Muslim many kind of law মুসলিম সংক্রান্ত কিছু আইন - GOPALCPAUL

Latest

You Can See Some Information From Here

শুভ নববর্ষ ১৪৩১, সাইটে ব্রাউজ করার জন্য আপনাকে অভিনন্দন

28 February 2020

Muslim many kind of law মুসলিম সংক্রান্ত কিছু আইন

মুসলিম বিবাহ ও তালাক (রেজিষ্ট্রীকরণ) আইন, ১ঌ৭৪

মুসলিম বিবাহ ও তালাক রেজিষ্ট্রীকরণ সম্পর্কিত আইন একীকরণ ও সংশোধন করিবার জন্য আইন ]


যেহেতু মুসলিম বিবাহ ও তালাক রেজিষ্ট্রীকরণ সম্পর্কিত আইন একীকরণ ও সংশোধন করা সমীচীন; সেহেতু উহা এতদ্বারা নিম্নরূপ বিধিবদ্ধ করা হইলঃ

১। সংক্ষিপ্ত শিরোণাম ও প্রয়োগ :

(১) এই আইন মুসলিম বিবাহ ও তালাক (রেজিষ্ট্রীকরণ) আইন, ১ঌ৭৪ বলিয়া অভিহিত করা যাইতে পারে।
(২) বাংলাদেশের সকল মুসলিম নাগরিকদের উপর যেখানেই তাহারা থাকুক না কেন, ইহা প্রযোজ্য হইবে।

২। সংজ্ঞা সমূহ : এই আইনে যদি বিষয়ে বা প্রসঙ্গে পরিপন্থী কোন কিছু না থাকে তাহা হইলেঃ-

(ক) মহা-নিবন্ধন পরিদর্শক (ইন্সপেক্টর জেনারেল অব রেজিষ্ট্রশন) ও নিবন্ধক (রেজিষ্টার) বলিতে যথাক্রমে ১ঌ০৮ সনের রেজিষ্ট্রীকরণ আইনের (১৯০৮ সনের ১৬) অধীনে ঐরূপ পদনামযুক্ত ও নিযুক্ত অফিসারদেরকে বুঝায়।

(খ) নির্ধারিত বলিতে এই আইনের অধীনে প্রণীত বিধিমালা দ্বারা নির্ধারিত বুঝায়।

৩। বিবাহ রেজিষ্ট্রীকরণ : অন্য যে কোন আইন, প্রথা বা রীতিতে যে কোন কিছু থাকা সত্ত্বেও মুসলিম আইন অনুযায়ী অনুষ্ঠিত প্রত্যেক বিবাহ এই আইনের বিধানাবলী অনুযায়ী রেজিষ্ট্রী করতে হবে।

৪। নিকাহ নিবন্ধক : এই আইনের অধীন বিবাহসমূহ রেজিষ্ট্রীকরণের উদ্দেশ্যে সরকার যেরূপ বিধিনির্দিষ্ট করিতে পারেন সেরূপ এলাকার জন্য যেরূপ প্রয়োজনীয় গণ্য করিতে পারে সেরূপ সংখ্যক নিকাহ নিবন্ধক বলিয়া অভিহিত ব্যক্তিকে অনুজ্ঞাপত্র মঞ্জুর করিবেন। তবে শর্ত থাকে যে অনধিক একজন নিকাহ নিবন্ধক যে কোন একটি এলাকার জন্য অনুজ্ঞাপ্রাপ্ত হইবে।

৫। নিকাহ নিবন্ধকগণ কর্তৃক অনানুষ্ঠিত বিবাহ সম্পর্কে তাহাদের নিকট প্রতিবেদন করিতে হইবে :

(১) নিকাহ নিবন্ধক কর্তৃক অনানুষ্ঠিত প্রত্যেক বিবাহ এই আইনের অধীনে রেজিষ্ট্রীকরণের উদ্দেশ্যে তাহার নিকট এইরূপ বিবাহ অনুষ্ঠিত করিয়াছেন এমন ব্যক্তি কর্তৃক প্রতিবেদন পেশ করিতে হইবে।
(২) যে কেহ (১) উপ-ধারার বিধান লংঘন করিলে সে তিন মাস পর্যন্ত বর্ধনযোগ্য মেয়াদের বিনাশ্রম কারাবাসে বা পাঁচশত টাকা পর্যন্ত বর্ধনযোগ্য জরিমানায় বা উভয়বিধে শাস্তিযোগ্য হইবেন।

৬। তালাক রেজিষ্ট্রীকরণ :

(১) কোন নিকাহ নিবন্ধক এখতিয়ারের মধ্যে মুসলিম আইন অনুযায়ী কার্যকরীকৃত তালাক রেজিষ্ট্রীকরণের জন্য তাহার নিকট পেশকৃত আবেদন পত্রের ভিত্তিতে উহা রেজিষ্ট্রী করিতে পারেন।
(২) তালাক রেজিষ্ট্রিকরণের জন্য আবেদন তালাক কার্যকরী করিয়াছেন এমন ব্যক্তি বা ব্যক্তিগণ কর্তৃক মৌখিকভাবে পেশকৃত হইবে । তবে শর্ত থাকে যে, যদি মহিলা পর্দানশীল হন তাহা হইলে ঐরূপ আবেদন তাহার যথাযথভাবে কর্তৃত্বপ্রাপ্ত উকিল কর্তৃক পেশ করা যাইতে পারে।

(৩) ১ঌ০৮ সনের রেজিষ্ট্রীকরণ আইনের (১৯০৮ সনের ১৬) অধীনে রেজিষ্ট্রীকৃত যে দলিলমুলে স্বামী স্ত্রীকে তালাকের ক্ষমতা অর্পণ করিয়াছিল উক্ত দলিল অথবা ঐরূপ অর্পন করা হইয়াছে বলিয়া বিবাহ রেজিষ্ট্রী খাতায় অন্তভুক্তির সত্যায়িত প্রতিলিপি দাখিলকরণের ভিত্তিতে ব্যতীত নিকাহ নিবন্ধক তালাক-ই-তৌফিজ হিসাবে পরিচিত ধরনের কোন তালাক রেজিষ্ট্রী করিবেন না।

(৪) যেক্ষেত্রে নিকাহ নিবন্ধক কোন তালাক রেজিষ্ট্রী করিতে অস্বীকার করেন, সেক্ষেত্রে ঐরূপ রেজিষ্ট্রীকরণের জন্য আবেদন করিয়াছিল এমন ব্যক্তি বা ব্যক্তিগণ উক্ত অস্বীকৃতির ত্রিশ দিনের মধ্যে নিবন্ধকের নিকট আপীল পেশ করিতে পারেন এবং উক্ত আপীলের উপর নিবন্ধক কর্তৃক প্রদত্ত আদেশ চূড়ান্ত (বলিয়া গণ্য) হইবে।
৭। রেজিষ্ট্রীকরণের পদ্ধতি : নিকাহ নিবন্ধক নির্ধারিত পদ্ধতিতে কোন বিবাহ বা তালাক রেজিষ্ট্রী করিবেন।
৮। রেজিষ্ট্রী খাতা : প্রত্যেক নিকাহ নিবন্ধক নির্ধারিত ফরমে বিবাহ ও তালাকের পৃথক রেজিষ্ট্রী খাতা রাখিবেন এবং ঐরূপ প্রত্যেক রেজিষ্ট্রী খাতায় প্রত্যেক বত্সরের শুরুতে নতুন সারির সূচনা ক্রমে সকল ভুক্তি ক্রমিক সারিতে সংখ্যাযুক্ত (করিতে) হইবে।
৯। পক্ষগণকে ভুক্তির প্রতিলিপি দিতে হইবে : কোন বিবাহ বা তালাকের রেজিষ্ট্রীকরণ সম্পূর্ন হওয়ার পর নিকাহ নিবন্ধক সংশ্লিষ্ট পক্ষগণকে খাতায় ভুক্তির সত্যায়িত প্রতিলিপি অর্পণ করিবেন এবং ঐরূপ প্রতিলিপির জন্য কোন খরচ আদায় করা হইবে না।

১০। নিয়ন্ত্রন ও তত্ত্বাবধান :

