- GOPALCPAUL

Latest

You Can See Some Information From Here

শুভ নববর্ষ ১৪৩১, সাইটে ব্রাউজ করার জন্য আপনাকে অভিনন্দন

20 March 2020


রাজস্ব আইন

প্রশ্ন : বাংলাদেশের আয়কর আইনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস।

বাংলাদেশের আয়কর আইনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস (A brief history of income-tax law in Bangladesh): 

আয়কর সরকারি রাজস্বের একটি অন্যতম প্রধান উত্স হিসাবে বিবেচিত। আইনের সাহায্যে এ উত্স থেকে আয় আদায়ের

জন্য বঙ্গ ভারতে ১৮৬০ সালে সর্ব প্রথম আয়কর আইন প্রবর্তিত হয়েছিল। তত্কালীন বৃটিশ সরকার ইংল্যান্ডে প্রচলিত আয়কর আইন অনুসরণ করে সর্ব প্রথম এ আইন চালু করা হয় ও যার নামকরণ করা হয় 'আয়কর আইন' ১৮৬০।

উপর্যুক্ত আয়কর আইন ১৮৬৫ সাল পর্যন্ত এক নিয়মে ৫ বছর কার্যকর থাকার পর রাজনৈতিক এবং আর্থসামাজিক বিবর্তনের প্রেক্ষাপটে বিলুপ্ত করা হয়। পরবর্তীতে বাজেটের মধ্যে সংকট দেখা দেয়ায় ১৮৬৭ সালে কিছুটা পরিবর্তনের সাহায্যে আয়কর আইন 'লাইসেন্স ট্যাক্স এ্যাক্ট-১৮৬৭' নামকরণে পুনরায় প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ১৮৬৮ সালে উক্ত আয়কর আইনের নাম পরিবর্তনের মাধ্যমে 'সার্টিফিকেট এ্যাক্ট-১৮৬৮' নামে নামকরণ করা হয়। এ সময় করের হারকে হরাস, করমুক্ত নির্দিষ্ট সীমা ধার্য ও কৃষি আয়কে কর বহির্ভুত হিসাবে বিবেচিত করা হয়। 

সার্টিফিকেট এ্যক্টকে পরিবর্তনের মাধ্যমে ১৮৬৯ সালের মাঝামাঝি সময়ে 'আয়কর আইন' নামে একটি আইন পাশ করা হয়। এতে কৃষি আয়কে আবার আয়করের মধ্যে অন্তর্ভুক্তি করা হয়। আয়কর আইনকে ১৮৭৩ সালের ১লা এপ্রিল আবার স্থগিত ঘোষণা করা হয়। ১৮৭৬ থেকে ১৮৭৮ সাল পর্যন্ত সময়ে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের কারণে ১৮৭৭ সালে উক্ত আয়কর আইনকে 'লাইসেন্স এ্যাক্ট-১৮৭৭' নামকরণে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করা হয়। নানাবিধ পরিবর্তনের মাধ্যমে উক্ত আইন ১৮৮৬ সাল পর্যন্ত কার্যকর ছিল। 

নানাবিধ প্রয়োজনে তহবিল প্রবৃব্ধির জন্য তত্কালীন বৃটিশ সরকার'আয়কর আইন ১৮৮৬' আবার প্রবর্তন করেন। এ আইনে কৃষি আয়ের সংজ্ঞাসহ এর নানাবিধ মওকুফগুলি ব্যাখ্যা করা ও জীবন বীমা প্রিমিয়ামের উপর সর্বোচ্চ অংশ পর্যন্ত কর মাফ করা হয়। 

