বিচ্ছেদের জন্য আবেদন করা চলতে পারে এবং উপযুক্ত কারণ দেখাতেপারলে আদালত তা মঞ্জুর করতে পারে। কিন্তু বিবাহ হবার পর থেকে তিন বছরেরমধ্যে এই আবেদন করা চলবে না। নিম্নলিখিত কারণগুলি উপযুক্ত কারণ হিসেবে গণ্যকরা হবে:

* স্বামী বা স্ত্রী ব্যভিচারে লিপ্ত হলে।
* ধর্মান্তর গ্রহণ করে আর হিন্দু না থাকলে।
* আবেদনের প্রাক্কালীন তিন বছর ধরে স্বামী বা স্ত্রী কেউ যদি মস্তিষ্কবিকৃতিতে বা আরোগ্যের অতীত কুষ্ঠ ব্যধিতে, কিংবা সংক্রামক যৌনব্যাধিতেভুগলে।
* স্বামী বা স্ত্রী সংসার ত্যাগ করলে বা কোনও ধর্ম-সম্প্রদায়ে যোগ দিলে।
* স্বামী বা স্ত্রীর কেউ সাত বছর নিরুদ্দিষ্ট থাকলে।
* আদালত কর্তৃক আলাদা হয়ে থাকার হুকুমনামার (জুডিশিয়াল সেপারেশন) পর উভয়পক্ষ আর স্বামী-স্ত্রী রূপে সহবাস না করলে।
* আদালত দাম্পত্য-জীবন পুনপ্র্রতিষ্ঠার (রেস্টিট্যুশন অফ কনজুগাল রাইটস)হুকুম দেওয়া সত্বেও, হুকুম অমান্য করে দুই বছর আলাদা হয়ে বাস করলে।
* স্বামী যৌন-অত্যাচার করলে।
* স্ত্রী বর্তমান থাকা সত্বেও অন্য কাউকে বিবাহ করলে। (যদিও সেই দ্বিতীয়বিবাহ অসিদ্ধ, কিন্তু এটিও বিবাহ-বিচ্ছদে আবেদনের একটি উপযুক্ত কারণ)।
* দুজনের সম্মিলিত ইচ্ছা।

আদালতেযদি বিবাহ-বিচ্ছেদের নির্দেশ দেয় (এবং তার বিরুদ্ধে কোনও আপীল না করা হয়), তাহলে এক বছর অপেক্ষা করার উভয়পক্ষই আবার বিবাহ করতে পারে। প্রসঙ্গতঃবিবাহ-বিচ্ছেদের নির্দেশ পাবার আগে যদি স্ত্রী গর্ভবতী হন, তাহলে সেইসন্তান স্বামীর বৈধ সন্তান বলে গণ্য হবে|

[আইনবিষয়ক যে-সব আলোচনা অবসর-এ রয়েছে তার উদ্দেশ্য সাধারণ ভাবে আইনের ব্যাপারেপাঠকদের অবহিত করা। এই আলোচনা কোনও ভাবেই উকিলের পরামর্শের বিকল্প নয়।কারোর আইন সংক্রান্ত কোনও সমস্যা থাকলে, তাঁর উচিত সরাসরি কোনও আইনজ্ঞেরপরামর্শ গ্রহণ করা।]