(১) প্রত্যেক নিকাহ নিবন্ধক তাহার অফিসের কর্তব্যাবলী নিবন্ধকের অধীক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণের অধীনে পালন করিবেন।
(২) মহা-নিবন্ধন পরিদর্শক সকল নিকাহ নিবন্ধকগণের অফিসের উপর সাধারণ অধীক্ষণ চালাইবেন।

১১। অনুজ্ঞাপত্রের সংহরণ ও নিলম্বন : যদি সরকার বিশ্বাস করেন যে, নিকাহ নিবন্ধক তাহার কর্তব্যাবলী পালনে কোন অসদাচনের জন্য দোষী অথবা তাহার কর্তব্যাবলী পালনে অনুপযুক্ত বা দৈহিকভাবে অক্ষম, তাহা হইলে সরকার লিখিত আদেশবলে তাহার অনুজ্ঞাপত্র সংহরণ করিতে পারেন, অথবা আদেশের যেরূপ বিনির্দিষ্ট করা হইতে পারে সেরূপ অনধিক দুই বত্সর মেয়াদের জন্য তাহার অনুজ্ঞাপত্র নিলম্বিত করিতে পারেন।

তবে শর্ত থাকে যে, ঐরূপ কোন আদেশ প্রদান করা হইবে না যদি নিকাহ নিবন্ধককে কেন ঐরূপ আদেশ প্রদান করা হইবে না উহার কারণ প্রদর্শনের যুক্তিসঙ্গত সুযোগ প্রদান করা হয়।

১২। রেজিষ্ট্রী খাতাসমূহের হেফাজত : প্রত্যেক নিকাহ নিবন্ধক ৮ ধারা অনুযায়ী তত্কর্তৃক রক্ষিত প্রত্যেকটি রেজিষ্ট্রী খাতা নিরাপদে রাখিবেন যতক্ষণ না উহা সম্পূর্ণ হয় এবং তিনি সংশ্লিষ্ট জিলা ত্যাগ করিলে বা অনুজ্ঞাপত্র ধারণ করা বন্ধ করিলে তখনই বা তত্পূর্বে নিরাপদ হেফাজতের জন্য নিবন্ধকের নিকট উহা হস্তান্তর করিবেন।

১৩। রেজিষ্ট্রী খাতাসমূহ পরিদর্শন : যে কোন ব্যক্তি নির্ধারিত ফি, যদি থাকে, প্রদানক্রমে নিকাহ নিবন্ধকের বা নিবন্ধকের অফিসে সেখানে রক্ষিত যে কোন রেজিষ্ট্রী খাতা পরিদর্শন করিতে পারেন অথবা উহাতে কোন ভুক্তির প্রতিলিপি পাইতে পারেন।

১৪। বিধি প্রণয়নের ক্ষমতা :

(১) সরকার অফিসিয়াল গেজেটে প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এই আইনের উদ্দেশ্যাবলী কার্যকরী করিবার জন্য বিধি প্রণয়ন করিতে পারেন।
(২) বিশেষ করিয়া এবং পূর্ববর্তী ক্ষমতার সাধারণত্বের হানি না করিয়া উক্ত বিধিমালা-
(ক) যে ব্যক্তিদেরকে ৪ ধারার অধীনে অনুজ্ঞাপত্র মঞ্জুর করা যাইতে পারে তা যাদের জন্য আবশ্যক যোগ্যতা সম্পর্কে,
(খ) বিবাহ বা তালাক রেজিষ্ট্রীকরণের জন্য নিকাহ নিবন্ধককে প্রদেয় কি সম্পর্কে,
(গ) বিধি প্রণয়ন আবশ্যক এমন অন্য যে কোন বিষয় সম্পর্কে বিধান করিতে পারে।

১৫। ১ঌ৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশের (১ঌ৬১ সনের ৮অর্ডিন্যান্স) সংশোধন :

১৯৬১ সনের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশের,

(ক) ৩ ধারার (১) উপ-ধারায় কমা ও শব্দাবলী এবং মুসলিম বিবাহ রেজিষ্ট্রীকরণ শুধুমাত্র ঐ সকল বিধানাবলী অনুযায়ী সংঘটিত হইবে বাদ যাইবে।
(খ) ৫ ধারা বাদ যাইবে।

(গ) ৬ ধারার (১) উপ-ধারায় এই আইনের অধীন শব্দসমূহের পরিবর্তে ১ঌ৭৪ সালের মুসলিম বিবাহ ও তালাক (রেজিষ্ট্রীকরণ) আইনের (১ঌ৭৪ সনের ৫২ নম্বর আইন) অধীন শব্দসমূহ, কমা, অংক ও বন্ধকী বসিবে।

১৬। নিরসন :

১৮৭৬ সনের মুসলিম তালাক রেজিষ্ট্রীকরণ আইনের (১৮৭৬ সনের ১ নং বেঙ্গল আইন) এতদ্বারা নিরসন করা হইল।

১৭। বিদ্যমান নিকাহ নিবন্ধকগণ সম্পর্কিত বিধান :

এই আইনের প্রারম্ভের পূর্বে ১৯৬১ সনের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশের (১৯৬১ সনের ৮) অধীনে অনুজ্ঞাপ্রাপ্ত সকল নিকাহ নিবন্ধকগণ এই আইনের অধীনে নিকাহ নিবন্ধক হিসাবে অনুজ্ঞাপ্রাপ্ত হইয়াছে বলিয়া গণ্য হইবে।

>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>

মুসিলম বিবাহ বিচ্ছেদ আইন ১৯৩৯ (১৯৩৯ সালের ৮নং আইন) [ ১৯৩৯ সালের ১৭ই মার্চ তারিখে গভর্ণর-জেনারেলের সম্মতিপ্রাপ্ত ]

[ মুসলিম আইন অনুযায়ী বিবাহিতা মহিলার বিবাহ বিচ্ছেদের উপর আণীত মামলা সম্পর্কিত মুসলিম আইনের বিভিন্ন ব্যবস্থাবলীর একত্রীকরণ ও পরিস্কার ব্যাখ্যার জন্য এবং বিবাহিতা মুসলমান মহিলার ইসলাম ধর্ম পরিত্যাগের ফলে তাহার বিবাহ সম্পর্কের ক্ষেত্রে সৃষ্ট সন্দেহ দূরীকরণার্থে প্রণীত অ্যাক্ট ]।

যেহেতু, মুসলিম আইন অনুযায়ী বিবাহিতা মহিলার বিবাহ বিচ্ছেদের উপর আনীত মামলা সম্পর্কিত মুসলিম আইনের বিভিন্ন ব্যবস্থা একত্রীকরণ ও উহাদের পরিস্কার ব্যাখ্যার জন্য এবং বিবাহিতা মুসলমান মহিলার ইসলাম ধর্ম পরিত্যাগের ফলে তাহার বিবাহ সম্পর্কের ক্ষেত্রেও সৃষ্ট সন্দেহ দূরীকরণার্থে, এক্ষেত্রে প্রয়োজন অনুভব করা যাইতেছে, সেইহেতু এতদ্বারা নিম্নলিখিত আইন পাশ করা হইতেছে :

১। (ক) সংক্ষিপ্ত শিরোনামঃ অত্র আইনকে ১৯৩৯ সালের মুসলমান বিবাহ বিচ্ছেদ আইন নামে অভিহিত করা যাইতে পারে।