একই নিয়মে উক্ত আইন ১৯০৩ সাল পর্যন্ত কার্যকর ছিল। ১৯০৩ সালে এর অল্প কিছু নিয়ম পরিবর্তন করা হয়। ১৯১৬ সালে দ্বিতীয় বারের মত উক্ত আইনের আরও কিছু পরিবর্তন সাধন করা হয়। ১৯১৮ সাল পর্যন্ত যা কার্যকর ছিল। ১৯১৮ সালে সাবেক আয়কর আইনকে গুরুত্বপূর্ণভাবে সাজানো হয় ও 'আয়কর আইন ১৯১৮' হিসাবে নতুন আয়কর নামকরণ করা হয়। সে আইনেই সর্বপ্রথম আয়করের হার নিরূপণের লক্ষ্যে সমস্ত আয়ের উেসর যোগফল বের করার প্রথা প্রবর্তিত হয় ও করযোগ্য আয়ের উপর কর ধার্য প্রথা প্রচলন করা হয়। এখানে কর ধার্যকরণের লক্ষ্যে আয়কে ৬টি খাতে বিভাজ্য করা হয়, যথা 

১) বেতন; 

২) সিকিউিরিটির উপর সুদ, 
৩) গৃহ-সম্পত্তি থেকে আয়; 
৪) ব্যবসা থেকে আয়; 

৫) পেশাগত উপার্জন থেকে আয়; এবং 
৬) নানাবিধ উত্স থেকে আয়। এ আইনও শেষ পর্যায়ে অসম্পূর্ণ এবং অপর্যাপ্ত হিসাবে অভিহিত করা হয় ও আয়কর প্রশাখাকে কেন্দ্রীভুতকরণের উদ্দেশ্যে এর বাস্তব উন্নয়ন দরকার হয়ে পড়ে। 

তারপর প্রাদেশিক কমিটিসমূহ আয়কর আইনের সর্বাঙ্গীন সংশোধন, সংস্কার, পরিবর্ধন এবং মান উন্নয়নের জন্য ব্যাপক প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার পরিকল্পনা গ্রহণ করে ও সে অনুসারে একটি সর্ব ভারতীয় কমিটি তৈরি করা হয়। উক্ত কমিটির তথ্যের উপর ভিত্তি করে বিস্তারিত রিপোর্টের সুপারিশ অনুযায়ী ১৯২২ সালে আইকর আইন ১৯২২ হিসাবে প্রবর্তন করা হয়। 

১৯২২ সালে আয়কর আইন ভারত বিভাজ্যের পর ভারত এবং পাকিস্তান উভয়ই গ্রহণ করে। ১৯২২ সালের আয়কর আইন বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত কার্যকর ছিল। ১৯২২ সলের আইকর আইন ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতা প্রাপ্তির পর গ্রহণ করা হয়। তাপর প্রয়োজন অনুসারে এ আইনের কতিপয় সংশোধন এবং পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করা হয়। 

কালের আবর্তন এবং গত কয়েক যুগের রাজনৈতিক এবং আর্থ-সামাজিক বিবর্তনের জন্য ১৯২২ সালের আয়কর আইনের কতিপয় সংশোধন এবং পরিবর্তন করা হয়। তথাপি এতে আয়কর আইনে বিভিন্ন প্রকার জটিলতার প্রবৃদ্ধি ঘটে ও করদাতারা বিভিন্ন প্রকার অসুবিধার মোকাবেলা করতে থাকে এবং কর ফাঁকি দিতে থাকে। তাই নানাবিধ ত্রুটি বিচ্যুতি দূর করে আয়কর আইনকে সম্পূর্ণভাবে নতুন করে তৈরির লক্ষ্যে ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশ সরকার একটি 'কর অনুসন্ধান কমিশন' (Taxation enquiry Commission) সৃষ্টি করেন। এ কমিশন নানা স্তরের জনসাধারণের কাছ থেকে আয়কর আইন সংশ্লিষ্ট অভিমত গ্রহণ করে। ১৯২২ সালের আয়কর আইন বাতিল করে কর অনুসন্ধান কমিটির সুপারিশের প্রেক্ষাপটে ১৯৮৪ সালে একটি নতুন আইন প্রবর্তন করা হয়। এ আইনই আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪ নামে পরিচিত। ১৯৮৪ সালের ১লা জুলাই এ নতুন আইন কার্যকরী হয়ে থাকে। আয়কর আইনের আবশ্যকীয় সংশোধন প্রতি বছর অর্থ আইনের সাহায্যে সম্পাদন করা হয়ে থাকে।