(খ) ইহা সমগ্র বাংলাদেশে প্রযোজ্য হইবে।

২। বিবাহ বিচ্ছেদের ডিক্রির হেতুবাদঃ নিম্নলিখিত যে কোন এক বা একাধিক হেতুবাদে মুসলিম আইন অনুযায়ী বিবাহিতা কোন মহিলা তাহার বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য ডিক্রি লাভের অধিকারিণী হইবেন, যথাঃ

i) চার বছর যাবত্‍ স্বামী নিরুদ্দেশ হইলে;

ii) স্বামী দুই বত্সছর যাবত্‍ স্ত্রীর ভরণ-পোষণ দানে অবহেলা প্রদর্শন করিলে অথবা ব্যর্থ হইলে;

ii-ক) স্বামী ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশের ব্যবস্থা লঙ্খন করিরা অতিরিক্ত স্ত্রী গ্রহণ করলে;

iii) স্বামী সাত বত্সার বা তদুর্ধ্ব সময়ের জন্য কারাদন্ডে দন্ডিত হইলে;

iv) স্বামী কোন যুক্তসঙ্গত কারণ ব্যতীত তিন বছর যাবত্‍ তাহার দাম্পত্য দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হইলে;

v) বিবাহকালে স্বামীর পুরুষত্বহীনতা থাকিলে এবং উহা বর্তমানেও চলিতে থাকলে;

vi) দুই বছর  যাবত্‍ স্বামী পাগল হইয়া থাকিলে অথবা কুষ্ঠ ব্যাধিতে কিংবা ভয়ানক ধরণের উপদংশ রোগে ভুগিতে থাকলে;

vii) আঠার বত্সরর পূর্ণ হওয়ার পূর্বে তাহাকে তাহার পিতা অথবা অন্য অভিভাবক বিবাহ করাইয়া থাকিলে এবং উণিশ বত্সiর বয়স পূর্ণ হইবার পূর্বেই সে উক্ত বিবাহ অস্বীকার করিয়া থাকিলে; তবে, অবশ্য ঐ সময়ের মধ্যে যদি দাম্পত্য মিলন অনুষ্ঠিত না হইয়া থাকে;

viii) স্বামী তাহার (স্ত্রীর) সহিত নিষ্ঠুর আচরণ করিলে, অর্থাত্

ক) অভ্যাসগতভাবে তাহাকে আঘাত করিলে বা নিষ্ঠুর আচরণ দ্বারা, উক্ত আচরণ দৈহিক পীড়নের পর্যায়ে না পড়িলও, তাহার জীবন শোচনীয় করিয়া তুলিয়াছে এমন হইলে;.

খ) স্বামীর দূর্নাম রহিয়াছে বা কলঙ্কিত জীবন যাপন করে এমন স্ত্রীলোকদের সহিত মেলামেশা করিলে, অথবা

গ) তাহাকে দূর্ণীত জীবন যাপনে বাধ্য করিবার চেষ্টা করিলে, অথবা

ঘ) তাহার সম্পত্তি হস্তান্তর করিলে অথবা উহার উপর তাহার বৈধ অধিকার প্রয়োগে বাধা প্রদান করিলে, অথবা

ঙ) তাহার ধর্মীয় কর্তব্য পালনে বাধা সৃষ্টি করিলে, অথবা

চ) একাধিক স্ত্রী থাকিলে, সে কোরানের নির্দেশ অনুযায়ী ন্যায়পরায়নতার সহিত তাহার সঙ্গে আচরণ না করিলে;

ix) মুসলিম আইন অনুযায়ী বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য বৈধ হেতু হিসাবে স্বীকৃত অন্য যে কোন কারণেঃ

তবে অবশ্য-

ক) কারাদন্ডাদেশ চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত ৩ নং হেতু বাদে কোন ডিক্রি প্রদান করা যাইবে না,

খ) ১ নং হেতুবাদে প্রদত্ত ডিক্রিটি উহার প্রদানের তারিখ হইতে ৬ মাস পর্যন্ত কার্যকরী হইবে না এবং স্বামী উক্ত সময়ের মধ্যে স্বয়ং অথবা ক্ষমতাপ্রাপ্ত কো এজেন্টের মাধ্যমে উপস্থিত হইয়া এই মর্মে যদি আদালতকে খুশী করিতে পারে যে, দাম্পত্য কর্তব্য পালনে প্রস্তুত রহিয়াছে, তাহা হইলে আদালত ডিক্রিটি রদ করিবেন; এবং

গ) ৫ নং হেতুবাদে ডিক্রি প্রদানের পূর্বে, স্বামীর আবেদনক্রমে আদালতের আদেশের এক বত্স রের মধ্যে যে পুরুষত্বহীনতা হইতে মুক্তি লাভ করিয়াছে বা তাহার পুরুষত্বহীনতার অবসান ঘটিয়াছে এই মর্মে আদালতকে সন্তুষ্ট করিবার জন্য আদালত তাহাকে আদেশ দান করিতে পারেন এবং যদি সে উক্ত সময়ের মধ্যে আদালতকে এই মর্মে সন্তুষ্ট করিতে পারে, তাহা হইলে উক্ত হেতুবাদে কোন ডিক্রি প্রদান করা যাইবে না।

৩। স্বামীর ঠিকানা জানা না থাকিলে তাহার উত্তরাধিকারীগণের উপর নোটিশ জারী করিতে হইবে যে মামলায় ২ ধারায় (১) উপ-ধারা প্রযোজ্য, সেখানে-

ক) আর্জিতে ঐ সমস্ত লোকের নাম-ঠিকানা লিখিতে হইবে যাহারা আর্জি পেশ করিবার সময় স্বামী মারা গেলে মুসলিম আইনে স্বামীর উত্তরাধিকারী হইতেন;

খ) ঐ ধরণের ব্যক্তিগণের উপর নোটিশ জারী করিতে হইবে, এবং

গ) উক্ত মামলায় ঐ সকল ব্যক্তির বক্তব্য পেশ করিবার অধিকার থাকিবে।

তবে অবশ্য ম্বামীর চাচা ও ভাই থাকিলে উহারা উত্তরাধিকারী না হইলেও উহাদিগকে অবশ্যই পক্ষভূক্ত করিতে হইবে।

৪। ধর্মান্তরের ফলঃ

কোন বিবাহিতা মুসলমান মহিলা ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করিলে অথবা ইসলাম ব্যতীত অন্য কোন ধর্মে দীক্ষা গ্রহন করিলে উহাতেই তাহা বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটিবে না। তবে, অবশ্য এই জাতীয় ধর্ম ত্যাগ বা অন্য ধর্ম গ্রহণের পর মহিলাটি ২ ধারায় বর্ণিত অন্য কোন হেতুবাদে তাহার বিবাহ বিচ্ছিদের জন্য ডিক্রি গ্রহণের অধিকারিণী হইবেনঃ আরও এই যে, অত্র ধারার ব্যবস্থাবলী ঐ মহিলার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হইবে না, যে কোন ধর্ম হইতে মুসলিম ধর্মে ধর্মান্তরিত হইয়াছিল এবং বর্তমানে স্বীয় পুরাতন ধর্মে পুনরায় দীক্ষা গ্রহণ করিল।

৫। দেহমোহরের অধিকার ক্ষুন্ন হইবে নাঃ

অত্র আইনে সন্নিবেশিত কোন কিছুই কোন বিবাহিতা মহিলার বিবাহ বিচ্ছেদের ফলে মুসলিম আইন অনুযায়ী তাহার প্রাপ্ত দেনমোহর অথবা উহার কোন অংশের উপর তাহার কোন অধিকারকেই ক্ষুন্ন করিবে না।

৬। ১৯৩৭ সালের মুসলিম ব্যক্তিগত আইন (শরিয়ত) প্রয়োগ আইনের ৫ ধারাটিকে এতদ্বারা বাতিল ঘোষণা করা হইল [ ১৯৪২ সালের ২৫ নং এ্যাক্ট দ্বারা বাতিল ঘোষিত হয় ]

>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>

মুসলিম বিবাহবিচ্ছেদ আইন, ১৯৩৯ [১৯৩৯ সালের ৮নং আইন]
——————————————————————–

ধারা -১ (সংক্ষিপ্ত শিরোনাম ও প্রয়োগযোগ্যতার সীমা )

(১) অত্র আইন মুসলিম বিবাহবিচ্ছেদ আইন, ১৯৩৯ নামে পরিচিত হইবে ।

(২) ইহা সমস্ত বাংলাদেশে কার্যকর হইবে ।

(৩) বিবাহবিচ্ছেদ ও ডিক্রি লাভের কারণসমূহঃ মুসলিম আইন অনুসারে কোনো বিবাহিতা স্ত্রীলোক নিম্নলিখিত এক বা একাধিক কারণে তাহার বিবাহবিচ্ছেদের ডিক্রি পাওয়ার অধিকারণী হইবে ।যথাঃ

(১) চার বত্সবরকাল পর্যন্ত স্বামী নিখোঁজ;

(২) দুই বত্সরকাল পর্যন্ত স্বামী তাহাকে ভরণপোষণ প্রদানে অবহেলা করিয়াছে বা ব্যর্থ হইয়াছে ।

ধারা-২ (বিবাহবিচ্ছেদের ডিক্রির কারণসমূহ )

(১) ১৯৬১ সনের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশের বিধান অমান্য করিয়া স্বামী অপর কোনো স্ত্রী গ্রহণ করিয়াছে;

(২) সাত বত্সর বা ততোধিক সময়ের জন্য স্বামী কারাদণ্ডে দণ্ডিত হইয়াছে;

(৩) যুক্তসঙ্গত কারণ ব্যতীত স্বামী তিন বত্সরকাল যাবত তাহার বৈবাহিক দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হইয়াছে;

(৪) বিবাহের সময় স্বামী পুরুষত্বহীন ছিল এবং তাহার ঐরূপ অবস্থা অব্যাহত আছে;

(৫) দুই বত্সর পর্যন্ত স্বামী অপ্রকৃতিস্থ রহিয়াছে বা কুষ্ঠরোগ অথবা মারাত্মক যৌন রোগে ভুগিতে থাকে;

(৬) বয়স ১৬ বত্সর পূর্ণ হইবার আগে তাহাকে তাহার বাবা অথবা অন্য কোনো অভিভাবক বিবাহ দিয়াছে ও বয়স ১৮ বত্সর পূর্ণ হইবার আগে সে (স্ত্রীলোক) উক্ত বিবাহ নাকচ করিয়াছে । শর্ত থাকে যে, বিবাহে যৌনমিলন ঘটে নাই ।

(৭) স্বামী-স্ত্রীর সহিত নিষ্ঠুর আচরণ করে; যেমন-

(ক) তাহাকে স্বভাবতঃই আক্রমণ করে বা নিষ্ঠুর আচরণের মাধ্যমে তাহার জীবন দুর্বিসহ করিয়া তোলে যদি ঐরূপ আচরণ শারীরিক নির্যাতন নাও হয়; বা

(খ) খারাপ চরিত্রের নারীগণের সঙ্গে থাকে অথবা ঘৃণ্য জীবনযাপন করে; বা

(গ) তাহাকে নৈতিকতাহীন জীবনযাপনে বাধ্য করিতে চেষ্টার করে; বা

(ঘ) তাহার সম্পত্তি হস্তান্তর করে বা উক্ত সম্পত্তিতে তাহার আইনসঙ্গত অধিকার প্রয়োগে বাধা সৃষ্টি করে; বা

(ঙ) তাহাকে তাহার ধর্ম বিশ্বাস অথবা ধর্ম চর্চায় বাধা প্রদান করে; বা

(চ) যদি তাহার একাধিক স্ত্রী থাকে তবে কোরআনের নির্দেশ অনুযায়ী সে তাহার সহিত ন্যায়সঙ্গতভাবে ব্যবহার না করে;

(৮) মুসলিম আইন অনুযায়ী বিবাহবিচ্ছেদের নিমিত্ত বৈধ বলিয়া স্বীকৃত অপর কোন কারণে শর্ত থাকে যে-

(ক) কারাদণ্ডাদেশ চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত ৩নং উপধারায় বর্ণিত কারণে ডিক্রি দেওয়া হইবে না;

(খ) ১নং উপধারায় বর্ণিত কারণে উহার তারিখ হইতে ছয় মাস কাল পর্যন্ত কার্যকর হইবে না; এবং স্বামী যদি উক্ত সময় মধ্যে ব্যক্তিগতভাবে বা কোনো ক্ষমতাপ্রাপ্ত প্রতিনিধির মাধ্যমে উপস্থিত হইয়া আদালতকে সন্তোষজনক উত্তর দেয় যে সে দাম্পত্য দায়িত্ব পালনে প্রস্তুত আছে তবে আদালত উক্ত ডিক্রি নাকচ করিবেন;

(গ) ৫নং উপধারায় বর্ণিত কারণে ডিক্রি দেওয়ার আগে আদালত স্বামীর আবেদনক্রমে তাহাকে আদেশ প্রদান করিতে পারেন যে, অত্র আদেশের তারিখ হইতে ১ বত্সরকালের মধ্যে সে আদালতের নিকট সন্তোষজনকভাবে প্রমাণ করিতে হইবে যে, সে পুরুষত্বহীনতা হইতে আরোগ্য লাভ করিয়াছে; এবং যদি স্বামী উক্ত সময় মধ্যে ঐরূপে আদালতকে সন্তুষ্ট করিতে পারে তবে উক্ত কারণে কোনো ডিক্রি দেওয়া হইবে না ।

ধারা-৩ (নিরুদ্দেশ স্বামীর উত্তরাধিকারদের উপর নোটিশ প্রদান )

২নং ধারার ১নং উপধারার প্রযোজ্য মামলায়-

(ক) আরজি দাখিল করিবার তারিখে স্বামীর যদি মৃত্যু ঘটিত তবে মুসলিম আইন অনুসারে যাহারা তাহার উত্তরাধিকারী হইতে তাহাদের নাম, ঠিকানা আরজিতে লিপিবদ্ধ করিতে হইবে;

(খ) ঐরূপ ব্যক্তিগণের উপর মামলার নোটিশ জারি করিতে হইবে; এবং

(গ) উক্ত মামলার শুনানিতে তাহাদের বক্তব্য পেশ করিবার অধিকার থাকিবে;

শর্ত থাকে যে, যদি স্বামীর কোনো চাচা এবং ভাই থাকে তবে সে অথবা তাহারা উত্তরাধিকারী না হইলেও মামলায় পক্ষভুক্ত হইবে ।

ধারা -৪ ( অন্য ধর্ম গ্রহণের পরিণতি )

বিবাহিতা মুসলিম মহিলা ইসলাম ধর্ম পরিত্যাগ অথবা উক্ত ধর্ম ব্যতীত অন্য কোনো ধর্ম গ্রহণ করিলে সেইজন্য তাহার বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে না ।শর্ত থাকে যে, ঐরূপ ধর্ম ত্যাগ অথবা অন্য ধর্ম গ্রহণ করিবার পর উক্ত নারী ২ ধারায় উল্লেখিত যেকোন কারণে বিবাহবিচ্ছেদের ডিক্রি পাওয়ার অধিকারিণী হইবে ।আরও শর্ত থাকে যে, কোনো বিধর্মী মহিলা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করিবার পর পুনরায় তাহার পূর্বে ধর্মে ফিরিয়া আসিলে অত্র ধারার বিধানসমূহ তাহার প্রতি প্রযোজ্য হইবে না ।

ধারা-৫ ( দেনমোহরের অধিকার খর্ব করিবে না )

অত্র আইনে বর্ণিত কোনো কিছু মুসলিম আইন অনুসারে বিবাহিতা কোনো মহিলার প্রাপ্য দেনমোহর অথবা উহার কোনো অংশের অধিকার তাহার বিবাহবিচ্ছেদ কতৃর্ক প্রভাবিত হইবে না ।

ধারা-৬ (১৯৩৭ সালের ১৬নং আইনের ৫ ধারা বাতিল )

১৯৩৭ সালের মুসলিম ব্যক্তিগত আইন (শরীয়ত) প্রয়োগ আইনের ৫ ধারা বাতিল ।

তথ্য সূত্র : জনগূরুত্বপূর্ণ আইন, লেখক- ছিদ্দিকুর রহমান মিয়া ।



পারিবারিক আদালত বিধিমালা, ১৯৮৫
——————————————-

১৯৮৫ সালের পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশের ২৬ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সরকার নিম্নলিখিত বিধিমালা প্রণয়ন করিলেন; যথাঃ

বিধি -১ (সংক্ষিপ্ত শিরোনাম )

এই বিধিমালা ‘পারিবারিক আদালত বিধিমালা, ১৯৮৫’ নামে অভিহিত হইবে ।

বিধি-২ ( সংজ্ঞাসমূহ )

অত্র বিধিমালা বিষয়ে অথবা প্রসঙ্গে বিপরীত কিছু না থাকিলে-

(ক) ‘ফরম’ বলিতে অত্র বিধিমালার সঙ্গে সংযুক্ত ফরমকে বুঝাইবে ।

(খ) ‘অধ্যাদেশ’ বলিতে পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশ, ১৯৮৫ (১৯৮৫ সনের ১৮নং আইন)-কে বুঝাইবে ।

বিধি -৩ (মামলার রেজিস্ট্রি বই)

কোনো আপিল জেলা জজের আদালতে দায়ের করা হইলে উহার বিবরণ ‘খ’ ফরমে রক্ষিতব্য রেজিস্ট্রি বইতে অন্তর্ভুক্ত করিতে হইবে ।

বিধি-৪ (আপীলের রেজিস্ট্র বই )

কোনো আরজি পারিবারিক আদালতে দায়ের করা হইলে উহার বিবরণ খ ফরমে রক্ষতব্য রেজিস্ট্রি বইতে অন্তর্ভুক্ত করিতে হইবে ।

বিধি -৫ ( ডিক্রির ফরম )

অত্র অধ্যাদেশের প্রত্যেক মামলার রায় প্রদানান্ত ‘গ’ ফরমে ডিক্রি লিখিতে হইবে ও ভারপ্রাপ্ত জজ উহাতে দস্তখত দিতে হইবে ও ডিক্রি পারিবারিক আদালতের সীলমোহর যুক্ত হইবে ।

বিধি-৬ (জরিমানার রসিদের ফরম)

যেক্ষেত্রে অত্র অধ্যাদেশের ১৮ অথবা ১৯ ধারা মোতাবেক কোনো জরিমানা প্রদান করা হয় বা অত্র অধ্যাদেশের আওতায় পারিবারিক আদালত কোনো অর্থ অথবা সম্পত্তি জমা নেয় অথবা আদায় করে সেক্ষেত্রে ‘ঘ’ ফরমে রসিদ প্রদান করিতে হইবে এবং উহা ক্রমিক নম্বর যুক্ত হইতে হইবে ও উহার চেকমুড়ি পারিবারিক আদালতে রক্ষিত হইবে ।

বিধি -৭ (জরিমানা ইত্যাদির রেজিস্ট্রি বই )

পারিবারিক আদালত কতৃর্ক জমা নেওয়া অথবা আদায়কৃত এবং ব্যয়কৃত সমস্ত জরিমানা, অর্থ অথবা সম্পত্তি ‘ঙ’ ফরমে কোনো রেজিস্ট্রি হইতে অন্তর্ভুক্ত করিতে হইবে ।

বিধি -৮ (পক্ষের উপর নোটিশ )

যদি পারিবারিক আদালত কোনো পক্ষের প্রাপ্য কোনো অর্থ গ্রহণ করেন তবে পারিবারিক উহা পাওয়ার পক্ষের প্রতি নোটিশ জারি করাইবেন ও উক্ত পক্ষকে উহা গ্রহণের নিমিত্ত তাহার দরখাস্তের ৭ দিনের ভিতর উহা প্রদান করিবেন ।

বিধি -৯ (পারিবারিক আদালতের রেকর্ডসমূহ এবং রেজিস্ট্রি বই )

দেওয়ানী আদালতের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য সুপ্রীম কোর্টের বিধিসমূহ অনুযায়ী যথাবিধানকৃত সময়ের নিমিত্ত সংরক্ষণ করিতে হইবে ।

বিধি -১০ (রেকর্ডসমূহ ও উহা পরিদর্শন)

(১) বিরোধের কোনো পক্ষের দরখাস্তের ভিত্তিতে পারিবারিক আদালত চল্লিশ পয়সা ফী প্রদানের পর বিরোধ বিষয়ক পারিবারিক আদালতের রেকর্ডসমূহ পরিদর্শনের অনুমতি দিবেন।

(২) মামলার কোনো পক্ষের দরখাস্তের ভিত্তিতে প্রতি একশত চল্লিশ অথবা উহার অংশবিশেষ শব্দের নিমিত্ত চল্লিশ পয়সা হারে ফী প্রদানের পর পারিবারিক আদালত উহার রায়, ডিক্রি অথবা আদেশের অথবা অপরাপর কার্যক্রমের অথবা অত্র বিধিসমূহ অনুযায়ী রক্ষিত কোনো রেজিস্ট্রি বইতে অন্তর্ভুক্তির অথবা ইহাদের কোনো অংশ বিশেষের প্রত্যায়িত প্রতিলিপি সরবরাহ করিতে হইবে ।

বিধি-১১ ( পারিবারিক আদালতের সীলমোহর )

(১) প্রতিটি পারিবারিক আদালতের অফিসে উক্ত আদালতের সীলমোহর রাখিতে হইবে এবং উহা আকারে বৃত্তাকারে হইবে ও পারিবারিক আদালত এবং স্থানের নাম থাকিবে ।

(২) অত্র অধ্যাদেশ অথবা বিধিমালার অধীনে দেওয়া সমস্ত সমন, আদেশ, ডিক্রি প্রতিলিপি এবং অপরাপর কাগজপত্রে পারিবারিক আদালতের সীলমোহর ব্যবহার করিতে হইবে ।

>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>



মুসলিম পারিবারিক আইন বিধিমালা, ১৯৬১
————————————————-

১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশের ১১ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে সরকার নিম্নলিখিত বিধিমালা প্রণয়ন করিলেন; যথা

বিধি -১ : অত্র বিধিমালা ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন বিধিমালা নামে অভিহিত হইবে ।

বিধি -২ : অত্র বিধিমালার বিষয়ে অথবা প্রসঙ্গে বিপরীত কোনো কিছু বর্তমানে থাকিলে-

(ক) ”চেয়ারম্যান” বলিতে অধ্যাদেশে যেমন সংজ্ঞা প্রদান করা হইয়াছে সেইরূপ একই অর্থ বুঝাইবে;

(খ) ”ফরম” বলিতে অত্র বিধিমালার সহিত সংযুক্ত ফরমকে বুঝাইবে;

(গ) ”স্থানীয় এলাকা” বলিতে কোনো পৌর কর্পোরেশন, পৌরসভা অথবা ইউনিয়ন পরিষদের আওতাধীন এলাকাকে বুঝাইবে;

(ঘ) ”মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন” বলিতে অধ্যাদেশে যেমন সংজ্ঞা প্রদান করা হইয়াছে তেমন একই অর্থ বুঝাইবে;

(ঙ) ”অধ্যাদেশ” বলিতে মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ, ১৯৬১ (১৯৬১ সালের ৮নং আইন)-কে বুঝাইবে;

(চ) ”পৌরসভা” বলিতে অধ্যাদেশে যেমন সংজ্ঞা প্রদান করা হইয়াছে তেমন একই অর্থ বুঝাইবে;

(ছ) ”ধারা” বলিতে অধ্যাদেশে কোন ধারাকে বুঝাইবে; এবং

(জ) ”ইউনিয়ন পরিষদ” বলিতে অধ্যাদেশে যেমন সংজ্ঞা প্রদান করা হইয়াছে সেইরূপ একই অর্থ বুঝাইবে ।

বিধি-৩ : ধারার গ, ঘ অথবা চ অনুচ্ছেদের উদ্দেশ্যে কথিত বিষয়ে যে পৌর কর্পোরেশন, পৌরসভা অথবা ইউনিয়ন পরিষদের আওতা বা এখতিয়ার থাকিবে তাহা নিম্নবর্ণিত রূপ হইবে :

(ক) ৬ ধারার ২ উপধারার দরখাস্তের বেলায় ইহা সেই পৌর কর্পোরেশন, পৌরসভা অথবা ইউনিয়ন পরিষদ হইবে যেখানে বর্তমান স্ত্রী অথবা যেক্ষেত্রে একাধিক স্ত্রী বর্তমান, সেইক্ষেত্রে যে স্ত্রীর সহিত স্বামী সর্বশেষে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হইয়াছিল সেই স্ত্রী স্বামীর দরখাস্ত দাখিলের সময় বসবাস করিতেছে ।

(খ) ৭ ধারার ১ উপধারার নোটিশের বেলায় ইহা সেই পৌর কর্পোরেশন, পৌরসভা অথবা ইউনিয়ন পরিষদ হইবে যেখানে যেই স্ত্রী সম্বন্ধে তালাক উচ্চারণ করা হইয়াছে সেই স্ত্রী তালাক উচ্চারণ করার সময় বসবাস করিতেছিল এবং

(গ) ৯ ধারার দরখাস্তের বেলায় ইহা সেই পৌর কর্পোরেশন, পৌরসভা অথবা ইউনিয়ন পরিষদ হইবে যেখানে স্ত্রী তাহার দরখাস্ত দাখিলের সময় বসবাস করিতেছে ও যদি একাধিক স্ত্রী উক্ত ধারায় দরখাস্ত দেয় তবে উহা সেই পৌর কর্পোরেশন, পৌরসভা অথবা ইউনিয়ন পরিষদ হইবে যেখানে সর্বপ্রথম দরখাস্তকারিণী স্ত্রী তাহার দরখাস্ত দাখিলের সময় বসবাস করিতেছে ।

বিধি-৪ : (১) যদি কোনো পৌর কর্পোরেশন, পৌরসভা অথবা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানরূপে কোনো অমুসলিম, নির্বাচিত হয় তবে সেইক্ষেত্রে উক্ত কর্পোরেশন, পৌরসভা অথবা ইউনিয়ন পরিষদ যত শীঘ্র সম্ভব হইতে পারে তত শীঘ্র অধ্যাদেশের কার্যকারিতার্থে ইহার কোনো মুসলিম সদস্যকে চেয়ারম্যানরূপে নির্বাচিত করিবেন ।

(২) সালিশী পরিষদের কার্যক্রমে কোনো পক্ষ চেয়ারম্যানকে অপর পক্ষের অনুকূলে স্বার্থান্বিত বলিয়া মনে করিলে অন্য কাহাকেও চেয়ারম্যান নিযুক্তির নিমিত্ত লিখিতভাবে রেকর্ডতব্য হেতুসমূহসহ যেমন নির্ধারিত হইতে পারে তেমন ব্যক্তির নিকট দরখাস্ত করিতে পারেন যিনি যথাযথ মনে করিলে উক্ত কর্পোরেশন, পৌরসভা অথবা ইউনিয়ন পরিষদের অপর কোনো সদস্যকে অধ্যাদেশের কার্যকারিতার্থে হিসাবে নিযুক্ত করিতে পারে এবং এইরূপ নির্ধারিত ব্যক্তি উক্ত দরখাস্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সালিশী পরিষদের কার্যক্রম স্থগিত রাখিবেন ।

বিধি-৫ : (১) সালিশী পরিষদে আনীত কার্যব্যবস্থা চেয়ারম্যান যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পরিচালনা করিবেন ।

(২) কোনো ব্যক্তির প্রতিনিধি মনোনয়নে ব্যর্থতার দরুন অথবা অন্য কোনোভাবে সালিশী পরিষদে কোনো পদ খালি হওয়ার কারণে এইরূপ কার্যক্রম ত্রুটিযুক্ত হইবে না ।

(৩) যদি মনোনয়ন প্রদানে ব্যর্থতার কারণ ব্যতীত অন্য কোনোভাবে পদশূন্য হয় তবে সেক্ষেত্রে চেয়ারম্যান নুতন মনোনয়ন দাবি করিবেন ।

(৪) সালিশী পরিষদের কার্যক্রমের কোনো পক্ষই উক্ত পরিষদের সদস্য হইতে পারিবে না ।

(৫) সংখ্যাগরিষ্ঠতায় সালিশী পরিষদের সকল সিদ্ধান্ত গৃহীত হইবে এবং যদি কোনো সিদ্ধান্তই সালিশী পরিষদের সিদ্ধান্ত হিসাবে গণ্য হইবে ।

বিধি-৬ : (১) ৬ ধারার ২ উপধারায় অথবা ৯ ধারার ১ উপধারায় কোনো দরখাস্ত বা ৭ ধারার ১ উপধারায় কোনো নোটিশ প্রাপ্তির সাত দিনের ভিতর চেয়ারম্যান লিখিত আদেশ মাধ্যমে পক্ষগণের প্রত্যেককে তাহার প্রতিনিধি মনোনয়ন করিতে নির্দেশ দিবেন ও এইরূপ প্রত্যেক পক্ষ উক্ত আদেশ প্রাপ্তির সাত দিনের ভিতর লিখিতভাবে তাহার একজন প্রতিনিধি মনোনয়ন করিবে ও চেয়ারম্যানের নিকট মনোনয়ন দাখিল করিবে বা রেজিস্ট্রি ডাকযোগে চেয়ারম্যানকে ইহা পাঠাইবে ।

(২) যদি কোনো পক্ষের মনোনীত প্রতিনিধি মৃত্যুমুখে পতিত হয় বা অসুস্থতা বা অন্যবিধ কারণে সালিশী পরিষদের মিটিং-এ অনুপস্থিত থাকেন বা সংশ্লিষ্ট পক্ষের অনাস্থাভাজন হন তবে এইরূপক্ষেত্রে পক্ষটি চেয়ারম্যানের লিখিত পূর্বানুমতিক্রমে মনোনয়নটি প্রত্যাহার করিতে পারেও চেয়ারম্যান যে সময় মঞ্জুর করিতে পারেন সেই সময়ের ভিতর নূতন মনোনয়ন প্রদান করিতে হইবে ।

(৩) যদি ২ উপধারা অনুযায়ী নূতন মনোনয়ন প্রদান করা হয় তবে চেয়ারম্যান লিখিতভাবে রেকর্ডকৃতব্য কারণে ভিন্নরূপ নির্দেশ প্রদান না করিলে সালিশী পরিষদ উহার কার্যক্রম নূতনভাবে শুরু করার প্রয়োজন পড়িবে না ।

বিধি ৭-১৩ ( বাতিল ।)

বিধি -১৪ : বহুবিবাহঃ একটি বর্তমান বিবাহ বলবত থাকাকালীন অন্য একটি প্রস্তাবিত বিবাহ ন্যায়সঙ্গত এবং প্রয়োজনীয় কিনা তাহা বিবেচনার সময় সালিশী পরিষদ ইহার সাধারণ ক্ষমতার ক্ষতি না করিয়া অন্যান্যের সহিত নিম্নলিখিত পরিস্থিতিগুলির দিকে নজর রাখিবেন-

কোনো বর্তমান স্ত্রীর বেলায় বন্ধাত্ব দৈহিক দৌর্বল্য, দাম্পত্য সম্পর্কের ক্ষেত্রে দৈহিক অনুপযুক্ততা, দাম্পত্য জীবন পুনরুদ্ধারের নিমিত্ত একটি ডিক্রি ইচ্ছাকৃতভাবে এড়াইয়া চলা অথবা বর্তমান স্ত্রীর অপ্রকৃতিস্থতা ।

বিধি -১৫ : একটি বর্তমান বিবাহ বলবত্‍ থাকাকালীন অন্য একটি বিবাহ চুক্তি করার অনুমতি প্রদানের নিমিত্ত ৬ ধারার ১ উপধারায় কোনো দরখাস্ত লিখিতভাবে করিতে হইবে, ইহাতে বর্তমান স্ত্রী অথবা স্ত্রীগণের সম্মতি নেওয়া হইয়াছে কিনা উহা বর্ণনা করিতে হইবে, যে কারণসমূহের ভিত্তিতে নূতন বিবাহটি ন্যায়সঙ্গত এবং প্রয়োজনীয় বলা হইয়াছে সেইগুলি সংক্ষিপ্তভাবে দরখাস্তে বর্ণনা করিতে হইবে । দরখাস্তকারীর দস্তখত উহাতে থাকিতে হইবে এবং পঁচিশ টাকার ফী তত্সঙ্গে যুক্ত করিতে হইবে ।

বিধি -১৬ :রিভিশনঃ (১) ৬ ধারার ৪ উপধারায় প্রদত্ত সালিশী পরিষদের সিদ্ধান্ত বা ৯ ধারার ২ উপধারায় প্রদত্ত কোনো সার্টিফিকেট রিভিশনের নিমিত্ত কোনো দরখাস্ত সিদ্ধান্তটি অথবা সার্টিফিকেট, সে যাহাই হউক প্রদানের ত্রিশ দিনের ভিতর দাখিল করিতে হইবে ও তত্সহ দুই টাকার ফী সংযুক্ত করিতে হইবে ।

(২) দরখাস্তখানা লিখিত হইতে হইবে এবং যে সকল কারণসমূহের ভিত্তিতে সিদ্ধান্তটি অথবা সার্টিফিকেটটির রিভিশন চাওয়া হয় উহা বর্ণনা করিতে হইবে ও ইহাতে দরখাস্তকারীর দস্তখত থাকিতে হইবে ।

বিধি -১৭ : গোপন কার্যক্রমঃ চেয়ারম্যান অন্যরূপ নির্দেশ প্রদান না করিলে সালিশী পরিষদের সকল কার্যক্রম গোপনে অনুষ্ঠিত হইবে ।

বিধি -(১৮ – ২০ ) বাতিল ।

>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>>

মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ, ১৯৬১ (১৯৬১ সনের ৮নং অধ্যাদেশ)

বিবাহ এবং পারিবারিক আইন কমিশনের কতিপয় সুপারিশ কার্যকর করার জন্য প্রণীত অধ্যাদেশ৷

যেহেতু, বিবাহ এবং পারিবারিক আইন কমিশনের সুপারিশ কার্যকর করা দরকার ও সমীচীন৷ সেহেতু, ১৯৫৮ সালের ৭ই অক্টোবরের ঘোষণা দ্বারা রাষ্ট্রপতি প্রদত্ত ক্ষমতা বলে, নিম্নলিখিত অধ্যাদেশটি প্রণয়ন ও জারী করলেন:

১৷ সংক্ষিপ্ত শিরোনাম, সীমা, প্রয়োগ ও বলবতের সময় (Short title, extent, application and commencement):

এই অধ্যাদেশকে ১৯৬১ সনের ‘মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ’ নামে অভিহিত করা হবে।

ইহা সমগ্র বাংলাদেশে এবং যে যেখানেই থাকুক না কেন, বাংলাদেশের সকল মুসলিম নাগরিকের উপর প্রযোজ্য হবে।

সরকার, সরকারী গেজেটে বিজ্ঞপ্তি মারফত যে তারিখ নির্ধারণ করবেন, সেই তারিখ হতে উহা কার্যকর হবে।

(উল্লেখ্য যে, ১৯৬১ সনের ১৫ই জুলাই তারিখ হতে এই অধ্যাদেশটি বলবত হয়েছে)

২৷ সংজ্ঞাসমূহ (Definitions): এই অধ্যাদেশে, বিষয়বস্তু বা প্রসঙ্গ হতে বিপরীত কিছু প্রতীয়মান না হলে-

(ক) ‘সালিসী পরিষদ’ (Arbitration Council) বলতে চেয়ারম্যান এবং এই অধ্যাদেশে উল্লিখিত কোন বিষয়ের সংশ্লিষ্ট পক্ষগণের প্রত্যেকের একজন প্রতিনিধি নিয়ে গঠিত পরিষদকে বুঝাবে। তবে শর্ত থাকে যে, কোন পক্ষ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রতিনিধি মনোনয়ন করতে ব্যর্থ হলে অনুরূপ প্রতিনিধি ছাড়া গঠিত পরিষদই সালিসী পরিষদ হবে।

(খ) চেয়ারম্যান (Chairman) বলতে বুঝাবে-

ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান;
পৌরসভার চেয়ারম্যান;
মিউনিসিপ্যাল করপোরেশনের মেয়র বা প্রশাসক;

সেনানিবাস এলাকায় অত্র অধ্যাদেশ অনুযায়ী চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনের জন্য সরকার কর্তৃক মনোনীত ব্যক্তি;

কোন ক্ষেত্রে ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা বা মিউনিসিপ্যাল করপোরেশন বাতিল করা হলে সেক্ষেত্রে সরকার কর্তৃক অত্র অধ্যাদেশের অধীনে উক্ত ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা বা মিউনিসিপ্যাল করপোরেশনের চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালনের জন্য মনোনীত ব্যক্তি।

তবে শর্ত থাকে যে,যেখানে ইউনিয়ন পরিষদ অথবা পৌরসভার চেয়ারম্যান একজন অমুসলমান অথবা তিনি নিজেই সালিসী পরিষদের নিকট কোন দরখাস্ত করতে চাহেন এমন হলে,অথবা অসুস্থতা বা অন্য কোন কারণে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালনে অসমর্থ হলে, উক্ত ইউনিয়ন পরিষদ বা পৌরসভা উহার একজন মুসলমান সদস্যকে এই অধ্যাদেশের উদ্দেশ্যাবলী পূরণকল্পে একজনকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত করবেন।

(গ) ‘মিউনিসিপ্যাল করপোরেশন’ (Municipl Corporation) বলতে ১৯৮২ সালের চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যাল করপোরেশন অধ্যাদেশ (১৯৮২ সনের ৩৫ নং অধ্যাদেশ) অথবা ১৯৮৩ সালের ঢাকা মিউনিসিপ্যাল করপোরেশন অধ্যাদেশ (১৯৮৩ সনের ৪০নং অধ্যাদেশ), অথবা ১৯৮৪ সালের খুলনা মিউনিসিপ্যাল করপোরেশন অধ্যাদেশ (১৯৮৪ সনের ৭২ নং অধ্যাদেশ) অনুযায়ী গঠিত মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন বুঝাবে এবং নির্ধারিত এখতিয়ার সম্পন্ন হবে।

(ঘ) ‘পৌরসভা’ (Paurashava) বলতে ১৯৭৭ সালের পৌরসভা অধ্যাদেশ (১৯৭৭ সনের ২৬ নং অধ্যাদেশ) অনুযায়ী গঠিত পৌরসভা বুঝাইবে এবং নির্ধারিত এখতিয়ার বুঝায়।

(ঙ) ‘নির্ধারিত’ (Prescribed) বলতে ১১ ধারার অধীনে প্রণীত বিধিমালা দ্বারা নির্ধারিত বুঝায়।

(চ) ‘ইউনিয়ন পরিষদ’ (Union Parishad) বলতে ১৯৮৩ সালের স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) অধ্যাদেশের (১৯৮৩ সনের ৫১ নং অধ্যাদেশ) এর অধীনে গঠিত এবং উক্ত বিষয়ে নির্ধারিত এখতিয়ার সম্পন্ন ইউনিয়ন পরিষদকে বুঝায়।

৩৷ অত্র অধ্যাদেশ অন্যান্য আইনের উপর প্রাধান্য লাভ করবে (Ordinance to override other laws):

অপর কোন আইন, বিধি অথবা প্রচলিত রীতিতে যাই থাকুক না কেন, এই অধ্যাদেশের বিধানাবলী কার্যকর হবে।সন্দেহ দূরীকরণের উদ্দেশ্যে, এতদ্বারা ইহা ঘোষণা করা যাচ্ছে যে, ১৯৪০ সালের সালিসী আইন, ১৯০৮ সালের দেওয়ানী কার্যবিধি এবং আদালতের কার্যধারা নিয়ন্ত্রণকারী অপর কোন আইনের কোন ব্যবস্থা সালিশী পরিষদে প্রযোজ্য হবে না।

৪৷ উত্তরাধিকার (Succession): যাহার সম্পত্তি উত্তরাধিকার সূত্রে বন্টিত হবে, তার পূর্বে তার কোন পুত্র বা কন্যা মারা গেলে এবং উক্ত ব্যক্তির মৃত্যুর পর তার সম্পত্তি বন্টনের সময় উক্ত পুত্র বা কন্যার কোন সন্তানাদি থাকলে, তারা প্রতিনিধিত্বের হারে সম্পত্তির ঐ অংশ পাবে, যা তাদের পিতা অথবা মাতা জীবিত থাকলে পেতো।

৫৷ [বাতিল এই ধারাটি ১৯৭৪ সালের মুসলিম বিবাহ ও তালাক রেজিষ্ট্রেশন আইন দ্বারা বাদ দেওয়া হয়েছে]

৬৷ বহু বিবাহ (Polygamy):

(১) সালিশী পরিষদের লিখিত পূর্বানুমতি ছাড়া কোন ব্যক্তি একটি বিবাহ বলবত থাকলে আরেকটি বিবাহ করতে পারবে না এবং পূর্ব অনুমতি গ্রহণ না করে এই জাতীয় কোন বিবাহ হলে তা মুসলিম বিবাহ ও তালাক (রেজিষ্ট্রেশন) আইন, ১৯৭৪ (১৯৭৪ সনের ৫২নং আইন) অনুসারে রেজিষ্ট্রি হবে না।

(২) (১) উপ-ধারায় বর্ণিত অনুমতির জন্য নির্দিষ্ট ফিসসহ নির্ধারিত পদ্ধতিতে চেয়ারম্যানের নিকট আবেদন করতে হবে এবং আবেদনপত্রে প্রস্তাবিত বিবাহের কারণ এবং বর্তমান স্ত্রী বা স্ত্রীদের সম্মতি নেওয়া হয়েছে কিনা, তা উল্লেখ করতে হবে।

(৩) উপরোক্ত (২) উপ-ধারা মোতাবেক আবেদনপত্র পাওয়ার পর চেয়ারম্যান আবেদনকারী এবং বর্তমান স্ত্রী বা স্ত্রীদের প্রত্যেককে একজন করে প্রতিনিধি মনোনয়ন করতে বলবেন এবং এইরূপে গঠিত সালিশী পরিষদ যদি মনে করেন যে, প্রস্তাবিত প্রয়োজন এবং ন্যায়সঙ্গত, তা হলে কোন শর্ত থাকলে উহা সাপেক্ষে, প্রার্থিত বিবাহের অনুমতি মঞ্জুর করতে পারেন।

(৪) আবেদনটি সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণের সময় সালিশী পরিষদ সিদ্ধান্তের কারণসমূহ লিপিবদ্ধ করবেন এবং যে কোন পক্ষ, নির্দিষ্ট ফিস জমা দিয়ে নির্ধারিত পদ্ধতিতে সংশ্লিষ্ট মুন্সেফের নিকট রিভিশনের (Revision) জন্য আবেদন দাখিল করতে পারবেন এবং সালিসী পরিষদের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে এবং কোন আদালতে উহার বৈধতা সম্পর্কে কোন প্রশ্ন উত্থাপন করা যাবে না।

(৫) সালিশী পরিষদের অনুমতি ছাড়া কোন ব্যক্তি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলে তাকে-

(ক) অবিলম্বে তার বর্তমান স্ত্রী বা স্ত্রীদের “তাত্ক্ষণিক” অথবা “বিলম্বিত” দেনমোহরের (Prompt or deferred dower) যাবতীয় টাকা পরিশোধ করতে হবে এবং উক্ত টাকা পরিশোধ করা না হলে উহা বকেয়া ভূমি রাজস্বের ন্যায় আদায়যোগ্য হবে।

(খ) অভিযোগক্রমে দোষী সাব্যস্ত হলে সে এক বত্সর পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদণ্ড অথবা দশ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হবে।

৭৷ তালাক (Talaq):

(১) কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীকে তালাক দিতে চাইলে, তিনি যে কোন পদ্ধতির তালাক ঘোষণার পর যথাশীঘ্র সম্ভব চেয়ারম্যানকে লিখিতভাবে নোটিশ দিবেন এবং স্ত্রীকে উক্ত নোটিশের একটি অনুলিপি (নকল) প্রদান করবেন।

(২) কোন ব্যক্তি (১) উপ-ধারার বিধান লংঘন করলে তিনি এক বত্সর বিনাশ্রম কারাদণ্ড অথবা ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয় প্রকার দণ্ডনীয় হবেন।

(৩) নিম্নের (৫) উপধারার বিধান অনুসারে প্রকাশ্যে বা অন্য কোনভাবে তালাক, আগে প্রত্যাহার করা না হয়ে থাকলে, (১) উপধারা মোতাবেক চেয়ারম্যানের কাছে নোটিশ প্রদানের তারিখ হতে নব্বই দিন অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত কার্যকরী হবে না।

(৪) উপরোক্ত (১) উপধারা অনুযায়ী নোটিশ প্রাপ্তির ৩০ (ত্রিশ) দিনের মধ্যে চেয়ারম্যান সংশ্লিষ্ট পক্ষদ্বয়ের মধ্যে পুনর্মিলন ঘটানোর উদ্দেশ্যে একটি সালিশী পরিষদ গঠন করবেন এবং উক্ত সালিসী পরিষদ এই জাতীয় পুনর্মিলনের জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

(৫) তালাক ঘোষণার সময় স্ত্রী গর্ভবতী থাকলে, (৩) উপধারায় বর্নিত সময়কালে অথবা গর্ভাবস্থা, যেটি পরে শেষ হয়, অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত তালাক বলবত হবে না।

(৬) অত্র ধারা অনুযায়ী তালাক দ্বারা যে স্ত্রীর বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটেছে সেই স্ত্রী, এই জাতীয় তালাক তিনবার এইভাবে কার্যকরী না হলে, কোন তৃতীয় ব্যক্তিকে বিবাহ না করে পুনরায় একই স্বামীকে বিবাহ করতে পারবে।

৮৷ তালাক ছাড়া অন্যভাবে বিবাহ-বিচ্ছেদ (Dissolution of marriage otherwise than by talaq):

যেক্ষেত্রে তালাক দেয়ার অধিকার যথাযথভাবে স্ত্রীকে অর্পণ করা হয়েছে এবং স্ত্রী সেই ক্ষমতা প্রয়োগ করতে ইচ্ছুক বা স্ত্রী তালাক ব্যতীত অন্য কোন উপায়ে বিবাহ-বিচ্ছেদ ঘটাতে চাহে, সেক্ষেত্রে ৭ ধারার বিধানাবলী প্রয়োজনীয় পরিবর্তনসহ যথাসম্ভব প্রযোজ্য হবে।

৯৷ ভরণ-পোষণ (Maintenance):

(১) কোন স্বামী তার স্ত্রীকে পর্যাপ্ত ভরণ-পোষণ বা খোরপোষ দানে ব্যর্থ হলে বা একাধিক স্ত্রীর ক্ষেত্রে তাহাদিগকে সমভাবে খোরপোষ না দিলে, স্ত্রী বা স্ত্রীগণ কেহ, অন্য কোন আইনানুগ প্রতিকার প্রার্থনা ছাড়াও চেয়ারম্যানের নিকট দরখাস্ত করতে পারেন। এইক্ষেত্রে চেয়ারম্যান বিষয়টির নিষ্পত্তির জন্য সালিশী পরিষদ গঠন করবেন এবং ঐ পরিষদ স্বামী কর্তৃক স্ত্রীকে ভরণ-পোষণ বাবদ প্রদানের জন্য টাকার পরিমাণ নির্দিষ্ট করে সার্টিফিকেট জারী (ইস্যু) করতে পারবেন।

(২) কোন স্বামী বা স্ত্রী নির্ধারিত পদ্ধতিতে নির্ধারিত মেয়াদের মধ্যে এবং নির্দিষ্ট ফি প্রদান পূর্বক ঐ ইস্যুকৃত সার্টিফিকেট খানা পুর্নবিবেচনা জন্য সংশ্লিষ্ট মুন্সেফের নিকট আবেদন করতে পারবেন এবং তার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে এবং কোন আদালতে এই সম্বন্ধে কোন প্রশ্ন উত্থাপন করা যাবে না।

(৩) উপরের (১) অথবা (২) উপ-ধারা মোতাবেক দেয় কোন টাকা যথাসময়ে বা সময়মত পরিশোধ করা না হলে বকেয়া ভূমি রাজস্ব হিসাবে আদায় করা চলবে।

১০৷ দেনমোহর (Dower):

নিকাহনামা বা বিবাহের চুক্তিতে দেনমোহর পরিশোধের পদ্ধতি নির্দিষ্টভাবে উল্লিখিত না থাকলে, দেনমোহরের সমগ্র অর্থ চাহিবামাত্র পরিশোধযোগ্য (দেয়) বলে ধরে নিতে হবে।